ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নে বিধবা ভাতা ও বয়স্ক ভাতা দেয়ার নামে অসহায় গরীব মানুষদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন। অভিযোগপত্র ও সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে অসহায়,গরীব বিধবা ও বয়স্ক মানুষদের কাছ থেকে তিনি ভাতা কার্ড করে দেয়ার নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত তিন-চার বছর যাবত এ সকল ভ’ক্তভোগী মানুষেরা আবদুল্লাহর পিছে পিছে ঘুরে কার্ড না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলমের নিকট প্রতিকারের আশায় ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। এ সমস্ত ঘটনা নিয়ে আবদুল্লাহ মেম্বারের বিরুদ্ধে জনগন ফুঁসে উঠেছেন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো হলো রাউৎহাট ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন। আবদুল্লাহ মেম্বারের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম বর্হিভূতভাবে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সরকারী নিয়ম-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আবদুল্লাহ মেম্বার নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে আসছেন। বিগত ৪ বছরে নিয়ম বর্হিভূত ভাবে এলাকার শালিস দরবার,উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম,ইউনিয়ন পরিষদ কতৃর্ক বরাদ্ধকৃত উন্নয়ন কাজ ,৪০দিনের কর্মসূচির কর্মি নিয়োগ,রাস্তার পাশের আগাছা ও রাস্তা সংস্কারের কর্মী নিয়োগ,বয়স্ক ভাতা,বিধবা ভাতা ও গর্ভকালীন ভাতা তালিকা ভূক্তি করার জন্য মাথা পিছু ৫ হাজার-১০হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে যায় আব্দুল্লাহ মেম্বার। সরেজমিনে গিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। ঋষি পাড়ার ভুক্তভোগী হরিচন্দ্র স্ত্রী স্বরলক্ষ¥ী
অভিযোগ করে বলেন; আবদুল্লাহ মেম্বার তাদের কাছ থেকে বয়স্ক ভাতার করে দেবে বলে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। তিন বছর ঘুরেও কার্ড না পেয়ে টাকার শোকে হরিচন্দ্র মারা যায়। হরিচন্দ্রের স্ত্রী স্বরলক্ষ্মী (৬৫) বলেন; “আমারে মন্ত্রী বাবাজি থেকে একটা কার্ড কইরা দেন। তইলে আমি কয়ডা ভাত খাইয়া যাইতারাম”। হাজীপুর গ্রামের গফুর মিয়ার ছেলে রউফ মিয়া অভিযোগ করে বলেন ,আব্দুল্লাহ মেম্বার আমাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে চার বছর আগে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি আমার মায়ের কানের জিনিস বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। চার বছর যাবৎ আমি এই টাকার সুদ টানছি। আমি টাকাও পাই না কার্ডও পাই না। জীবন ভাইয়ের (উপজেলা চেয়ারম্যান) কাছে আমার আবেদন টাকাটা যাতে ফিরে পাই। হাজী পুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে ফারুক মিয়া বলেন-আব্দুল্লাহ মেম্বার বয়স্ক ভাতা করে দিবে বলে আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেয়। আমি সুদ করে টাকাটা এনে দিয়েছি। আমি গরীব মানুষ খুব কষ্টকরে চলতেছি । আমার পাচঁটা মেয়ে নিয়ে আমার চলা অনেক কষ্ট হয়। কোমড়ের ব্যাথায় আমি বেশী কাজ করতে পারিনা। ঋষি পাড়ার সাগর ঋষির স্ত্রী সমীত ঋষি অভিযোগ করে বলেন, আমার গর্ভকালীন ভাতা করে দিবে বলে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে । কানের জিনিস বন্ধক দিয়ে টাকা দিয়েছিলাম। আজও ভাতার কার্ড পাইনি। হাজিপুর গ্রামের রেখা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমাকে রাস্তার কাজে লাগিয়ে দিবে বলে মেম্বার ২ হাজার টাকা নিয়েছে । আমাকে রাস্তার কাজে লাগায়নি। আমার টাকাও ফেরত দেয়নি। আমি মানুষের বাড়ীতে কাজ করে কোনোমতে জীবন বাঁচাই। আমার মা-বাবা ভাইবোন কেউ নেই। এরকম আরো শত অভিযোগ আবুদুল্লাহ মেম্বারের বিরুদ্ধে। কিন্তু ভয়ে অনেকেই মুখ খুলছেনা জানালেন একই গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশিষ্ট ব্যক্তিগন। অভিযুক্ত আবদুল্লাহ মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সবগুলো সত্য নয়। তিনি জানান খরচের জন্য সামান্য টাকা দিয়েই অভিযোগকারীরা বলছেন আমাকে অনেক টাকা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম বলেন – বিনাউটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আব্দুল্লার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। অভিযোগটি আমি নিজেই তদন্ত করে দেখবো। তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে রির্পোট পাঠাব।