নির্ভেজাল ভেজাল

ভেজালের রাজ্যে এখন ভেজালও নির্ভেজালে পরিনত হয়েছে। আমরা যতই সচেতন হই এবং যতই আইন ও বিচার সংস্কৃতির চর্চা বিরাজমান রাখি; ভেজাল কিন্তু ততই নির্ভেজালস্বরূপ স্বঅবস্থানে আসীন থেকে সমাজ, সংস্কৃতি এবং বিবেককে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। উৎপাদনে ভেজাল, ব্যবসাতে ভেজাল, সংস্কৃতিতে ভেজাল, শিক্ষাতে ভেজাল, কর্মক্ষেত্রে ভেজাল, আলাপচারিতায় ভেজাল, রাজনীতিতে ভেজাল যেন যুগের চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেজালকে মর্ডান আদর্শ হিসেবে আঁকড়ে ধরে মানব সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। যা আমার অভিজ্ঞতা এবং বাস্তবতার নিরীখে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা। তবে এই ভেজাল মুক্তকরণেও ভেজাল পরিলক্ষিত হচ্ছে। যারা ভেজাল বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন তাদের সৎ ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভেজালে জড়িয়ে মহৎ উদ্যোগ ও উদ্দেশ্যকে ভুলুন্টিত করে যাচ্ছেই যাচ্ছে।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিতে যে ভেজাল আসন গেড়েছেন তা দুরীভূত করার কোন পক্রিয়ায়ই যেন আজ কাজে লাগছেনা। মিটার চালু প্রথায় কিছুটা ভেজালের তোড়জোর কমলেও নতুন পদ্ধতিতে আবার ভেজাল আসন পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে। পানির অপর নাম জীবন হলেও এটি এখন ভেজালে ছয়লাভ। তবে এতে কারা কারা জড়িত, তারা কি মানুষ? হ্যা এরা মানুষ এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নেয়া উচু ও নিচু মানের কীট পতঙ্গরূপী বিলাসী- অভিলাসী মানুষসকল। যারা এখানে যুক্ত তাদের মৃত্যুভয়, কিয়ামত বা শেষ বিচারের ভয় বলে কিছুই নেই। মনে হয় পৃতিবীতেই যেন সবকিছু এবং পৃবিথীর রাজত্বই যেন শেষ। তবে পৃথিবীর বাস্তব উদাহরণগুলো তাদের কাছে হাস্যকর।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও ভেজালের ছাড়াছড়ি। সবাই মিলে ভেজালকেই যেন এখন প্রতিষ্ঠিত করার লড়াইয়ে ব্যস্ত। ভেজাল যেন পৃথিবীর নতুন এক ভীত। তাই এই ভেজালকে এখন জঞ্জাল না ভেবে আশির্বাদ ভাবা শুরু করেছে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও বিশ্ব পরিমন্ডল। তাই নিত্যপন্যের বাজারে এখন ভেজালাগুন নি:স্বরণ হচ্ছে। আর এতে সাধারণ জনগণ জলে-পুড়ে ছাই হয়ে ভষ্মিভূত হচ্ছে। তবে এতে কতিপয় ভেজাললিপ্সু মানুষ যারা একে সমাজে স্বীকৃতি দিতে মড়িয়া, তারা উপকারের ফায়দা হাছিল করে যাচ্ছে। চোখ, কান, নাক, বিবেক সবই আছে শুধু নেই এর ইতিবাচক প্রয়োগ। নেতিবাচক প্রয়োগে যেন আজ আমাদের নাভিশ্বাস।
“একটি মানুষও না খেয়ে থাকবেনা” মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর এই উক্তিকে বাস্তবায়ন করতে হলে ভেজালকে দূর করতে হবে। ভেজালরূপী মানুষগুলোকে নির্ভেজাল করে কাজে লাগাতে হবে। নতুন এই উক্তির যথার্থতা ভূলুন্ঠিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়কে কাজে লাগাতে যারা আজ মরিয়া তাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে এমনকি চোখ কান খোলা রেখে সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলার জন্য মানুষিক প্রস্তুতি নিতে হবে এমনকি জীবনের কঠিন সায়াহ্নে এসে দাঁড়িয়ে মনোবল দৃঢ় রেখে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
ভূরাজনীতি এখন বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাড়াতে যাচ্ছে। কারন উন্নত দেশগুলো চাইবেই আমাদেরকে ব্যবহার করে তাদের ফায়দা হাসিল করতে। তাই ভারত-চীন তথা এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোকে বিসর্জন দিয়ে প্রাচ্যের লোভী সুচতুর রাষ্ট্রের ফাঁদে পা না দিতে সবিনয় অনুরোধ। তবে আমাদের যা আছে তাই পৃথিবীর কারো নেই তবে একে ব্যবহারের ক্ষমতা আমাদের ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সঠিক ব্যবহারের যে চর্চা চালু রয়েছে তার অব্যাহত অগ্রসরতা ধরে রাখতে হবে। মেধার ফল ও চিন্তার ফল যোগ করে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তায় কাটা অপসারণ করতে হবে এবং সেই কাটা অপাসরণই নয় বরং এর মুলোৎপাটন করে ছন্দময় গতিময়তা বিরাজমান রাখতে হবে। নুতন ও আগামীর কলাকৌশলে অগ্রগামী হতে হবে। চিন্তা ও কাজের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই তাই সমন্বয়কে প্রধান্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে নতুন কার্যকরী কৌশল অবলম্বন করে এগিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গাদের বেকার ও অলস বসিয়ে না খাইয়ে বরং উপযুক্ত কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় আনতে হবে। যাতে করে তারা কাজ করে খায় এবং এই দেশের অর্থনীতির আশির্বাদ হয়ে বিদেশী কর্মী হয়ে নিজেদের গর্বের জায়গায় বসাতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। নির্ধারিত স্থানে কাজ ও বিচরন এমনকি দেশীয় আইন-কানুনের আওতায় রেখে শৃঙ্খলিত জীবনের স্বাদ আস্বাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে মিয়ানমার তথা বিশ্ব তাকিয়ে থাকে যে, সম্পদ ও জনস্রোত অভিষাপ নয় বরং আশির্বাদ। আর এই আশির্বাদের ছোয়ায় তারা তাদের জন-মানব সম্পদকে কাজে লাগানোর তাগিদে ফিরিয়ে নেয়া এমনকি বিশ্বকে নতুন দিশা দেখানোর স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।
ন্যায়বিচার একটি স্বীকৃত অধিকার; আর এই অধিকার আদায়ে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। সরকার, রাষ্ট্রই শুধু দায়িত্ব নিয়ে ব্যবস্থা করবে তা নয় বরং স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রতিটি সুনাগরিকই এতে অংশগ্রহন করে নিশ্চিত করতে হবে। আইন আদালত, বিবেক সবই একযোগে কাজ করাতে হবে। কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা নয়, বরং সবারই সমান গুরুত্ব ভেবে কাজের গতিশীলতা আনয়ন করতে হবে। তবে এতে ধর্মীয় মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো অতিব জরুরী। নতুবা এর পূর্নতা বা সুফল পাওয়া কষ্টকর হবে। সাহস নিয়ে চলতে পারার একটি হাতিয়ারও হলো ঐসকল বিষয়গুলো। বিবেক পরিস্কার এবং উদ্দেশ্য মহৎ হলে কোন ভয়ের কারন নেই বরং সাহসের সঙ্গেই পথচলা বা এগিয়ে যাওয়া যায়।
যেসকল ভেজাল নিয়ে আলোচনা হলো তা কিন্তু সবারই জানা এবং সবাই কম-বেশী এর সঙ্গে পরিচিত আবার কখনো কখনো জড়িত। তাই সকলের নিকট সবিনয় আবেদন এই নির্ভেজাল ভেজাল থেকে আগে নিজেকে রক্ষা করুন। নিজেকে রক্ষায় সচেষ্ট থাকুন এমনকি অন্যকে রক্ষায় স্বউদ্যোগে দায়িত্ব পালন করুন। সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে সর্বান্তকরণে সহায়তা করুন। নির্ভেজাল ভেজালকে সমাজ থেকে বিতারিত করুন। শান্তি, আনন্দ, নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার বেড়াজালে বা চাদরে নিজেকে এবং অন্যকে জড়ানোর কাজ সম্পন্ন করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.