আগষ্টের জ্বালা

আগষ্টের জ্বালা যায় কি ভোলা? না ভোলা যায় না যাবেও না কোনদিন। এই ক্ষত ভোলার নয়। ব্যক্তিগতভাবে তো নয়ই বরং রাজনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক এমনকি দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এর করুন ও বেদনাদায়ক বর্বর মর্মান্তিক স্মৃতি ভোলা যাবে না এমনকি যায়ওনি। আজও সেই স্মৃতিরোমন্থনে গ্যাঁ শিখরিয়ে উঠে। শরীরের পশমগুলো খাড়া হয়ে যায় এবং হৃদয় ভেঙ্গে চুড়ে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়। আমার অভিজ্ঞতায় এ উপলব্দি এমনকি আমার দেখা বাস্তবে এই দৃশ্য বঙ্গবন্ধু প্রেমিকদের জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনিতেও উল্লেখ্য; তবে অনেকেই এই স্মৃতিরোমন্থন করতে করতে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন কিন্তু তাদের উত্তরাধিকার হিসেবে আমরা এই প্রজন্মের সন্তানেরা আজও ঘোমরে ঘোমরে কাদি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট যেন একটি কলঙ্কিত দিন এবং কলঙ্কিত অধ্যায়ের কালো কর্ণধার। এই দিনটিকে কেন্দ্র করেই জাতি আজও বেদনাহত, শোকাহত এবং বাকরুদ্ধ। শেখ পরিবারের বেঁচে যাওয়াদের কথা বাদই দিলাম; সাধারণ মানুষ এমনকি বঙ্গবন্ধুপ্রেমিক স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল সরল মনের মানুষগুলো কিই না বেদনাহত হয়েছিল তা বোঝানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমি কাছে থেকে দেখেছি ও শুনেছি তাদের সেই বেদনাহত আর্তনাদ এবং হৃদয়ের গভীরের দির্ঘ নি:শ্বাস। যা ঐ শৈশবেই আমাকে তাড়িত করেছিল এবং চোখের জ্বলে প্রকাশ করতে হয়েছিল আবেগীয় যন্ত্রণা। সেইদিনের কথা স্মৃতিচারন করতে গেলেই মনে হয় আমাদের দেশের মানুষ যারা রাজনীতির সঙ্গে এমনকি ক্ষমতার সঙ্গে ও অর্থের সঙ্গে আপস করে নিজেদেরকে জাগতিকতায় মিশিয়ে দিয়েছিল সেই চক্রান্তকারী স্বাধীনতার শত্রুদের সঙ্গে এমনকি দেশীয় হায়েনাদের ক্ষমতালোভের সঙ্গে। তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি।
সাধারণ থেকে অতি সাধারণ মানুষের মতো চেতনা ছিল, ক্ষোভ ছিল এবং প্রতিবাদের ভাষা ও শক্তি ছিল কিন্তু হায়েনার দল রাজনীতির নিতিনির্ধারকদের অর্থের লোভ ও ক্ষমতার সিংহাসন দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ উল্টোদিকে মোড় নিতে বাধ্য করেছিল। স্তব্ধ করে দিয়েছিল সাধারণের প্রতিবাদ ও ভাষা প্রকাশের শক্তির। পরিস্থিতি পরিবেশের বৈরি অবস্থা সৃষ্টি করে স্বাধীনতার স্বর্ণালী ইতিহাসকে মুছে ফেলে নতুন ইতিহাস রচনায় মির্থ্যার ফুলঝুড়ি আওড়াতে আওড়াতে সকল মিডিয়াকে ব্যস্ত রেখেছিল। কিন্তু তাতে কি ধমে গেছে প্রকৃত ইতিহাসের গতি? না ধমে যায়নি বরং দিনে দিনে এই সঠিক ইতিহাসের গতিপথ আরো সমৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং দির্ঘস্থায়ী রূপ লাভের প্রক্রিয়ায় অগ্রগামী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার অবাধ বিচরণ আজকের উন্নয়নের মহাকাব্য।
আমার হৃদয়ের ক্ষত অপসারণে যে কার্যকরী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার হয়েছে এমনকি বিচার কার্যকর হয়েছে আরও যারা বাকি রয়েছে তাদের এনে বিচারকার্য সম্পন্ন করা হবে; এই দেখে খুশী ও কিছুটা খালকা হয়ে আগামীর পথে এগিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছি। তবে যারা এই বিচার ও কার্যকর হওয়া দেখে যেতে পারেনি তাদের মনের ক্ষত ওপারে স্বস্তির আবেশে আন্দোলিত হচ্ছে যদিও আমরা দেখতে পাচ্ছি না; তবে বুঝতে বা অনুভব করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশ যে গতিময়তা হারিয়েছিল তা পুনরুদ্ধারে তাঁরই কন্যা কাজ করে যাচ্ছে এবং এই বিশাল অর্জনে জাতি দল মত নির্বিশেষে সতস্ফুর্ত সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে।
’৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের খুনী মোস্তাক গংদের সঙ্গে যারা কুশীলব হিসেবে চিহ্নিত তাদেরও বিচারের আওতায় আনা সময়ের দাবী। খুনী চক্রের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাও সময়ের দাবি। খুনীদের ঔরসজাত সন্তান এমনকি উত্তরাধীকারীদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা উচিত অথবা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্নবাসনে ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত। ঔ খুনী চক্রের সঙ্গে যারা হাত মিলিয়ে ছিল তাদের ব্যাপারে এখন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সময়। তাই আমাদের দাবি ও শপথ এই আগষ্টে যেন ঐসকল লোকদের শাস্তি কার্যকর হয় যেমনিরূপে মানবতা বিরোধীদের ক্ষেত্রে এমনকি জেল হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে জাতি দেখতে পেয়েছিল। দলীয় যারা ঐদিন ক্ষমতার আসনে থেকে নিশ্চুপ ছিল বা খুনিদের মৌন সমর্থন দিয়েছিল অথবা অর্থ ও ক্ষমতার লোভে নিজেদেরকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল তাদের বিষয়েও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের সময় এখন।
যারা ঐ ১৫ আগষ্টের মর্মান্তিক ন্যাক্কারজনক বেদনাদায়ক ইতিহাসকে হাস্যকর মনোরঞ্জনের খোরাকে পরিণত করে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তাদেরও আইনের আওতায় এনে কঠোর ও কঠিন বিচারের মুখোমুখি দ্বাড় করানো উচিত। যারা ভুয়া জন্মদিন পালনের মাধ্যমে আগষ্টের তাৎপর্য নষ্ট করতে কার্যকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল তাদেরও ইতিহাসের কাঠগড়ায় দ্বাড় করিয়ে জনতার আদালতে বিচার কার্য্য সম্পন্ন করতে হবে। এই আগষ্ট আমাদের যে শিক্ষা ও দিক্ষা দিয়েছিল সেই শিক্ষা ও দিক্ষায় আগামীর সকল কর্মকান্ড পরিচালিত করে এগিয়ে যেতে হবে। হৃদয়ের ক্ষতকে দ্রুত সারিয়ে তুলে এখন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার তরে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে হবে। দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বতস্ফুর্ত সহযোগীতা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে। কারাগারের রোজ নামচা এবং বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনিকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করে এগিয়ে যেতে হবে যাতে প্রত্যেকে এক একজন শেখ মুজিব হয়ে মানবতার মাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনাকে ২১শে আগষ্টের গ্রেনেঢ হামলা থেকে বাঁচানোর মানব বর্মকে আরো শক্তিশালী বেষ্টনির গাথুনিতে পর্যবসীত করতে হবে। আসুন আমরা এই আগষ্টের শোক—কে শক্তিতে পরিণত করি এবং সকল নৈরাজ্য ও নেতিবাচক অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ইতিবাচক ও সাম্যের মেলবন্ধন ও ভালবাসার নিশর্ত বিনিসুতোর মালায় আবদ্ধ করি এবং করোনা ও বন্যা নামক সকল প্রকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে উঠতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। জয় আমাদের হবেই আর বর্তমান আধারও কেটে গিয়ে ভোরের নতুন সূর্য উদিত হবেই হবে আমাদো আগামীর মঙ্গলের তরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.