ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিনাউটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের ভবন নির্মানে অনিয়ম ও
নিম্মমানের সামগ্রী ব্যাবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। নিম্মমানের
সামগ্রী ব্যবহারের স্থানীয়রা বাধা দিলেও তা মানছেনা নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এ বিষয়ে
স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ দিলে নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের সত্যতা পান। কাজের মান পরীক্ষা না করা পর্যন্ত
নির্মান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দেয়া হয়েছে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করতে
আশির দশকে এই পরিবার কল্যান কেন্দ্রটি নির্মান করা হলেও ভবন ভগ্নদশার কারনে মাঝখানে প্রায় এক
যুগ বন্ধ থাকে এই কেন্দ্রটি। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে চলতি বছরে শুরুতে
স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যায়ে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের
নির্মান কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিএম কন্সট্রাকশন। প্রথমদিকে সীমানা দেয়াল র্নিমান করার পর
কিছুদিন বন্ধ থাকে কাজ। পরে গত জুন মাসে শুরু করে পরিবার কল্যান কেন্দ্রের ভবন নির্মানের কাজ। শুরু
থেকেই নিম্মমানের রড, সিমেন্ট, ইট, বালু ও সুরকী ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ তুলে আসছিলেন স্থানীয়
লোকজন। সিডিউল মোতাবেক কোনো কাজই করছিলোনা এমন অভিযোগও রয়েছে নির্মানকারী
প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। নির্মান কাজে ভিটি বালু (সাদা বালু) ব্যবহার করা সহ রাতের বেলা ছাদ এবং
পিলার ঢালাই করা হয়েছে বলে দাবী স্থানীয়দের। স্থানীয়দের বাধায় কোন কর্নপাতই করেননি নির্মানকারী
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও তার লোকজন। ধীরে ধীরে জনরোষ তৈরি হয় স্থানীয়দের মাঝে এবং কাজ বন্ধ রাখতে
বলেন সংশ্লিষ্টদের। যে কোনো সময় ভবন ধসে পড়ে প্রানহানীর আশংকা করছেন স্থানীয়রা। পরে স্থানীয়রা
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ দিলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ
নিতে বলেন তিনি। তারই প্রেক্ষিতে কাজের সাইড ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ চন্দ্র কাজ দেখতে এসে অনেক
অনিয়ম দেখতে পান তিনি। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী
অফিসার মাসুদ উল আলম। খুঁজে পান নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের সত্যতা। কাজের মান পরীক্ষা না
হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ।
স্থানীয় বাচ্চু ভ’ইয়া,আবু হানিফ ভ’ইয়া, জাকির হোসেন, আলমগীর হোসেন জানান, কাজের
শুরুতে ঠিকাদার সহ সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে যে এখানে কেউ কোন প্রকার বিরক্ত করবেনা। আপনারা
আমাদের এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরিতে কোন অনিয়ম করবেন না। কিন্তু এই পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে সবই
নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। তারা অধিকাংশ সময়ই রাতের বেলায় বাতি জালিয়ে করতে
দেখেছি আমরা। তারা যখন কোন বাধাই মানছিলো তখন জনগন সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়ে
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দেয়া হয়। এলাকাবাসীর দাবী নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের
মাধ্যমে যেটুকু কাজ হয়েছে তার ভেংগে ফেলে পুনরায় নুতন করে ভাল মানের সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি
করা হোক এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রটি ।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যন মো.ইকবাল হোসেন ও আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল হোসেন বলেন;
সিডিউল মোতাবেক কোনো কাজই করেননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। শুরু থেকেই নিম্মমানের
সামগ্রী ব্যবহারে বাধা দেয়া হয়েছিলো। তারা বাধা উপেক্ষা করেই কাজ করছিলো।
নির্মানকাজে নিম্মমানের সামগ্রী কিছুটা ব্যবহার হয়েছে বলে স্বীকার করেন কাজের
তদারকির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার মো.পারভেজ ও ম্যানেজার আতাউর রহমান। কাজ নিম্মমানের হয়ে থাকলে
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পুনরায় নতুন করে আবার কাজ করবেন বলেও জানানা তারা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম বলেন, সরকারী কাজে কোন অবস্থাতেই নিম্মমানের
সামগ্রী ব্যবহার করা যাবেনা । সিডিউল মোতাবেক কাজ করতে হবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।
নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি তিনি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে
আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান ।