করোনার তেলেছমাতি

করোনা এসেছিলো বলেই আজ বিশ্বমানদন্ড নির্ভিক দাঁড়িয়ে আছে। করোনার তেলেছমাতিতে জমে উঠেছে মৃত্যু মৃত্যু খেলা; পাশাপাশি ভেসে উঠেছে নির্বোদ ও পাপিষ্টদের লোভাতুর ফল। তবে আমাদের দেশে বড্ডই বেড়েছে এবং ফুলে ফেপে একেবারে পেকে গেছে যা দেখে মৃত্যুপথযাত্রী এমনকি শবযাত্রীটিও বমি করে পাপকে ঘৃণা করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পাপের আধারে নিমজ্জ্বিতরা আজ তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে আবার কেউ কেউ এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে; তবে এখনও তাদের ভাসমান হওয়ার ভয় কাটেনি।
কি কি হচ্ছে এবং করে যাচ্ছে ঐ বোকার স্বর্গে বসবাসকারী দুনীয়াবী লোভাতুর মানুষ নামের কলংকগুলো। তারা কি করোনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে? নাকি তারা নিজেরাই করোনা হয়ে ধ্বংসন করে যাচ্ছে বিবেক ও সততাকে। মৃত্যুভয় এবং পরকালের জীবনের সুখ এর স্থায়ীত্বকে তোয়াক্কা না করে মানুষজন দেখছি করোনাকে পুজি করে সকল নেতিবাচকতাকেও হার মানিয়ে যাচ্ছে। তবে কেউ কেউ আবার সম্পুর্ণরূপে পরিবর্তন হয়ে ১০০শত ভাগ খাটি হতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে গুটিকতেক মানুষের কল্যানে করোনা এবং এর ফলশ্রুতিতে রূপলাভ করা তেলেছমাতি বেরেই যাচ্ছে। এর লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে সরকার এবং জনগণ একসঙ্গে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবে যে শুধু পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীই করবে তা কিন্তু নয়। এই সময়ে সকলের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভুমিকা রাখা আবশ্যক।
বাহারি তেলেছমাতির শুরু হয়েছিল গত তিনমাস পূর্বে। ঔষধ এবং পরিচ্ছন্ন উপকরণ বা সামগ্রীর দাম এবং কৃত্রিম অপ্রতুলতা, রোগীর প্রতি চিকিৎসকের ঘৃণাবোধ এমনকি ভীতি সঞ্চার, হাসপাতাল এবং পরিক্ষাগারের উদ্ধগামী তেজীভাব, কোন কোন ক্ষেত্রে রোগী গ্রহন না করার মানষিকতা, প্রশাসনিক জটিলতা এমনকি সমন্বয়ের অভাব। লোটপাটের হাট, ভেজাল উপকরনে লাভ ও মানব জাতির ক্ষতি, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর উদ্ধগামিতা, শিক্ষায় মন্দা, আর অনলাইন শিক্ষার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়া, কোন কোন ক্ষেত্রে করোনাক্রান্ত শিক্ষার্থীর পরিবারকে বেতন পরিশোধ না করার অজুহাতে হেয় পতিপন্ন করা। চাকরী হারানোর উর্বর সম্ভবনা, কর্মসংস্থানে ভাটা, বাসা- বাড়িতে অশান্তি, ব্যবসায় আগুন, অফিস আদালতে কাজ করতে গিয়ে করোনা অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া। সরকারী বেতনের টাকা কাজ না করে তুলে নেয়া। করোনাকে পুজি করে সকল অনৈতিকতাকে পুনরুজ্জ্বিবীত করে ভাসমান রাখা, সরকারের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে প্রাধান্য না দিয়ে নিজস্ব ও মনগড়া কাজে নিয়োজিত থাকা। অজুহাত একটাই আর তা হলো করোনা। ত্রান ও উপহার প্রাপ্তিতে শুভঙ্করের ফাকি দিয়ে সরকার ও ভোক্তভোগীদের বিব্রত করা। চরম সংকটে নতুন করে কৃত্রীম সংকট সৃষ্টি করে জটিল থেকে আরো জটিল পরিস্থিতির মাধ্যমে অর্থ ও সুযোগ হাতিয়ে নেয়া। এই সংকটে জনপ্রতিনিধিদের জনবিমুখ হতে সহযোগীতা করার ব্যবস্থা সৃষ্টি করা। আইন-আদালত এমনকি সৃষ্টিকর্তার শেষ বিচারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকা। সামাজিক, পারিবারিক এবং রাষ্টিয় পারস্পারিক সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করে আবেগ ও বিবেককে বিসর্জিত করা। ক্ষমা, ভালবাসা এবং মানবিক সকল গুণগুলোকে একেবারে বিসর্জন দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো। মূল্যবোধহীন জীবন এখন পৃথিবীতে বিরাজমান রাখা। খুন ধর্ষন এরও কমতি ছিল না। বাহারি রঙ্গের করোনাপ্রীতি দৃশ্যমান হচ্ছে। কাউকে কাউকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে আবার কেউ কেউ বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে বা পর্দার অন্তরালে রয়েছে। আবার কেউ কেউ প্রমানের অভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে। সকল উদাহরন এবং দৃশ্যমানতা আজ আমাদেরকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাচ্ছে। নতুন পৃথিবী কি এর বিস্তার রোধ করে নতুন এক সাম্য ও প্রীতি, নি:শর্ত ভালবাসাপূর্ণ ক্ষমাশীল পৃথিবী জনকল্যানকামী মানুষকে উপহার দিবে না?
ধর্মের বাহাদুরী, ক্ষমতার বাহাদুরী, অর্থের বাহাদুরী, অ¯্ররে বাহাদুরী সবই এখন বিনষ্ট হয়ে দুগন্ধে পরিণত হয়েছে কিন্তু মানুষ ও লোভ একহয়ে এখনোও সেই পচা দুগন্ধযুক্ত ঘৃণার অংশটুকুই আঁকড়ে ধরে আছে বা ধরতে চাচ্ছে। তবে এখনও সময় আছে কিন্তু; ভাল হওয়ার, হারানো ইতিবাচক ঐতিহ্য পুনুরুদ্ধার করার; সৃষ্টিকর্তার নিকট ফিরে যাবার এমনকি তাঁর সান্নিধ্যে থাকার। সৃষ্টিকর্তা অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে যেন আমরা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাই এবং ভংগুর হৃদয় নিয়ে ফিরে যাই খোদার সান্নিধ্যে। প্রত্যেকটি মানুষ হৃদয় ও কর্ণ খুলুন এবং সৃষ্টিকর্তার ডাক শুনুন এবং সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রহমত, বরকত, নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা গ্রহণ করুন। সুরক্ষা নিয়ে পথ চলুন; খোদার সঙ্গে থাকুন। আগামীর নিষ্কলুষ ও নিরাপদ নিশ্চয়তাপূর্ণ পৃথিবীকে সাজাতে স্ব স্ব ভুমিকা রাখুন।
সরকার ও দলীয় প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন এমনকি নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে সকলের মনোভল ঠিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন তা কি দেখেও না দেখার ভান করছেন; শুনেও না শুনার ভান করছেন?। কি আর বলব তবে এতটুকুই বলতে পারি সততায় যারা পূর্ণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সকলের সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত করুন এবং সব ভাল যার শেষ ভাল তার এই কথার সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করুন। তবে যারা এখনো নোংরামিতে এমনকি লোভের ফল পাপে নিমজ্জ্বিত তাদের জন্য দোয়া- মোনাজাত করুন এবং ক্ষমা করে তাদের ফিরিয়ে আনুন খোদার অভিপ্রায়ে; মানুষের কল্যাণে, পৃথিবীর মঙ্গলবাহি অগ্রসরমান ধারাবাহিকতায়। যারা যারা এই কাজে জড়িত রয়েছেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই এবং যারা এখনও জড়িত হননি তাদের জন্য বিনিত ও বিন¤্র আহবান জানাই। করোনার তেলেছমাতি থেকে বের হয়ে নতুন এক বিশ্ব গড়ার ইতিবাচক তেলেছমাতিতে মেতে থাকি- যেখানে থাকবেনা কোন ভেদাভেদ, উচু-নীচু, জাত- গোষ্ঠী, ধনী-গরিব, ধর্ম-দ্বন্ধ। থাকবে শুধুই শান্তি, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা এমনকি নির্বিঘেœ পথচলার সুবিশাল সুনিপূর্ণ আনন্দপূর্ণ সম্ভার। এই হউক আমাদের সকলের চাওয়া ও পাওয়া। করোনা আমাদেরকে এই শিক্ষায় উজ্জ্বিবীত করুক এমনকি প্রস্তুত করুক নতুন করে আগামীর জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published.