বাংলা ভাষার জন্য দেশ ও জাতি

বাঙলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল এমনকি জীবন উৎসর্গ করেছিল ভাষা সৈনিকগণ এবং দেশের আপামর জনতা। সেই ত্যাগ থেকেই জন্ম হলো নতুন চাহিদার এবং সেই চাহিদার যোগানেই বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও সাহসী, সুপরিকল্পিত দূরদর্শী নেতৃত্বের ছায়াতলে একত্রিত হলো এবং দেশ স্বাধীন করে বীর বাঙালী ঘরে ফিরল। সেই থেকেই বাংলা+বাঙালী+বাংলাদেশ যোগসূত্র স্থাপীত হলো। সেইখানে আবার বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একসূত্রে গেঁথে বিশ্ব মানচিত্রে বীরদর্পে স্থান করে নিল প্রীয় বাংলাদেশ। বাংলা বিহীন বাঙালী হয় না এবং বাংগালী বিহীন বাংলার অস্তিত্বও নেই আর এই দুইয়ের সমন্বয়েই আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে স্বসম্মানে আগামীর সুউচ্চ গন্তর্বে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুহিন বাংলাদেশ দেশ যেমন কল্পনা করা যায় না তেমনি বাংলা বিহীন বাংলাদেশকে ভাবা যায় না। তাই বঙ্গবন্ধু তার সকল কর্মকান্ড বাংলায় চালিয়েছিলেন। সেখান থেকেই আমাদের শিক্ষার যাত্রা হওয়া উচিত।
বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা আর এই মর্তৃভাষার লড়ায়ে বিজীত হয়ে বাংলাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের সফলতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমনকি জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবেও স্বীকৃতি লাভ করে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় দেয়া বঙ্গবন্দুর সেই ৭ই মার্চের রেইসকোর্স ময়দানের কালজয়ী অগ্নিঝড়া ভাষন বিশ্বের প্রথমসারির ভাষণে স্থান করে নিয়েছে। বাংলা ভাষায় কি নেই। পোড়া মাটির সোধা গন্ধ থেকে শুরু করে সকল অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করার সমুজ্জ্বল বাস্তব ইতিহাস সম্বৃদ্ধ রয়েছে এই ভাষায়। তবে বাংলা ও বাঙালীতে নেই কোন আত্মঅহমিকার দ্বন্ধ আছে শুধু অবিশ্বাস আর সন্ধেহের পোড়া গন্ধ। তাই আমাদের যেসকল অসামঞ্জতা এখনও বিরাজমান তার সবই বিসর্জন দেয়ার উর্বর সময় এখন। করোনা আমাদেরকে শিখিয়েছে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয় এবং উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল সম্পূর্ণরূপে না মিলালেও বাংলার উর্বর শক্তি ও মস্তিষ্কের বিকিরণে নিজস্ব ব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে বিশ্বকে শিখিয়েছে বিপদ মোকাবেলার নতুন এক অভিজ্ঞতার। তবে মনোবল এবং সাহস ও ধৈয্য এবং শয্যশক্তির ফলও কম নয় এই ক্ষেত্রে।
বাংলা এবং বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করার অনেক অর্জন রয়েছে কিন্তু দু:খ করারও অনেক বিসর্জন ভাসমান রয়েছে। আজ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে মনের যন্ত্রণা নিবারণ করে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দৃষ্টিগোচর করতে চেষ্টা করব। অত্যন্ত দু:খের বিষয় হলো আমাদের দেশের ঔষধ কোম্পানীর ঔষধ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্চে কিন্তু ওষধের গায়ে নাম ও বর্ণনায় বাংলার কোন অস্তিত্ব নেই, শুধু ইংরেজী লিখায় জয়জয়সকার। এই কি ছিল আমাদের প্রাপ্য। পৃথিবীর সব দেশের পন্যের ক্ষেত্রে নিজ দেশের ভাষা প্রাধান্য পায় তারপর অন্য দেশের ভাষায় লিখা হয়; তবে এই ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইংরেজীই প্রাধান্য পায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাংলার বদলে শুধু ইংরেজীই কাম্য? মেইড ইন বাংলাদেশ লিখতে কি লজ্জা হয়? বাংলায় লিখে পাশাপাশি ইংরেজী লিখতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়। দয়া করে পন্যের গায়ে নাম বাংলা এবং ইংরেজীতে লিখা হউক পাশাপাশি বর্ণনা বাংলা এবং ইংরেজিতে লিখার ব্যবস্থা করা হউক এবং বাংলাকে সর্বাঙ্গে রেখে সম্মান করা হউক। বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা, বাংগালীর অহংকার, বিশ্বে ময়ের ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া জাতি আমরাই এবং এই ভাষা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত ও জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবেও স্বীকৃত। কেন এত অবহেলা এই ভাষার ক্ষেত্রে এবং কেন এত লজ্বা এই ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে। পৃথিবীর ভিভিন্ন দেশের মানুষ এখন বাংলাকে শিখতে ও জানতে আগ্রহ নিয়ে এদেশে এসে ভাষা শিখছে এমনকি বাংলার উপর উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছে আর আমরা আজ বাংলাকে বিজর্সন দিচ্ছি। সকলেই এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে উপযুক্ত সম্মানটুকু প্রদর্শন করবেন এই আশা ও বিশ্বাস এবং দাবিটুকু সবিনয়ে রাখছি।
খুন ও ধর্ষণ এর মহড়া যেন থামছেই না বরং এর মাত্রাকে করোনা নামক এন্টিবায়োটিক যেন উষ্কিয়ে দিচ্ছে। তবে এর মূলে কুঠারাঘাত করতে না পারলে আগামীর বাংলাদেশ লজ্জায় মাথা নত করে সকল অর্জনকে বিসর্জনে পরিণত করে বাকরুদ্ধ হতে বাধ্য হবে। সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো জাগ্রত করে সকল নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবন্ধ প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। কোন বিরোধ থাকলে চলবে না এমনকি শুধু বিচারের আওতায় আনলেই হবে না বরং এর পিছনের কারনগুলো উদঘাটন করে এর প্রতিকারে সামাজিক দায়িত্ব, পারিবারিক দায়িত্ব ও শিক্ষা এবং ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। এই ঘৃণ্য কাজটি নাবালক, সাবালক থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা পর্যন্ত ঘটিয়ে যাচ্ছে; শুধু কি তাই এখানে যারা সমাজ ঘরার কারিঘর তারাওতো জড়িত; আরো লজ্জ¦ার বিষয় হলো ইমাম/ আলেম, শিক্ষক, ফাদার থেকে শুরু করে সকল আশ্রয়ের জায়গাগুলোতেও আজ এই ব্যধি মহামারি রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। তাই করনীয়তে কাজ করার জন্য সকলের দৃষ্টিনিবন্ধ করছি।
নেশা একটি ব্যাধি আর এই ব্যাধিতে এখন সমাজ ভাসছে। কোন প্রতিরোধ বা প্রতিকার এর ব্যবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে না বরং আক্রান্ত ব্যক্তিরা সংখ্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ছোবলে উর্বর ভবিষ্যতের দ্বার অবরুদ্ধ হচ্ছে। সকল বয়সের ব্যক্তিরাই এই আসক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। কি করে এই ছোবল থেকে পরিবার, সমাজ ও সর্বোপরি দেশ মাকে রক্ষা করা যায় সেই দিকে আরো মনোযোগ দিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এই ক্ষেত্রেও পারিবারিক সৌহাদ্য এবং ইতিবাচক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রয়োগ চর্চায় মনোযোগ দিতে হবে। সেই সাথে সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় দায়িত্বটুকু পালনের ইতিবাচক চর্চার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। তাইলে হয়ত আগামীর সমুজ্জ্বল ভবিষ্যতকে নিয়ে আরো অনেকদুর এগিয়ে যাওয়া যাবে। এই বিষয়ে সকলের দৃষ্টি ও আশু পদক্ষেপ কামনা করছি।
বাংলা ও বাঙালীকে নিয়ে আরো অনেক দুর এগিয়ে যাওয়া এমনকি প্রীয় দেশ মার্তৃকার তরে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সকল প্রতিবন্ধকতাকে দূর করতে একযোগে কাজ করুন। বাংলা ও বাংলাদেশকে সম্মানের সু-উচ্চ আসনে আসীন করার স্ব স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.