শোকাহত আগষ্ট ১৫ ও ২১

আগষ্ট মাসটি আসলেই মনের কোনে জমে থাকা ক্ষোভগুলো পুঞ্জিভুত হয়ে একত্রিত একটি সমূদ্রের বিশালতায় ঢেওয়ে ঢেওয়ে ধুমড়ে মুচড়ে দেয় আমাদের মনকে এমনকি জিবনের গতিপথকে। এককথায় এই আগষ্টকেই নামকরণ করা হয়েছে হৃদয়ের গহীন থেকে শোকাহত মাস বা শোকাবহ আগষ্ট হিসেবে। তবে এখান থেকে শক্তিও সঞ্চিত হওয়ার উদাহরণ রয়েছে বাঙালী জাতির ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার ক্ষেত্রে। এই আগষ্টেই বাংলা এবং বাঙালী জাতি হারিয়েছে তাদের আশ্রয়, আশা-ভরসার এমনকি নিশ্চিত গন্তর্ব্যে পৌঁছার ও নির্ভরতার কেন্দ্রবিন্দুকে। সেই কেন্দ্রবিন্দু আর কেউ নয় তিনি হলেন বিশ্ববন্ধু খ্যাত আমাদের অহংকার ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ববন্ধু শব্দটি আমার এবং এই শব্দটি এর আগে প্রথম প্রকাশ করেছে শ্রদ্ধেয় প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সাহেব। এরও একটি ব্যাখ্যা দিয়ে স্পষ্ট করি… বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গবন্ধু, কেন তিনি বিশ্ববন্ধু হবেন না? তিনি বিশ্ববন্দু। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিট বলেছিলেন ৭ই মার্চের ভাষন সম্পর্কে এই— “পৃথিবীতে মানুষ যতদিন পরাধিনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে ততদিন এই ভাষণ প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।” আবার ১৯৭৩’র ৯ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়াতে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, “বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত- “শোষক আর শোষিত” আমি শোষিতের পক্ষে। এই কথাটি শুধু বাংলাদেশ নয় বরং সারা পৃথিবীর জন্য আর এই থেকেই আমরা বিশ্ববন্ধু হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি।
এখানেই শেষ নয় বরং ঐদিন (১৫ আগষ্ট) বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার উত্তরসূরী, অনুগামী এবং বাংলাদেশকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিপ্ত শপথে যারা ছিলেন বলিয়ান ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে যারা ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তাদের সবাইকে নৃশংসভাবে নারকীয় কায়দায় হত্যা করা হয়। আর তার সাথে সাথে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র যার জন্ম হয়েছিল সদ্য প্রস্ফুটিত একটি বিকাশমান ভ্রুণের মত; সেই ভ্রুনটিকে অঙ্কুরেই বিনাশের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই কালরাত্রীতে। যার অব্যাহত যাত্রা চলমান রেখেছিল সেই পরাজিত শক্তির দোসররা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ যুগিয়েছিল তারা অনেকেই আজও ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
আমি বিন¤্রভাবে আজ আমার মনের আকুতি ও তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং জীবনদায়ী দিক্ষা ও শিক্ষা সকলের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি। আগষ্টের সেই ধারাবাহিকতা কিন্তু এখনও রয়েছে। তাদের প্রেতাত্মারা এখনো সংঘবদ্ধ হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেদিন যারা প্রত্যক্ষভাবে নরপিচাশের ভুমিকায় ছিল এমনকি জাতির ভাগ্যাকাশে কালো মেঘের আভা এটে দিয়েছিল তাদের স্বীকারোক্তি ও দাম্বিকতায় প্রকাশিত হয়েছে ৭৫এর ১৫ই আগষ্টের ষড়যন্ত্রকারীদের নাম। কর্ণেল ফারুক, রশিদ, ডালিম এবং সর্বশেষ ক্যাপ্টেন মাজেদ তার ভিডিও বার্তায় বা জবানবন্দিতে প্রকাশ করে গেছেন জাতির জন্মশত্রুদেও নাম ও কাম। তাদেরই একজন ছিলেন থলের ভিড়াল বা ভেজা ভিড়াল মেজর জিয়া আর তার নীলনকশা বাস্তবায়নকারী ছিলেন খন্দকার মোশতাক গংরা। মেজর জিয়ার সমস্ত কর্মকান্ডের অবৈধ প্রমান যা হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট ঘোষণা করেছিল এবং কৃতকর্মের দায় থেকে শত চেষ্টা করেও খুন থেকে রেহাই পাননি শেষ পর্যন্ত। আল্লাহ দুনিয়ার বিচার দুনিয়াতেই সম্পন্ন করেন এবং গ্রাম্য ভাষায় বলে থাকে খেতের ইটা খেতেই ধুলিসাৎ হয় বা খুনের বদলা খুন-ই হয়। দেখেছিও তাই এমনকি হয়েছেও তাই যা জাতি দুচোখ ভরে প্রত্যক্ষ করেছে। সেই জিয়ার ঔরসজাত সন্তানদ্বয় এবং পেয়ারে বিবি বেগম খালেদা জিয়া মিলে জিয়ার অসমাপ্ত কাজটুকু সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট।
কথায় আছে উত্তাল মার্চ বা আগুন ঝড়ানো মার্চ যা শুরু হয়েছিল সেই ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ আর ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট শেষ হয়েও সেই আগুণের স্ফুলিঙ্গ মিটি মিটি করে জ্বলেছিল শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার মাধ্যমে। যা আজ অগনিত হিসেবে মিটি মিটি নয় বরং দাপটের সঙ্গে প্রজ্জ্বলিত হচ্ছ। এই প্রজ্জ্বলনকেও তারা থামানোর জন্য এমনকি একটি দলকে চিরতরে নের্তৃত্বশুন্য করার জন্য সেই পচাত্তরের নীলনকশার ছক কষে ২০০৪ সালের একুশে আগষ্ট ভয়াল এক গ্রেনেড হামলায় রক্তাক্ত করে বাংলার মাটিকে। যা ইতিহাসে ১৫ ও ২১ শে আগষ্ট একই সূত্রের ভিন্নরূপ এমনকি দ্বিতীয় আক্রমন হিসেবে স্বীকৃত। যদিও টুঙ্গিপাড়ার ১৭ই মার্চে জ্বলে উঠা আগুণের ফুলকি নিভে গেল ৭৫এর ১৫ই আগষ্ট কিন্তু সেই ফুলকির স্ফুলিঙ্গ এবং রেশকে নিভাতে বেছে নেয়া হলো একই মাসের ২১শে আগষ্টকে। এখানেই কি শেষ? না এই কাহিনীর বিস্তার এবং প্রমানকে ধুলিসাৎ করার জন্য মেজর জিয়ার চেয়েও আরো ভয়ঙ্কর, কঠোর মনোভাবের সার্বজনিন প্রকাশ ঘটিয়েছিল সেই সময় তার স্ত্রী ও সন্তানরা। শেষ পর্যন্ত দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মুখ রক্ষার জন্য জজমিয়া নাটক সাজিয়ে একটি দায়সাড়া গোছের বিচার সাধন করেন। যাও ইতিহাসে নগ্ন এবং ধিক্কারের রচনায় বিরাজমান।
ঐ২১শে আগষ্টের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জড়িতদের বিচারের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের নিকট করজোরে নিবেদন রাখছি। তবে এই যাবত দেখা ইতিহাসের সাক্ষিতে পুজি করে বলতে পারি যে, বঙ্গবন্ধুর খুনি থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধি এবং জাতিয় চার নেতা হত্যার বিচার হয়েছে এবং রায় পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে সেই আলোকে আমি আশাবাদি আগষ্টের রক্ত বৃথা যাবে না এবং ঐ দোষিদের বিচার হবে এমনকি বাংলার জমিনে রায় কার্যকর হবে। যারা আজো ঐ ক্ষত নিয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে তাদের জন্য জাতি হিসেবে আমাদের কিছু করা উচিত। আর যারা ঐদিনের পরিকল্পিত আঘাতে জীবন দিয়েছেন এবং জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পথ দেখিয়েছেন ও মানব বর্মের নতুন ধারা সুচিত করে নব দিগন্তের শুভ সুচনা করেছেন তাদের সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা ঋনী ঐদিনে জীবন উৎসর্গকারীদের কাছে এমনকি জিবীত স্পিল্টার বহনকারীদের কাছে।
একজন জীবনদায়ী নেতা এবং বিশ্বনেতার বৈশিষ্ট্যে বিড়ল জিবনের অবসানকারী এমনকি বিশ্ব নের্তৃত্বের বীজ বপনকারীর ইতিবৃত্ত আজ থেকে বহু আগে ১৯২১ সালে স্কটল্যান্ড এর বিখ্যাত নকশাবিদ বা ডিজাইনার স্কটগিটেস এর উদ্দেশ্যে লিখা চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন আর ঐ সজ্ঞায় সজ্ঞায়ীত হলেন আমাদের রাজনীতির বহুধা পুরুষ এবং এতিহ্য ও শিক্ষক এবং বাংলাদেশের শ্রষ্টা, বিশ্বের মহান নেতা শেখ মুজিব সাহেব। তাঁরই ঔরসজাত সন্তান তাঁরই উত্তরসূরী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী এবং মানবতার মা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ শেখ হাসিনা। বিশ্ববন্ধুর কন্যা আজ বিশ্ব নেত্রী হিসেবে এমনকি বিশ্ব মানবতার মা হিসেবে সুপ্রতিষ্টিত করে আমাদেরকে সম্মানীত করেছেন। বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথের সেই লিখাটির যথার্থ প্রয়োগ হলো আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর বাবা। সেই লিখাটি খুবহু তুলে ধরলাম “কোন প্রতিষ্ঠানের উপর আমার আস্থা নেই, তবে আস্থা আছে সেই মানুষগুলোর উপরে; যাদের যথার্থ চিন্তা; মহান অনুভব এবং সঠিক কর্ম।” রবিন্দ্রনাথের এই উক্তি থেকে নেতৃত্বের সংজ্ঞা নতুন করে আবিস্কার করে বলতে চাই- বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনার যাপিত জীবন এবং কর্ম ও কৃর্তিকে যদি আমি বিশ্লেষণ করি। তখনই রাজনীতির নীতির স্বার্থকর্তা খুজে পাই আর বলতে চাই বিশ্ববন্ধু এবং বিশ্বনেত্রী।
আজ আমি আকুল স্বরে ব্যাকুলতা নিয়ে এইদেশের মানুষ এবং দলীয় ও নির্দলীয় মানুষদের সাথে সাথে দেশীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যেন ঐ রতœটিকে আগলে রাখেন। বঙ্গবন্ধুর পরিক্রমায় যে মানুষটি আজ তেজোদৃপ্ত কন্ঠে এবং কর্মে ও উদ্ধিপনায় দেশ এবং জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার সুরক্ষায় এবং নিরাপত্তায় ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্টের মানব বর্ম ঢাল হিসেবে ব্যবহার করি। গড়ে তুলি মজবতু পাহারার ভিত এবং দৃশ্যমান নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হেলায় ফেলায় সময় নষ্ট না কওে বরং কাজ ও কর্মে এবং চিন্তার সমন্বয়ের মাধ্যমে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকি। এই কালো দিবস দুটিকে দৃঢ় মনোবলে এবং জ্ঞানের আলোকে খোদার সহায়তায় মোকাবিলা করে দেশ ও দশের কল্যাণে নিয়োজিত হয়। জয় হউক আমাদের আর পরজিত হউক আগষ্টকে কলঙ্কিত করা মানুষগুলির এমনকি ঐ কলঙ্কিত দিন দুটিকে মৌন সমর্থন জানানো নতজানু মানুষগুলোর।

Leave a Reply

Your email address will not be published.