জিপিএ-৫ উন্মাদনা সুখকর নয়…শিক্ষামন্ত্রী

প্রশান্তি ডেক্স ॥ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, জিপিএ-৫ নিয়ে উন্মাদনা শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের উপরে যে সামাজিক-পারিবারিক চাপ তৈরি করে সেটি শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক স্বাস্থ্যের জন্যও সুখকর নয় গত  বুধবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড প্রদান এবং ২০২০-২০২১ বছরের নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিটি যেন এই ধরনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে সেজন্য মনোযোগ দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, পরীক্ষা মানেই একটা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, একটা বোঝা। সেটি শুধু শিক্ষার্থীর জন্য নয়, তাদের অভিভাবকদের জন্য, সবার জন্য, পুরো সিস্টেমের জন্য। তার সঙ্গে একটা সনদ সর্বস্ব ব্যাপার আছে- একটা সার্টিফিকেট পেতে হবে। কিন্তু সেই সার্টিফিকেটের সঙ্গে, একটা কাগজের সঙ্গে আর কী পাচ্ছি? কী দক্ষতা যোগ্যতা পাচ্ছি কিনা?

মন্ত্রী বলেন, শিক্ষাটা কেমন যেন একটা নিরানন্দ ব্যাপার হয়ে গেছে। মনে হয় শিক্ষা মানেই একটা খুব কঠিন ব্যাপার। এরমধ্যে আমার মনে হয় আনন্দের আর কোনো জায়গা নাই। সারাদিন শিক্ষার্থী পড়ছে, তারপরে গৃহশিক্ষক, কোচিং সেন্টার, পরীক্ষার চাপ…। তাহলে খেলাধুলা করবার, সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবার, পারিবারিক পরিসরে আনন্দময় পরিবেশ কোথায়? আমার কিন্তু সবগুলোই লাগবে একজন ভারসম্যপূর্ণ মানুষ হিসেবে।

ফাইল ছবি

দীপু মনি বলেন, কাজেই আমরা আমাদের শিক্ষাকে আনন্দময় করতে চাই। শিক্ষার্থীর উপরে অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা সামাজিক চাপও কিন্তু আমাদের আছে। এই যে একটা জিপিএ-৫ নিয়ে উন্মাদনা এবং তা যে সামাজিক-পারিবারিক চাপ একটা তৈরি করে শিক্ষার্থী-পরিবারের উপরে, সেটি কিন্তু আমি মোটেই মনে করি না শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এবং সামাজিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব সুখকর। কাজেই মূল্যায়ন পদ্ধতিটি যেন এই ধরনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে আমরা সেই বিষয়টিতে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করছি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের জ্ঞানার্জনের উৎস শুধুমাত্র যেন বই না হয়, বই আমাদের শুধু সহযোগিতা করবে। এর বাইরে অনেক কিছু পড়ে শেখা, অ্যাকটিভিটি বেইজড সেটি খুব জরুরি। বাস্তবতার সঙ্গে দেখে শিখে পড়া, বাস্তবের সঙ্গে যেন সম্পৃক্ততা বেশি হয়। বিজ্ঞান শিক্ষায় টুল কিটস আনতে পারি কিনা সেদিকে আমরা মনোযোগী হবো।

শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষকের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং তাদের সম্মানজনক জীবন নিশ্চত করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি যখন আমরা নিশ্চিত করতে পারবো তখন কিন্তু আমাদের সত্যিকারের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো। এসব লক্ষ্য অর্জনে শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, শিক্ষায় যত অগ্রগতি তার সবকিছু বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা করে যাচ্ছেন। শুধু শিক্ষায় নয়, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পসহ অন্য খাতগুলোতেও আমরা সাফল্য দেখতে পাই।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে সব পর্যায়ের শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলেছি। শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনছি। শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ খুব জরুরি, আমরা সে বিষয়েও কাজ করছি। একই সঙ্গে লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার করছি। করোনাকালে অনলাইন এডুকেশন শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে, করোনা পরবর্তীতেও আমাদের অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম অংশ থাকবে। এর থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই।

অনুষ্ঠানে ইরাবের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম সুমনের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ দপ্তর পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.