প্রশান্তি ডেক্স ॥ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেছেন, সচিবরা জেলার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। একজন সচিব তার দাপ্তরিক দৈনন্দিন কাজকর্মে এতই ব্যস্থ থাকেন যে, এই কাজকর্ম সামাল দিয়ে তার পক্ষে জেলার দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। একজন সচিবের একটি মন্ত্রণালয় দেখভাল করতে হয়। তার প্রচুর রুটিন কাজ থাকে। এই রুটিন কাজ করে তিনি তার পরিবারকেই সময় দিতে পারেন না। তার ওপর জেলার দায়িত্ব মোটেও পালন করতে পারছেন না।
একান্ত আলাপচারিতায় গত সোমবার (৬ জুলাই) আলাউদ্দীন নাসিম বলেন, হয়তো তারা জেলায় ফোন করছেন কিংবা দুয়েকবার যাচ্ছেন কিন্তু এতে জেলায় করোনা পরিস্থিতিতে যে সমস্যা, যে সমস্ত সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান দরকার সেগুলোর কিছুই হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, এ সময় জেলার দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিলো একজন রাজনীতিবিদ এমপিকে। যিনি এলাকায় পরে থাকবেন এবং সার্বক্ষণিকভাবে এলাকার সমস্যাগুলো দেখবেন এবং সেগুলোর সমাধানের জন্য উপর মহলে যোগাযোগ করবেন।
আলাউদ্দীন নাসিম ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিরোধী দলের নেতার একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের চাকুরি থেকে ২০০৮ সালে উপসচিব অবস্থায় পদত্যাগ করে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনো ঘুমিয়ে আছে। একটি এলাকায় যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে তাতে সকলে অতিষ্ট হয়ে গেছে। মানুষের এখন ত্রাণে বা খাদ্যের কোন সঙ্কট নেই। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমার এলাকার কথা যদি আমি বলি, সেখানে পুরো নোয়াখালী অঞ্চলে একটি মাত্র পিসিআর ল্যাব। সেটি আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ফেনীতে ৩৫০ টির মতো পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট পাওয়া গেছে মাত্র দুইটা। ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত রিপোর্টের অপেক্ষা করতে হয়।
প্রসঙ্গত, আলাউদ্দীন নাসিম তার নিজস্ব উদ্যোগে ফেনী জেলায় আইসিইউ বেড স্থাপন করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার পিতা এবং মাতার নামে প্রতিষ্ঠিত সালাউদ্দীন হোসনে আরা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ফেনীতে ৫ টি আইসিইউ বেড চালু করা হয়েছে। এছাড়া তিনি ফেনী সদরে ৪০ টি এবং বাকি ৫ টি উপজেলায় ৫০ টি, অর্থ্যাৎ ৯০টি বেডে হাউফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া তিনি নজেল ক্যানুলা দিয়েছেন ফেনীতে। মানুষের পাশে এভাবে দাড়িয়ে তিনি করোনা মোকাবিলায় ফেনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার এই ব্যক্তিগত উদ্যোগ সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

আলাউদ্দীন নাসিম বলেন, আমি যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম তাহলে এগুলো হতো না। দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়ে যেত। কিন্তু আমাদের এলাকার মানুষদের বাঁচানোর জন্য এর কোন বিকল্প ছিলো না। শুধু আমার এলাকা না, সব এলাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটা হাহাকার তৈরী হয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনো ঘুমিয়ে আছে। কোন কিছুই হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গতি আনাটাই হলো সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে যা করেছি সেটা যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করতে যেত তাহলে তাঁরা তা ১ বছরেও পারতো কিনা আমারসন্দেহ।
আলাউদ্দীন নাসিম বলেন, এখন বাংলাদেশের সবগুলো জেলাতেই স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এক ধরণের অস্বস্তি, অপ্রাপ্তি এবং হাহাকার রয়েছে। করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থা যেমন করা দরকার, তেমনি আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্যে ব্যবস্থাপনাও দরকার। চাইলে এটা খুব সহজেই করা যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবকিছু যেন স্থবির হয়ে আছে। যেকোনো জেলায় একই চিত্র, আপনি যদি কোনো সিভিল সার্জনকে ফোন করেন, তার কাছে যদি কোন সমস্যার সমাধান চান তা দিতে পারবে না। এই অবস্থার অবসান ঘটা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক জেলায় যদি একজন রাজনীতিবিদকে দায়িত্ব দেয়া হতো তাহলে দ্রুত উপরে চেষ্টা-তদবির করে এই বিষয়গুলোর সমাধান নিতেন। সচিবদের পক্ষে এটা সম্ভব না, কারণ সচিবদের সঙ্গে এমনিতেই জনগণের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি দূরত্ব রয়েছে। তারপর এলাকায় জানা শোনার অভাব রয়েছে।
তবে আলাউদ্দীন নাসিম মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলার জন্যে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করা এবং জনগণের সমস্যাগুলোর আলোকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সমস্যার সমাধান করা।