ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, ওসিসহ ৫ পুলিশের নামে মামলা

প্রশান্তি ডেক্স ॥  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার (১২ আগস্ট) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আখাউড়া) আদালতে ভুক্তভোগী হারুন মিয়া মামলাটি দায়ের করেন। তার বাড়ি আখাউড়া উপজেলা সদরের মসজিদপাড়া মহল্লায়। এর আগে গত ৩০ মে এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন হারুন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- আখাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান ও হ‌ুমায়ূন কবির, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খোরশেদ আলম এবং কনস্টেবল প্রশান্ত ও সৈকত। তাদের মধ্যে এসআই মতিউর রহমান ও হ‌ুমায়ূন কবিরকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। কনস্টেবল প্রশান্ত ও সৈকত অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন।

বিচারক মামলাটি তদন্ত করে ৩০ কার্য-দিবসের সধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদী হারুন মিয়ার প্রতিবেশী মসজিদপাড়ার বাসিন্দা হাসিনা বেগম ওরফে চিকুনী বেগম এবং তার মেয়ে তানিয়া আক্তার ও তানজিনা আক্তার। এই তিনজনের সঙ্গে সখ্য রয়েছে পুলিশের ওই পাঁচজনের। আটজন মিলিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হারুন মিয়া এই মাদক ব্যবসায় বাধা দেন। এতে হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়ে হারুনের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দেন। গত ২৬ মে দিবাগত রাতে পাঁচ পুলিশ সদস্য নাটকীয়ভাবে হাসিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করেন। এরপর হাসিনার প্ররোচনায় তারা তল্লাশির নামে হারুনের বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এ ছাড়া ক্রসফায়ারের (কথিত বন্দুকযুদ্ধ) মাধ্যমে হত্যার ভয় দেখিয়ে ঘরে থাকা ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।

পুলিশ সদস্যরা হারুনের ঘরের আসবাব ওলটপালট করেন। পুলিশ সদস্যরা পরবর্তীকালে ভোর চারটার দিকে আবার হারুনের বাড়িতে যান। এ সময় ভয় দেখিয়ে আরো এক লাখ টাকা দাবি করেন। তা না দিলে মাদক মামলায় হারুন ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দেওয়ার হুমকি দেন। হারুন নিরুপায় হয়ে আরো ৫০ হাজার টাকা দেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাদের ছেড়ে দেন। চলে যাওয়ার সময় বলে দেন, বিষয়টি ওপরের কর্মকর্তাদের জানালে হারুনকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে।

মামলার বাদি হারুন মিয়া বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের কারণে এখন আমি নিজের বাড়িতে যেতে পারি না। তাই ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।

বাদিপক্ষের আইনজীবি গোলাম সারওয়ার খোকন বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হোসেন অভিযোগটি আমলে নিয়েছেন। তিনি তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নয়, এমন কাউকে দিয়ে অভিযোগটি তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হোসেন অভিযোগটি আমলে নিয়েছেন। তিনি তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নয়, এমন কাউকে দিয়ে অভিযোগটি তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশের বক্তব্য জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারের মুঠোফোনে কল করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, মামলার বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে দাপ্তরিক কোনো কাগজপত্র এখনও পাইনি।

প্রসঙ্গত, এর আগে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ব্যবসায়ী। সোমবার (১০ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান নোমানের আদালতে এ মামলাটি করেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী মো. সোহেল মীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published.