এখন কেউ করোনা নিয়ে ভাবছে না, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে’

প্রশান্তি ডেক্স ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় করোনা সংক্রমণ রোধে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। শহরসহ হাট-বাজারগুলোতে মানুষের সর্বত্র ভিড় লেগেই আছে। অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই, সামাজিক দূরুত্ব তো দূরের কথা। এতে করে করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি আরও বাড়ছে।গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, সকালেই বাজারে মানুষের ভিড়। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন নিত্য পণ্য কেনাবেচার জন্য কাঁচা বাজারে জড় হচ্ছেন। কিন্তু ক্রেতা-বিক্রেতার কারো মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। একজন আরেকজনের শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন।

দেবগ্রাম মুন্সী বাজার থেকে আসা শাক বিক্রতা কৃষক উসমান গণি সরদার। তার মুখে মাস্ক নেই। তিনি ঝুড়ি ভর্তি করে শাক বিক্রি করছেন। চারপাশে ঘিরে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি খালিমুখে কেউ দরদাম করছেন, আবার কেউ কিনে নিচ্ছেন।

মুখে মাস্ক না থাকার কারণ জানতে চাইলে উসমান গণি বলেন, মাস্ক পকেটে আছে। আমরা কৃষক মানুষ, আমাদের সহজে করোনা হবে না। যারা করোনা নিয়ে বেশি ভয় পায়, তাদের হওয়ার শঙ্কা থাকে।

স্থানীয় ফেলু মোল্লার পাড়ার ফজল শেখ হাতে ব্যাগ নিয়ে মাস্ক না পড়ে বাজার করতে এসেছেন। মাস্ক ছাড়া এভাবে বাজারে আসার কারণ জানতে চাইলে ফজল শেখ বলেন, ‘বাড়ির কাছেই বাজার। ভাবলাম হাঁটতে হাঁটতে বাজার করে আসি।’

করোনার সংক্রমণের ঝুঁকির কথা স্বীকার করে এ ক্রেতা বলেন, মুখে পান আছে তো, আমাদের তেমন সমস্যা হবে না।

বাজারের বড় ব্যবসায়ী মোহন মন্ডল বলেন, এখন কেউ করোনা নিয়ে ভাবছে না। ভাগ্যে যার যা আছে তাই হবে। হাঁট-বাজারে সর্বত্র মানুষের সমাগম এবং ভিড় লেগেই আছে। একজনের শরীরের সাথে আরেকজন মিশে চলাফেলা করছে। তবে আমরা যতটুকো সম্ভব সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার চেষ্টা করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলায় এ পর্যন্ত ৫৬ জন ব্যক্তি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া মোট ৫৪৫ জনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

গত  বুধবার এ সংক্রান্ত একটি সভাও হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পশুর হাটের প্রতি বিশেষ নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

গত সোমবার বিকালে গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলুর সাথে বিদায়ী সাক্ষাতকালে হাঁট-বাজার ও রাস্তাঘাটে মানুষের বেপরোয়া চলাফেলার কথা তুলে ধরে করোনা ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কার কথা জানান হয়।

সাংবাদিকরা দ্রুত করোনার ঝুঁকি এড়াতে ইউএনও’র কাছে শহর ও বাজারে মুখে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক নিয়ম করার দাবি জানান।

বিদায়ী ইউএনও রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সকলকে সাথে নিয়ে উপজেলা প্রশাসন প্রচার মাইক নামানো ছাড়াও সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এক-দুই দিনের মধ্যে জন সচেতনতা সৃষ্টিতে পুনরায় প্রচার মাইক নামানোর কথা জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনরায় অভিযান শুরু করবে। আমরা প্রতিটি হাট-বাজার বা শহরগুলোতে প্রচার মাইক নামাবো। মুখে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হবে। মুখে মাস্ক ছাড়া কারো কাছে কোন পণ্য বেচাকেনা করা যাবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.