প্রশান্তি ডেক্স ॥ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়ভিত্তিক দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের যার যার বিষয়ভিত্তিক দায়িত্বটা পালন করা দরকার। নির্বাচনী ইশতেহারে যে ঘোষণাগুলো দিয়েছি, তা বাস্তবায়নে যে কৌশল নেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ কিনা, তা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে- সেগুলো আলোচনা করা উচিত।’ গত বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমন্ডলীর যৌথসভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে নিয়েই আমাদের চিন্তা এবং কাজ। দেশের মানুষ কীভাবে ভালো থাকবে সেজন্য কাজ করা। জাতির পিতা আমাদের আদর্শ তার আদর্শ নিয়েই আমাদের সামনে চলতে হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম, করোনার কারণে সেভাবে আমরা পালন করতে পারিনি। তারপরও আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি যে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা সারাদেশে পর্যাপ্ত গাছ লাগাব। ভূমিহীনদের ভূমি দেব। যারা গৃহহীন তাদের আমরা ঘর করে দেব। যাদের গৃহ নেই দলের পক্ষ থেকেও আমরা তাদের তালিকা তৈরি করতে পারি। যাদের ভিটা আছে কিন্তু ঘর তোলার টাকা নেই তাদের আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সামনে কয়েকটা উপনির্বাচন আছে।’ পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করার আহ্বান শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রার্থীদের বিজয়ী করতে দলের সবস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। করোনা মোকাবিলায় আমাদের নেতাকর্মীরা যেভাবে জনগণের পাশে থেকে কাজ করেছেন, উপনির্বাচনেও আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নেতাকর্মীদের সেভাবে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতি আমাদের আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। তারা আমাদের বারবার ভোট দিচ্ছেন এবং কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। দলের মধ্য থেকে যেন আমাদের দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা হয়।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু আমরা সরকারে আছি সেহেতু কিছু দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা নতুন করে গ্রহণ করেছি। যেটা প্রথমবার নিয়েছিলাম ২০১০ থেকে ২০২০ এই ১০ বছর মেয়াদী। এবার গ্রহণ করেছি ২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত, আমরা বাংলাদেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা দলের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যদের দেখা উচিত, কার কী ইস্যু আছে তা বুঝে নিয়ে কাজ করা উচিত।’ জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সাংগঠনিক পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। এগুলো কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিন। গত পাঁচ মাস করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক কাজকর্মই স্থবির ছিল। এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা সব সংকট ও সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।’ আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে দলের সভাপতি বলেন, ‘এখন সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। করোনার কারণে অনেক জায়গায় সম্মেলন হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এখন সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, পাবলিক লাইব্রেরি, শহীদ মিনার, নতুন ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রশিক্ষণ ভবনসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আধুনিয়কায়ন এবং নতুন প্রজন্মের উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বাংলাদেশের ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ অভিহিত করে তার আত্মার শান্তি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭৫ সালের পর আমরা যখন গভীর সংকটে পড়ি, তখন তিনি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিলেন।’ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাংলাদেশে গত বুধবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছে। এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলের নেতাদের উদ্দেশে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সাংগঠনিক নির্দেশনা দেন। বৈঠকের শুরুতে দলের বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের অনুমতি চান ওবায়দুল কাদের। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জন্মদিন পালনের দরকার নেই। আমি এমনিতেই জন্মদিন পালন করি না।’ প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী দলের পাঁচজন সাংসদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনগুলোর উপনির্বাচনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের পাঁচজন সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে এ আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আসনগুলো হচ্ছে পাবনা-৪, ঢাকা-৫, নওগাঁ-৬, সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮।