স্ত্রী হারানোর শোকে বাঁশগাছে ৩০ বছর

প্রশান্তি আন্তজার্তিক ডেক্স ॥ স্ত্রীর মৃত্যুর পর ঘর-সংসার ছেড়ে বাঁশবাগানের ওপর ৩০ বছর ধরে সন্ন্যাসীর জীবন কাটাচ্ছেন বছর পঞ্চান্নর লকু রায়। এখানেই বাকি জীবনটাও কাটিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি। লকু রায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরের অদূরে পালিতপুর গ্রামের রায়পাড়ার বাসিন্দা। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, চারিদিকে সবুজ ধানের জমি। মাঝখানে একফালি জমিতে বাঁশের ওপরে লকুর আস্তানা। বাঁশ, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিনের টুকরো দিয়ে বাঁশের ওপরে মাচা করে একটি ছোট্ট ঘর বানিয়ে নিয়েছেন। ঘরের সামনে বসে কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখা গেল তার মাথার ওপরে কঞ্চিতে জড়িয়ে রয়েছে একটি বিষধর কেউটে। উপস্থিত অনেকেই সেদৃশ্য দেখে আঁতকে উঠলেও, লকু কিন্তু মুচকি হাসি দিয়ে সাপটিকে ধরতে যাচ্ছিলেন। বললেন, ‘এই সাপখোপেদের সঙ্গেই তো মিলেমিশে রয়েছি’। দিনের আলোতে একরকম, রাতের

অন্ধকারে এখানে তিনি থাকেন একমাত্র ছোট্ট একটি টর্চের আলোতে। লকু পেশায় দিনমজুর। কাজ থাকলে ভাল। আর কাজ না থাকলে তার ছোট্ট একফালি জমিতে জলের নালা বানিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ পেতে রেখেছেন। নিজের ধরা সেই মাছের ঝোলেই তৃপ্তি পান নিঃসঙ্গ লকু। বাঁশের ওপর বাস কেন? এই প্রশ্ন করতেই তার মুখে বোল ফোটে না। তখন তার এক বন্ধু আদিল রায় জানান, স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন লকু। তারপরই তিনি এই বাঁশ বাগানে এসে বাঁশের ওপর ঘর করে দিন কাটাতে থাকেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে এভাবেই রয়েছেন। দিনমজুরের কাজ করেন। এই গ্রামই তার জন্মভিটে। সেখানে কখনও ইচ্ছে হলে যান। গ্রামের এক প্রবীণ মহিলা লক্ষ্মীরানি রায় জানান, লকুর স্ত্রীর সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয়। তখনই সে ঘর-সংসার ছেড়ে ওই বাঁশ বাগানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তারপর ধীরে ধীরে বাঁশের ওপর মাচা করে ঘর তৈরি করে সেখানেই দিন-রাত পড়ে থাকে। আর লকুর কথায়, ‘আমার এক ছেলে ও এক মেয়েকে মানুষ করছেন মা। তবে আমি আর ওই ভিটেতে যাব না। জীবনের বাকি ক’টা দিন এই বাঁশের ওপরই কাটিয়ে দেব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.