প্রশান্তি ডেক্স ॥ করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ওরফে সাবরিনা শারমিন হুসাইনের সঙ্গে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথকেয়ারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে মাসে মাসে বেতন নিতেন বলে ‘প্রমাণ’ পেয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের একজন বলেছেন, এরকম তিনটি বেতনের স্লিপ তাদের হাতে রয়েছে। সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়্যারম্যান হয়ে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গ করায় ইতোমধ্যে সাবরিনাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত বুধবার রাতে ডিবি কার্যালয়ে তাদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, গতরাতে তাদের একবার মুখোমুখি করা হয়েছে, যাতে তদন্তে কোনো ফাঁকফোকর না থাকে। গত বুধবার ভার্চুয়াল আদালতে আরিফের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। পরে বিকেলে তাকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) মিন্টো রোড কার্যালয়ে। আরিফ ও সাবরিনাকে সেখানে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে মামলাটির তদন্ত তদারকির দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে নতুন কী পাওয়া গেছে জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, চিরাচরিত যা হয়, একে অপরকে দোষ দেওয়া. এখানেও তাই হয়েছে। তবে সেখান থেকে ক্লু নিয়ে কাজ করতে হবে এবং আমরা তাই করছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা পরস্পরকে তুই-তুকারি করছিলেন, একজন অপরজনের জীবন ধ্বংসের জন্য দায়ী করছিলেন। সাবরিনা তার স্বামীকে বলছিলেন, ‘সবকিছু করে এখন আমাকে ফাঁসিয়েছিস।’ আরিফুল কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলেন, ‘তুমিতো চেয়ারম্যান, তোমার কি দায় নেই?’ আরিফুল এ সময় মোটামুটি শান্ত থাকলেও সাবরিনাকে অস্থির দেখাচ্ছিল। গোয়েন্দা পুলিশের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, জেকেজির অফিস থেকে জব্দ করা ডেস্কটপে দুই হাজারের বেশি কভিড পরীক্ষার জাল রিপোর্ট পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজন নিজেদের জেকেজির আহ্বায়ক দাবি করছেন। আহ্বায়ক বলে কোনো পদ তাদের নেই, কিন্তু বারবার জিজ্ঞাসা করলেও তারা ভিন্ন কিছু বলেননি। আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, সাবরিনা অস্বীকার করলেও তিনটি বেতনের স্লিপ পুলিশ পেয়েছে, সেখানে দেখা গেছে, জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে সাবরিনা প্রতি মাসে ত্রিশ হাজার টাকা করে নিতেন। চেয়ারম্যানের বেতন এত অল্প টাকা কেন- এ প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা হাসতে হাসতে বলেন, এটাতো সম্মানি হিসেবে দেখানো হত। আসলে সবকিছুইতো তাদের। হয়ত অন্য স্টাফদের এটা বোঝানোর জন্য যেম চেয়ারম্যান হয়েও তিনি কত কম টাকা নেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট আরেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সাবরিনা ও আরিফের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের কাজ পাইয়ে দিতে যারা সহযোগিতা করেছেন তারা কেউ এখান থেকে লাভবান হয়েছেন কি-না সেটাও যাচাই করা হচ্ছে। ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, করোনা সনদ জালিয়াতির সঙ্গে ওভাল গ্রুপের সাত পরিচালকের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা সনদ জালিয়াতির সঙ্গে যাদেরই সম্পৃক্ততা আসবে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৩ জুন জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানটির ৬ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ব্যাপারে মামলা হওয়ার পর ২৪ জুন করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য জেকেজির অনুমতি বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পুলিশি তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে করোনা সনদ জালিয়াতিতে ডা. সাবরিনার নাম আসে। এরপর গত ১২ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করে ১৩ জুলাই তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত বুধবার তার স্বামী আরিফকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post