কসবায় ইমামের ধর্ষনের শিকার মাদরাসা ছাত্রী ইমামের সমর্থকরা সমাজচ্যুত করেছে ওই ছাত্রীর পরিবারকে

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবায় বিশারবাড়ী গ্রামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ (৫০) ধর্ষন করেছে এক মাদরাসার ছাত্রীকে। কুফুরির ভয় দেখিয়ে ফুসলিয়ে একাধিকবার ধর্ষন করে ওই ইমাম। এতে অন্তসত্বা হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। কিশোরী অন্তসত্বা হয়েছে টের পেয়ে ইমাম ভয় দেখিয়ে দুটি ট্যাবলেট খাওয়ায়ে গর্ভপাত ঘটিয়ে গ্রামের কতিপয় সাহেব সর্দারদের সহায়তায় ওই এলাকা ছেড়ে যায়। ইমামের বাড়ি জেলার নাছিরনগর উপজেলার বড়নগর গ্রামে। সে ওই গ্রামের আবুদুল্লাহ মিয়ার ছেলে। লম্পট ইমামের মদদদাতারা সালিশ বসি অভিযোগসুত্রে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়; ওই কিশোরীকে মাদরাসায় ৮ম শ্রেনীতে ভর্তি করান তার বাবা । মাদরাসায় ভর্তির সুবাধে গ্রামের বড় মসজিদের ইমামের নিকট শুদ্ধভাবে কোরআন শিখতে দেন। কয়েকদিন মসজিদেই পড়ান ওই কিশোরীকে। পরে বাড়িতে পড়াবেন বলে জানান কিশোরীর পিতাকে। বাড়িতে পড়ানোর নামে একাকিত্বের সুযোগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর কুফুরি ও আল্লাহর ভয় দেখিয়ে ফুসলিয়ে ধর্ষন করে ওই ইমাম। পরে আরো কয়েকদিন তাকে আল্লাহর ভয় দেখিয়ে ধর্ষন করে এবং কাউকে না জানাতে বলে। এতে অন্তসত্বা হয়ে পড়ে কিশোরী। বিষয়টি টের পেয়ে ইমাম ফুসলিয়ে গত ২৩ জুলাই ওই কিশোরীকে দুটি ট্যাবলেট খেতে বাধ্য করে। ট্যাবলেট খাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই তার প্রচন্ড পেটব্যথা শুরু হলে রাতেই একটি মৃত সন্তুান গর্ভপাত ঘটে। গর্ভপাতের পরে কিশোরীর পিতা মেয়ের কাছে জানতে চাইলে সে বলে হুজুর আমাকে পড়াতে এসে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। ধর্ষনের কথা না বলতে ভয় দেখায় হুজুর। বলে কুফুরী করে

কিশোরী ও তার মা-বাবাকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। এই ভয়ে ধর্ষনের কথা মা-বাবাকে বলেনি কিশোরী। পরে ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামের সাহেব সর্দারগন সালিশের আয়োজন করে কিশোরীর পিতাকে অপবাদ দিয়ে তাকে সমাজচ্যুত করে তাদের একঘরে হয়ে থাকার ঘোষনা দেয়। সালিশে অধিকাংশ সাহেব সর্দারগন লম্পট ইমামের পক্ষ নিয়ে কথা বলার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কিশোরীর পিতা কসবা থানায় ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে ওই অভিযোগটি গুরুত্বের সহিত আমলে না নিয়ে বিলম্বিত করতে থাকে পুলিশ এমটাই অভিযোগ কিশোরীর পিতার। পরে নিরুপায় হয়ে ন্যায় বিচারের আশায় গত ৯ আগষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন ওই কিশোরীর পিতা। বিজ্ঞ আদালত পিবিআইকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে পিবিআইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার জানান; গত ২৩ আগষ্ট মামলার নথি ও নির্দেশ পেয়েছেন। এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মো.সাখাওয়াত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন; আমাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এই এর চেয়ে বেশী কিছু বলা যাচ্ছেনা। সালিশে কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত ও একঘরে করার বিষয়ে জানতে ওই মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী হেবজু সর্দার বলেন; তারা গর্ভপাত কেন করলো এবং কিশোরী যে ইমামের ধর্ষনে অন্তসত্বা বিষয়টি সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কিশোরীর পরিবারের বিরুদ্ধে। তারা উল্টো ওই কিশোরীর পরিবারকে দোষারোপ করে তাদের সমাজচ্যুত করে। চাচার জমিতে কাজ করতে গেলেও ওই সাহেব সর্দারদের লোকজন ও লম্পট ইমামের সমর্থকরা কিশোরীর পিতাকে জমি থেকে তুলে দেন। গ্রামের প্রবীন আলহাজ্ব তৌফিক আহাম্মদ জানান; ফন্দি করে ট্যাবলেট খাওয়ালো হুজুর যাতে ওই কিশোরীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেলে সে বেঁচে যায়। অথচ গ্রামের কিছু সাহেব সর্দারগন লম্পট ইমামের বিচার না করে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করে উল্টো ওই কিশোরীর পরিবারের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে তাদের সমাজচ্যুত করলো। এটা কেমন বিচার ? আমি চাই আইনের মাধ্যমে ওই লম্পট হুজুরের কঠিন বিচার হোক। নতুবা যে এলাকায় যাবে সে এলাকায়ই এ সকল অপকর্ম করে বেড়াবে। একই কথা জানালেন যুবলীগ নেতা ফোরকান ও গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিত্ব জাহাঙ্গীল আলম। তারা বলেন; কোন ভিত্তিতে ধর্ষিতার পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন হেবজু সর্দার ও আরো কয়েকজন সর্দারের সহায়তাই পালিয়ে গেছে ইমাম। তারা কিশোরীর পরিবারকে একঘরে করে লম্পট ইমামের পক্ষে কথা বলছে। ধর্ষিতা ছাত্রীর পিতা জানায়, কথিত সালিশের পর গত ২৮ জুলাই তিনি থানায় অভিযোগ পেশ করার ৭ দিন পর তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই জিহাদ দেওয়ান বিশারাবাড়ী মসজিদে যান। সেখানে অনেকের সাথে কথা বলে আমাকে ফোন করবেন বলে জানান। তিনি ফোন না করায় আমি ৩ দিন থানায় যাই। থানায় কেহই আমাকে এ বিষয়ে পাত্তা দেয়নি। আমাকে সমাজচ্যুত করায় কোন কাজ কর্ম করতে পারছিনা। মানবেতর জীবন যাপন করছি। নিরুপায় হয়ে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতে মামলা করেছি। অভিয্ক্তু ইমাম মাওলানা ওবায়দুল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার মোবাইল নং ০১৭২৬৬৮৮৭৫১ এ বার বার ফোন করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ওসি লোকমান হোসেনের সংগে কথা বলতে চাইলে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলবেনা বলে জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ কমিশনার (কসবা সার্কেল) মো.মিজানুর রহমান ভূইয়া বলেন; বিশারাবাড়ীর কিশোরীর ধর্ষনের মামলার বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেনি। এ ধরনের কোন অভিযোগ আমার হাতে আসেনি। আসলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তসাপেক্ষে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ইমামসহ জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.