করোনার ভীতি ছড়িয়ে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার নয়। বন্যার প্লাবনে যে ক্ষতি পরিলক্ষিত হচ্ছে তাও পুষিয়ে নেবার মত নয়। তবে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য যে যে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী তা নিতে বিলম্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে মানুষজন কেনজানি অনিহা বা অবজ্ঞা এমনকি অবহেলার দৃশ্যমানতা বিরাজমান রেখেছে। পাশাপাশি মিডিয়ার কল্যাণে করোনা ভীতি যেভাবে ছড়ানো হয়েছে ঠিক সেইভাবে বন্যার ক্ষতির বা বিস্তার ছড়ানোতেও বিস্তর ফারাক রয়েছে।
করোনা করোনা করে মানুষ হ্যা-পিত্যেস করে যাচ্চে কিন্তু করোনার ছোবলে বাংলাদেশ তথা এই দেশের মানুষের বিন্দুমাত্র ক্ষতিসাধিত হয়নি তবে যা হয়েছে তা হল বৈশ্বিক প্রভাব বা বলয়ে এমনকি ভীতির ত্রাসে। তবে করোনা বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্য বহুবিধ কায্য সাধন করেছেন। একটি হলো বিশ্বের বুকে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে করোনাকে জ্বয় করেছে; মিডিয়া বা বিজ্ঞান এবং ডাক্তারী বিদ্যার ভাষায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায়, মনোবল, সামাজিকতায়, স্ব স্ব ধর্মের প্রতি অঘাধ বিশ্বাস ও নির্ভরতায়। ভাল ও মন্দ মানুষ চিনার এবং জানার; ধার্মীক ও অধার্মীক চিনার কাজে করোনা টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। করোনা একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে যে, মানব কল্যাণের তরে কে কে কি কি করেছে। তবে এর মধ্যে নেতিবাচকতা ও লোভ লালসার কাজটুকুই বেশী হয়েছে যা এখন জনগন মিডিয়া এবং সরকারের সদিচ্ছার ফলে প্রতিনিয়ত দেখে যাচ্ছে। তবে এখানে আরো গভীরে গিয়ে এর মুলউৎপাটনে কুঠারাঘাত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুবা সরকারের সকল ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো বিফলতায় পর্যবসীত হবে।
যদি দুর্যোগ ও মহাদুর্যোগগুলো অতিক্রম করার যে সফলতার ইতিহাস বিরাজমান তা সারা পৃথিবীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে আগামীর নুতন বিশ্বে শান্তি ও নিশ্চিত নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য। কিন্তু এরই মাঝে যে ভুলগুলো বা লজ্জাজনক নেতিবাচক মনোভাবের ফলগুলো বিরাজমান তা না থাকত তাহলে হয়তো আমরাই গর্ব করে বলতে পারতাম দেখ দেখ বিশ্ববাসী অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখ বালাদেশের অগ্রগতি, উন্নতি এবং স্থিতিশীলতায়; আরো দেখ দুর্যোগ বা মহাদুর্যোগ কাটিয়ে উঠার দৃষ্টান্তে।
সৃষ্টিকর্তার আর মানুষের ঐকান্তিক চেষ্টার যোগসূত্র এবং করোনার চেয়েও বড় ধরনের জীবন সংগ্রামে লিপ্ত থেকে বাংলার মানুষ আজ এই বর্তমানে এসে উপনিত হয়েছে। এখানে কারো গর্ব করা বা বড় কথা বলার কিছু নেই এমনকি দোষারুপ করারও কোন কারন নেই। তবে এতে আগামীর জন্য আশান্বিত হওয়ার যথেষ্ট কারন রয়েছে। আমি করোনাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলি না বরং বলি এটি একটি মনুষ্য সৃষ্ট এবং মানুষ দ্বারা ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে বিস্তার লাভকারী অতি সাধারণে অসারণ এক বিদ্যুৎ চমক রোগ। তবে তারচেয়ে বেশী ভয়াবহ এবং ক্ষতিকারক হলো প্রাকৃতিক বিরুপাচরন এই বন্যা। কিন্তু এই বন্যা আগেও হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে এমনকি ভবিষ্যতেও হবে তাই অতীতের অভিজ্ঞতায় ভবিষ্যতকে মোকাবেলা করতে যা যা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তাই যেন অতিদ্রুত নেয়া হয়। সরকার এবং জনগন একত্রে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় একযোগে কাজ করতে হবে। সোস্যাল মিডিয়া যেন করোনা করোনা করতে করতে এই বন্যাকে ভুলে না যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। করণীয় বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বন্যাত্বদের পাশে দাঁড়াতে হবে। খাবার, চিকিৎসা, এবং প্রয়োজনীয় মালামাল ও গৃহপালিত পশুপাখি এমনকি জীবযন্তুকেও রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। উঁচু স্থানের জায়গাগুলোকে এই সময়ে ব্যবহার করে জান-মালের ক্ষতি কমিয়ে আনতে হবে। খাদ্য, অর্থ, ঔষধ এমনকি যা যা প্রয়োজন তাই করার কাজে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
বর্নাপরবর্তী ব্যবস্থার জন্য এমনকি পুর্নবাসন কাজে এখনই মনোনিবেশ করতে হবে। যা যা ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে কি কি করণীয় তা এখনই ঠিক করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কোনপ্রকার শৈথল্য দেখানো বা প্রকাশের কোন সুযোগ নেই। করোনা এবং বন্যার ক্ষতি দুই-ই পুষিয়ে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সরকার এবং জনগণ একসুত্রে একই লক্ষে এগিয়ে যেতে হবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে যাতে পুর্বের ন্যায় আর কোন নেতিবাচক পরিস্থিতির উদ্বব না হয়। সাহেদ – সাবরিনাদের বাস্তবরূপদানকারীরা আর যেন নতুন সাহেদ – সাবরিনা রুপদান করে নিজেদের আখের গোছাতে না পাওে সেইদিকে তীখ্ন্ দৃষ্টি রাখতে হবে। তিন -চার বছর পর এসে নতুন করে মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাসের বিতর্ক জাতির সামনে তোলা সত্যিই দুভার্গের। কারন এই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীই তিন চার বছর আগে এই ঘটনার জনবিস্ফোরনকে ধামাচাপা দিয়েছিল। তখন কোথায় ছিল এদের আজকের পেশাদারিত্ব অথবা অঙ্গিকারাবদ্দ দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত। তাই সবাই মিলে দেশকে পিছিয়ে দিতে চেষ্টা না করে বরং দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করা উচিত। সাবরিনা-আরিফ- সাহেদদের মতো লোক তৈরীতে মনযোগ না দিয়ে বরং এদেরকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে জাতির দায়িত্ব নিজকাঁধে তুলে নিতে সাহায্য করুন। প্রশ্নপত্র ফাসের সহিত জড়িতরা এবং এ প্রশ্নপত্র কিনে পরিক্ষা দিয়ে পাশকরারা একই অপরাধে অপরাধি তাই উভয়েরই দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায়ন নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করুন। এতে করে আগামীর পথ হবে কুসুমাস্তির্ন এবং শিক্ষার দ্বার হবে নতুন সম্বাবনাময়। যেখান থেকে জাতি পাবে প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং যোগ্য উত্তরসূরী। যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে শিক্ষায় তা করোনার চেয়েও বিশাল এবং বন্যার চেয়ে সুবিশাল। তাই ঐ ঘটনাটি করোনার ভীতি এবং বন্যার ক্ষতি উভয়কেই পাশ কাটিয়ে এখন যুগের চাহিদার তুলনায় একটু কম। তাই কম গুরুত্বে দৃষ্টিপাত নয় বরং বেশী গুরুত্বে দৃষ্টিপাত ঘটানো সময়ের দাবি।
করোনাকে পুজি করে আর কোন নেতিবাচক বা জাতির মেরুদন্ড বিচ্ছিন্ন হওয়ার মত কোন ঘটনা এমনকি সিদ্দান্ত না আসুক। করোনায় বাংলা ও বাঙ্গালী আজ অক্ষুন্ন এবং অক্ষত। তবে এরই মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের জন্য দায়ী আমাদের অতি ভীতিসঞ্চার মূলক কর্মকান্ড। আসুন আমরা প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তবতায় দৃষ্টি দিয়ে সামনের সকল সিদ্ধান্তে দূরদর্শীতা এবং আগামীর কল্যাণের অগ্রগামীর ছাপ রাখতে চেষ্টা অব্যাহত রাখি। শিক্ষার দিকে দৃষ্টি দিয়ে সকল প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত করে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় গতিময় প্রাণ ফিরিয়ে নিয়ে আসি। ইতিমধ্যে যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তারদিকে দৃষ্টি না দিয়ে বরং এর থেকে বের হয়ে এসে জাতির কল্যাণে এব্ং সম্বৃদ্ধিতে মনযোগ দিয়ে সকল ইতিবাচক সিদ্দান্ত বাস্তবায়ন করি। শুধু মাদরাসা নয় বরং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বার উন্মুক্ত করি যাতে প্রকৃতির নিয়মে এবং যুগের উৎকর্ষতায় বাংলা ও বাঙ্গালী এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও চেতনাময় গতি সঞ্চারিত হয়। কোনক্রমেই ক্রমবর্ধমান ধারাবাহিকা আর চলমান রাখা যাবে না। বরং এর থেকে বের হয়ে এসে নতুন নতুন ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপনে মনোযোগী হতে হবে। থমকে দাড়ানো শিক্ষাব্যবস্থার গতিময়তা ফিরিয়ে এনে গতি সঞ্চার করতে হবে। আর নয় অলসতা এবং গুণেধরা সিদ্ধান্ত। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একই নিয়ম কার্যকর হউক। বাংলা এবং ইংলিশ এই দুইয়ের মধ্যে কোন নিয়ম নীতি যা আইন হিসেবে বিবেচ্য তাতে পার্থক্য না হউক। একই দেশে অভিন্ন নীতিতে মৌলিক চাহিদার একটি শিক্ষাকে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা উন্মক্ত হউক। যারা আজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাবি আদায়ের জন্য কথা বলছেন তাদের এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উদ্দেশ্যে বলছি— আপনারা উভয়েই মিলে মিশে সমস্যার সমাধান করুন। এটি রাষ্ট্রের নয় তবে প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের কাঁধে দায়িত্ব বর্তায়। সেই জন্যই আজ রাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপের দাবি জানানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। যেন কোন গার্ডিয়ান (অভিভাবক) রাস্তায় নামতে না হয় এমনকি কোন প্রতিষ্ঠান প্রধানকে রাস্তায় নামতে না হয় সেইদিকে গুরুত্ব দিয়ে যুগান্তকারী ব্যবস্থা নেওয়া হউক। শিক্ষা যেন ব্যবসায় পরিণত না হয় সেইদিকেও আমাদের সকলের দৃষ্টি সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। তাই করোনাকালে আজ বন্যার কবলে পড়ে জাতি যেখানে অস্বীত্ব রক্ষায় হিমশীম খাচ্ছে সেখানে টিউশন ফি’র কমানোর দাবি যৌক্তিক এবং এই যৌক্তিকতা নিরসনে সকলেরই এগিয়ে আসা এখন যুগের অন্যতম দাবি।
আসছে ঈদে ধুয়ে মুছে পরিস্কার হউক মানুষের হৃদয়-মন। কোরবানী হউক মনের, শুধু গরু-ছাগল, ভেড়া, উট-মহিষের মাধ্যমে কোরবানীর সীমাবদ্ধতা না থাকুক। পরিচ্ছন্ন মনের কোরবানী কবুলিয়াতে পরিণত হউক। সৃষ্টির শুরু থেকে যে কোরবানীর প্রচলন চলে আসছিল সেই কোরবানী গিয়ে ঠেকেছিল ইব্রাহীমের সন্তান কোরবানীতে যা খোদা মনের পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ করে ইব্রাহীমকে পুরস্কৃত করেছিলেন। আজ আমরাও সেই পরীক্ষারই দ্বারপ্রান্তে। সুতরাং আজ কোরবানীর দ্বারপ্রান্তে এসে করোনা এবং বন্যার কবলে আমরা। তাই আমাদের ঈমানের ও মনের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত হই। করোনা ও বন্যা যা শিখাতে পারেনি তা যেন এই কোরবানীর মাধ্যমে অর্জিত হই এই প্রত্যাশা রেখে সকলকে অগ্রীম ঈদ মোবারক। সুস্থ্য সবল থেকে প্রতিকুলতায় সকল পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হউন; এই কামনাই আমাদের অবিরত।