প্রশান্তি ডেক্স ॥ কদিন আগে হঠাৎ করে ঘোষণা ছাড়াই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তাই ব্যয়সায়ীরা পেঁয়াজের জন্য ভারতের বিকল্প খুঁজতে থাকেন।বিকল্প হিসেবে ব্যবসায়ীরা তুরস্ক, মিসর ও মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন। এরইমধ্যে ভারতের বিকল্প দেশগুলো থেকে পৌনে ছয় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে এসব পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন তারা। এত কম সময়ে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহে এটি রেকর্ড। আগামী মাসের শুরু থেকে এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর থেকেই এ মাসের শুরুতে ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া শুরু করেন। এ মাসের শুরু থেকে ভারত রপ্তানি বন্ধের দিন (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা দুই লাখ ২৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন। রপ্তানি বন্ধের পর রোববার পর্যন্ত চার কর্মদিবসে আরও সাড়ে তিন লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন তাঁরা। এ সপ্তাহেই আমদানি অনুমতির পরিমাণ ছয় লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পেঁয়াজের মতো কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রথমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে আমদানির অনুমতি নিতে হয়। এটি কৃষিপণ্য আমদানির প্রাথমিক ধাপ। এই অনুমতি নেওয়ার আগে ব্যবসায়ীরা রপ্তানিকারক দেশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেন। আর অনুমতি নেওয়ার পর ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা হয়। আমদানির অনুমতি নেওয়া হলেও সব পণ্য দেশে আসার নিশ্চয়তা নেই। জাহাজে পণ্য ওঠানোর পরই মূলত নিশ্চিত হওয়া যায় আমদানি পণ্য দেশে আসছে কি না। এরপরও আমদানির অনুমতি নেওয়া পেঁয়াজের সিংহভাগই দেশে আনা হবে এটি বলা যায়।
ঢাকার অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজহার আলী বলেন, যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে তা রেকর্ড। এই পেঁয়াজ আমদানি হলে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। কোনো সংকট থাকবে না।
ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন। ঋণপত্র খোলার পর এসব পেঁয়াজ কনটেইনারবাহী জাহাজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে করে সমুদ্রপথে আনা হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। বিকল্প দেশের বন্দরে জাহাজে বোঝাই করার পর পেঁয়াজ আমদানিতে দেশভেদে ন্যূনতম ১৫ থেকে এক মাস সময় লাগতে পারে বলে জাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এবার পেঁয়াজ আমদানিতে বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ছোট ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেশি। বড়দের মধ্যে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ গত রোববার নেদারল্যান্ডস থেকে এক চালানে ২২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহ করেছে। এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাহউদ্দিন আহাম্মদ বলেন, নেদারল্যান্ডস থেকে দ্রুততম সময়ে এই পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা চলছে। এটা মাত্র শুরু বলা যায়। পর্যায়ক্রমে আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে এখন যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ আছে, তাতে এ মাসে পেঁয়াজের আর সংকট হবে না। পেঁয়াজ সংকট শুরু হওয়ার আগে আগামী মাসের শুরুতে বন্দরে পৌঁছাতে শুরু করবে বিকল্প দেশের পেঁয়াজ। ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখলেও বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি হবে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।