কিশোরীকে বাবা ভাই মামা মিলে হত্যা করেছে

প্রশান্তি ডেক্স ॥ কিশোরী লাইজু আক্তার (১৬) প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিল এক ছেলের সঙ্গে। একদিন রাতে দুজনকে একসঙ্গে দেখে ফেলেন তার মামা। এ ঘটনা মামার কাছ থেকে জানার পর ভীষণ ক্ষিপ্ত হন বাবা ও ভাই। এই তিনজন মিলে সলাপরামর্শ করে লাইজুকে রাতের বেলায় ঘর থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে শ্বা.স রোধ করে হ.ত্যার পর লাশ ফেলে দেয় ডোবার পানিতে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল গ্রামের লম্বাহাটির লাইজুকে হ.ত্যার দায় স্বীকার করে বাবা সানু মিয়া, মামা মাজু মিয়া ও ভাই আদম আলী এসব তথ্য জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মামা ও ভাই; আর থানা পুলিশের কাছে ঘটনার দায় স্বীকার করেন লাইজুর বাবা। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

থানা পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২৭ জুন লম্বাহাটি এলাকার একটি ডোবা

থেকে লাইজুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শুরুতে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে না চাওয়ায় পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মোজাম্মেল হোসেন রেজা ও নাসিরনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে লাইজুর মামাকে সন্দেহবশত আটকের পর হ.ত্যারহস্য উন্মোচিত হয়। গত সোমবার বিকেলে মামা মাজু মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আহমেদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন লাইজুর বাবাকে গ্রেপ্তারের পর তিনি পুলিশের কাছে হ.ত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে গত মঙ্গলবার সকালে এলাকার একটি বাড়ি থেকে লাইজুর ভাই আদম আলীকে গ্রেপ্তারের পর তিনিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আদালতে ও পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার তিনজনই জানিয়েছেন, লাইজু তার মামা মাজু মিয়ার বাড়িতে থাকত। গত ২২ জুন রাতে তাকে বাড়ির পাশে একটি ক্ষেতের মধ্যে এক যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখতে পান মামা। পরে বিষয়টি মামা লাইজুর বাবা, মা ও ভাইকে জানান। এতে ক্ষিপ্ত হন বাবা। পরদিন ২৩ জুন সকালে বাবা ও মামা মিলে লাইজুকে হ.ত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিন রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে লাইজুকে ঘর থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে যান তার বাবা। এরপর বাবা ও মামা মিলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বা.স রোধ করে লাইজুকে হ.ত্যা করেন। একপর্যায়ে ভাই আদম আলী এসে হ.ত্যাকাণ্ডে যোগ দেন। পরে তিনজন মিলে লাইজুর লাশ স্থানীয় একটি ডোবার পানিতে ফেলে দেন।

নাসিরনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, লাইজুর প্রতি দীর্ঘদিন ধরেই বিরক্ত ছিল পরিবারের লোকজন। লাইজু অনেকটা অবাধ্য ছিল বলে দাবি পরিবারের লোকজনের। লাইজুর লাশ উদ্ধারের পরদিন গত ২৮ জুন লাইজুর মা সাফিয়া আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। নানা কারণে সন্দেহবশত গত রবিবার লাইজুর মামা মাজু মিয়াকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মাজু হ.ত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন। পরে লাইজুর বাবা ও ভাইকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের মাধ্যমে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে পাকিস্তানে তথাকথিত ‘অনার কিলিং’ নামে হ.ত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। একই কায়দায় নাসিরনগরে পরিবারের লোকজনের হাতে পরিকল্পিতভাবে লাইজু খুনের ঘটনা ঘটেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.