ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥কসবায় দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের তালিকা তৈরি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেয়া অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন ৩ চেয়ারম্যান ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র। এ বিষয়ে গতকাল কসবা মহিলা কলেজে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য দেন উপজেলার বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন ভূইয়া,কসবা পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান মো.ছায়েদুর রহমান মানিক,খাড়েরা ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মো.আবু সায়েম, ও কসবা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো.আবু জাহের। এ সময় যাদের নাম ব্যবহার করে অভিযোগ দেয়া হয়েছে ওই লোকজনও উপস্থিত থেকে ওই অভিযোগ তারা করেননি বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের তালিকা তৈরিতে প্রথমত কিছু ভ’লক্রটি থাকলেও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তীতে স্ব স্ব ইউনিয়ন তালিকা তৈরি কমিটির সমন্বয়ে সংশোধন করে চুড়ান্ত তালিকা তৈরি করে জমা দেয়া হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলমের নিকট। ওই তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই বাছাই করেন।
এরপরও একটি মহল বিভিন্ন জনের নাম ব্যবহার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ পেশ করে। যাদের নাম ব্যবহার করে এসব অভিযোগ দেয়া হয়েছে ওই সকল নিরীহ মানুষগুলো অধিকাংশই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে জানান তারা অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না। নামে বেনামে এসকল অভিযোগ দেয়া হচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরের মান সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য। তাদের দাবী যারা এসকল অসহায় মানুষদের নাম ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক।
এ বিষয়ে বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন ভ’ইয়া বলেন; আমার ইউনিয়নে ৬৬৬ জনের তালিকা তৈরি করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ সমস্ত তালিকা যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে ৩৫ জনের নাম বাদ দিয়ে তালিকা সংশোধন করেন। এরপরও একটি স্বার্থান্বেসী মহল মিথ্যা অভিযোগ দেয় এবং কিছু কিছু সাংবাদিকের মাধ্যমে পত্র পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে সামাজিভাবে হেয় করছেন।
কসবা পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান মো.ছায়েদুর রহমান মানিক বলেন; আমার ইউনিয়ন খুব ছোট। আমি ২৩০ জনের তালিকা তৈরির অনুমতি পাই। আমার জানামতে দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারের বাইরে কারো নাম লিপিবদ্ধ হয় নাই। আমার নামেও মিথ্যা নাম ব্যবহার করে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দেয়া হয়েছে। যাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তারা এই অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না। যে চারজনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের জানান, আমরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেইনি। বরং যারা মিথ্যা অভিযোগ তৈরি আমাদের নাম ব্যবহার করেছেন তাদেরকে তদন্তপূর্বক আইনের আওতায় আনতে আমরা কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দিয়েছি।আমাদের বিশ্বাস কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
খাড়েরা ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মো.আবু সায়েম সংবাদ সম্মেলনে বলেন; উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের ২ হাজার ৫শ টাকার তালিকা তৈরি করে আমারই প্রথম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেই। এমনকি ওই তালিকা আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করি। এতে আমাদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহাম্মদ খান এবং আমরা মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছি।
কসবা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো.আবু জাহের বলেন; আমার তালিকায় স্বজনের নাম উঠানো হয়েছে বলে যে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে এবং কালের কণ্ঠ অনলাইনে দেয়া হয়েছে তা আদৌ সত্য নয়। তিনি বলেন, কসবা পৌরসভায় ৯শত জনের তালিকা করা হয়েছে। পৌরমেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল ৫শ ৩৪টি নাম নিজে তালিকা করেছেন। আমি পেয়েছি মাত্র ৩৩টি ফরম। আমার নির্বাচনী এলাকা কসবা শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড। আমার পরিবার বা আত্মিয় স্বজনের মাঝে আমি কোনো ঈদ উপহার নাম তালিকাভ’ক্ত করিনি। অথচ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে আমি নাকি ৫ জন আত্মীয়কে ঈদ উপহার দিয়েছি। আমি চ্যালেঞ্জ করতে চাই এরকম যদি কেউ প্রমান করতে পারে আমি আমার স্বপদ থেকে পদত্যাগ করবো। প্রকৃত কথা হলো মেয়রের নিজস্ব কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ হয়েছে জনগনের পক্ষ থেকে। তাই মেয়রের ইশারায় এসকল ভূয়া অভিযোগগুলো তৈরি করা হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। এসকল অভিযোগগুলো ভালভাবে যাচাই বাছাই না করে কোনো কোনো সাংবাদিক অভিযোগের ভিত্তিতে সংবাদ করে জনপ্রতিনিধিদের হেয় প্রতিপন্ন করছেন। যা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। আমরা মাননীয় আইনমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ কামনা করছি।