দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে বাংলাদেশে

প্রশান্তি ডেক্স ॥ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই শিশুবিয়ের (বাল্যবিবাহের) প্রচলন সবচেয়ে বেশি এবং এক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যেও রয়েছে বাংলাদেশ। এদেশে এখনও ৫১ শতাংশ নারীর (১৮ বছরের আগে) বাল্যবিবাহ হয়। তবে বাল্যবিবাহের প্রবণতা এখানে পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় কমেছে। বাল্যবিবাহের হার ১৯৭০ সালে ৯০ শতাংশেরও বেশি ছিল, তা বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। ইউনিসেফের ‘এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ : আ প্রোফাইল অব প্রোগ্রেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে শিশুবিয়ে বন্ধে পদক্ষেপ জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইউনিসেফের ওই প্রতিবেদনে ১৯৭০ সাল থেকে সারাদেশে শিশুবিয়ের যে প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে তা এই প্রতিবেদনটিতে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, দেশের পুরো জনসংখ্যার মধ্যে ৩ কোটি ৮০ লাখ নারীর বাল্যবিবাহ (১৮ বছরের আগে বিয়ে) হয়েছে। এদের মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের আগে। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বাল্যবিবাহের শিকার শিশুদের বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের ও গ্রামে বাস করে। বাল্যবিয়ের শিকার মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অবিবাহিত মেয়ে শিক্ষার্থীদের তুলনায় ৪ গুণ বেশি। বিবাহিত প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রতি পাঁচজন ১৮ বছরের আগে ও প্রতি ৮ জন ২০ বছরের আগে সন্তান জন্ম দেয়।

বাল্যবিবাহ কমানোর অগ্রগতি উচ্চবিত্ত ও ধনী শ্রেণীর মধ্যে বেশি বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ, এখানে ৯০ লাখ নারীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, এই জেলায় বাল্যবিবাহের হার ৭৩ শতাংশ। বাল্যবিবাহ সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম জেলায় যা ৩৯ শতাংশ।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, নারীদের বাল্যবিবাহের হার বেশির হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরেই নেপালের অবস্থান। দেশটিতে বাল্যবিবাহের হার ৪০ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান (২৮ শতাংশ)। এরপর যথাক্রমে ভারতে ২৭ শতাংশ, ভুটানে ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৮ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১০ শতাংশ এবং মালদ্বীপে বাল্যবিবাহের হার ২ শতাংশ।

বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় প্রথমে রয়েছে নাইজার। দেশটিতে নারীদের বাল্যবিবাহের হার ৭৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে বাল্যবিবাহের হার ৬৮ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে চাদ, ৬৭ শতাংশ। চুতর্থ স্থানে মালি, ৫৪ শতাংশ। পঞ্চম স্থানে মোজাম্বিক, ৫৩ শতাংশ। ষষ্ঠ স্থানে বুর্কিনা ফাসো, ৫২ শতাংশ। সপ্তম স্থানে দক্ষিণ সুদান, ৫২ শতাংশ। অষ্টম রয়েছে বাংলাদেশ, ৫১ শতাংশ। নবম স্থানে, গুয়েনা ৪৭ শতাংশ এবং দশম স্থানে রয়েছে সোমালিয়া, ৪৫ শতাংশ।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা গতকাল ইউনিসেফ আয়োজিত ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ‘এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ : আ প্রোফাইল অব প্রোগ্রেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, নারী ও শিশুর উন্নয়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়ালি প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ইউনিসেফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার ড. ক্লডিয়া কাপ্পা। বাংলাদেশ থেকে যোগ দেন ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ ভেরা মেনডোস্কা ওআইসি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, অতিরিক্ত সচিব ফরিদা পারভীন, অতিরিক্ত সচিব ড. মহিউদ্দীন আহমেদ, যুগ্মসচিব মো. মুহিবুজ্জামান ও প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন।

ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ ভেরা মেনডোস্কা বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে বাংলাদেশ যথেষ্ঠ উন্নতি করেছে। বাল্যবিয়ে শুধু মেয়ে ও তার পরিবারের জন্য ক্ষতিকর নয়, এটা দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার জন্যও ক্ষতিকর।

প্রসঙ্গত, ‘জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)’ জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা। এটি বিশ্বব্যাপী শিশুদের উন্নতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.