কসবায় ঈদকে সামনে রেখে সরগরম কর্মকার পাড়া

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ঈদের আর মাত্র ৩দিন বাকি। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কর্মকার পাড়ার লোকজন। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের হাট বাজারগুলোতে কর্মকারদের ঠুং ঠাং শব্দে মুখরিত। কর্মকার পাড়ার প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের পদচারনা চোখে পড়ার মতো। কারন এই ঈদে পশু কোরবানী দিতে এবং গোশত কাটতে ধারালো অস্ত্রের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। হরেক রকম ছুরি, বিভিন্ন ধরনের দা, বটি ও চাপাতি নতুন করে তৈরি এবং পুরাতন গুলোকে লবন পানি দিয়ে নতুন করে শান দিয়ে যথাসময়ে কাষ্টমারদের হাতে তুলে দিতে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অবিরাম কাজ করছেন কামাররা। সীমন্তবর্তী এই উপজেলার কসবা বাজার, চারগাছ বাজার, গোপিনাথপুর বাজার, কুটি বাজার ও নয়নপুর বাজার হচেছ ঐতিহ্যবাহী বাজার । এই বাজারগুলো ঘিরে যে সকল কামার পল্লী রয়েছে তা বেশ পুরোনো। বছরের অধিকাংশ সময়ই তাদের বেকার সময় কাটাতে হয়। প্রতি বছর কোরবানী ঈদ আসার কয়েক মাস আগে থেকেই এ সকল যন্তপাতি বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কর্মকার পাড়ার লোকজন।

তবে বিভিন্ন উপকরনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং যুগের পরিবর্তনে লোহার তৈরি জিনিস পত্রের কদর কিছুটা কমে যাওয়ায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা ধরেছেন। আবার কেউ কেউ প্রবাসীও হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বাজারে সয়লাব চায়না ছুরি ও চাপাতিতে, তাই অনেক ক্রেতা লোহার তৈরি জিনিসপত্র না কিনে চকচকে চায়না ছুরি, চাকু ও চাপাতি কিনছেন। কর্মকার শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত উপকরন লোহা, ইস্পাত ও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থ সংকটে ভুগছেন অনেক কর্মকার। কোরবানীর আসলে ব্যবসা জমজমাট হলেও ঈদ চলে গেলে বাকী সময় কাজ ও বেচা কেনা কম থাকায় অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। কসবা বাজারের পুরাতন কর্মকার দোকানী নন্দন কর্মকার জানান, আগে যে কয়লার বস্তা ছিলো ৩০-৩৫ টাকা সেই কয়লার বস্তা তিন চার গুন দাম বেড়ে গিয়ে এখন কিনতে হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। লোহার কেজি ছিলো ১০ থেকে ১৫ টাকা, সেই লোহা কিনতে হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। দাম দিয়ে উপকরন কিনে এনে জিনিসপত্র তৈরি করে ক্রেতার নিকট দাম চাইলে ক্রেতা বিমুখ হয়ে চলে যায়। সস্তায় পাওয়া চায়না থেকে আমদানীকৃত সামগ্রীর দিকে ঝুকছে মানুষ।এই বাজারের আরেক দোকানী শংকর কর্মকার জানান, কয়লা ও লোহার পাশাপাশি বেড়েছে লোহা দিয়ে জিনিসপত্র বানানোর জন্য আগুনে বাতাস দেয়ার যে ভাতিটি তার দাম দিগুন বেড়ে এখন কিনতে হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। কি করে এ পেশা ধরে রাখবো বুঝতে পারছিনা। বেশীর ভাগ সময় মন্দাভাব থাকলেও ধান কাটার সময়ে কাস্তে, কোদাল আর কোরবানী ঈদ আসলে কিছু কাজ হয় তা দিয়েই আমাদের সারা বছর চলতে হয়। তাই পরবর্তী বংশধরদের আর এই কাজে জড়াতে আগ্রহ নেই তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published.