আমি ভয় পাচ্ছি দেশে পানিতে করোনা ছড়াচ্ছে কি না…ড. বিজন শীল

প্রশান্তি ডেক্স ॥ দেশে এখন ডায়রিয়া কমন হয়ে পড়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস স্যুয়ারেজ হয়ে পানিতে যাচ্ছে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি টেস্টের কিট উদ্ভাবক বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। গত শুক্রবার (১৭ জুলাই) দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. বিজন কুমার শীল নিজের এ আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে ছিল সামান্য জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যথা থেকে শ্বাসকষ্ট। কিন্তু এখন ডায়রিয়া কমন হয়ে পড়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এখান থেকে আমি ভয় পাচ্ছি স্যুয়ারেজ হয়ে পানিতে যাচ্ছে কি না। পানিতে করোনাভাইরাস কী অবস্থায় ছড়ায়, সে সম্পর্কে কিন্তু এখনো পরিষ্কার ধারণা আসেনি। যেমনটা শুরুতে বাতাসে ছড়ায় না বলা হলেও এখন সেটা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় করোনাভাইরাস আর তেমন প্রভাব ফেলবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি ঢাকায় সংক্রমণের পিক চলে গেছে। ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও বাড়ছে- সেটাই স্বাভাবিক। সংক্রমণও কমছে। তবে এখন আরেকটি বিষয় দেখার মতো, সেটি হচ্ছে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, আমাদের দেশ থেকে করোনা বিদায় করতে আর কত দিন লাগতে পারে- সেই বিষয়টি। দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যার ভেতর যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ফলে সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণে আসছে আপনা-আপনি। তবে এখন যদি আমরা অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করতে পারি, তবেই আমরা তার ফলাফল হিসাব করে নিশ্চিত হতে পারব আর কত দিনের মধ্যে দেশ থেকে করোনা বিদায় নেবে। ডা. বিজনের মতে, যেকোনো মহামারি অনেকটা সাইক্লোনের মতো ঝোড়ো বেগে এসে ক্ষয়ক্ষতি করে দুমড়েমুচড়ে দিয়ে একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে শেষ হয়ে যায়। কভিড-১৯ নিয়ে আমি মনে করি, এর ব্যতিক্রম হবে না। কোনো মহামারি চিরস্থায়ী নয়। এদিকে বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ছয় মাস কেটে গেলেও এখনও কমেনি আক্রান্তের হার। এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৮৭ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন আর আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ন্যাশনাল ডিজিজ (সিডিসি) চলমান করোনা ভাইরাসের লক্ষণসমূহের তালিকায় নতুন আরো তিনটি লক্ষণ যুক্ত করেছে। পাঠকদের জন্য করোনা ভাইরাসের নতুন তিন লক্ষণ নিচে বর্ণনা করা হলো। বুকে চাপ ধরা ও নাক দিয়ে পানি পড়া: করোনার সর্বাধিক পরিচিত লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হলো শুকনো কাশি হওয়া বা সর্দি লাগা। সর্বশেষ অনুসন্ধান অনুসারে, রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রামণের প্রারম্ভিক দিনগুলোতে লক্ষণ হিসাবে বুকে চাপ ধরা এবং নাক দিয়ে পানি পড়া লক্ষ্য করা গেছে। বমি বমি ভাব: নিজেকে লুকিয়ে রাখা করোনা ভাইরাসের অন্যতম স্বভাব। বমি বমি ভাব বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো লক্ষণগুলো হালকা সংক্রমণের ক্ষেত্রে জড়িত হতে পারে। যারা কেবল গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা অনুভব করেন এবং প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান না, তাদের ক্ষেত্রে এটি আরও বাড়তে পারে। পেটে ব্যথা, ক্ষুধা হ্রাস এবং স্বাদের অনুভূতি চলে যাওয়াও এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ডায়েরিয়া: অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের মতো, করোনা ভাইরাসও হজম সিস্টেমে আক্রমণ করতে পারে এবং একে ভারসাম্যহীন করে তুলতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলো সুস্থ হওয়ার গতি ধীর করে দেয়। আপনার যদি ডায়েরিয়ার লক্ষণ থাকে যেমন- পানিযুক্ত বা ঘন ঘন মল, পেট খারাপ হওয়া বা ৩-৪ দিনের জন্য পাকস্থলীতে সমস্যা বা করোনা ভাইরাসের অন্যান্য পরিচিত উপসর্গগুলো দেখা দেয় তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন। এর জন্য জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা এখনও ভাইরাসটি শরীরে কীভাবে আক্রমণ করে তা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। করোনার লক্ষণগুলোর তালিকা ক্রমবর্ধমান হওয়ার সাথে সাথে বিশেষজ্ঞরা এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করছেন। যদিও এটি আগে শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস হিসাবে ভাবা হতো। এখন চিকিৎসকরা দেখছেন, বিভিন্নভাবে ভাইরাসটি দেহকে পঙ্গু করে দিতে পারে। নিউরোলজিক্যাল রিপ্লেস, অবক্ষয় এবং প্রদাহজনিত আক্রমণের ক্ষেত্রে ভাইরাসটি আমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি বিপজ্জনক। এদিকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) প্রকাশিত তথ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৪৯৬ জনে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.