নিরপরাধ জেল

বিনাদোষে জেল একটি নিত্যদিনের ঘটনা। আর এই ঘটনার জন্য আমাদের দেশের নিরাপরাধ ও নিরিহ মানুষগুলো ধুকে ধুকে মরছে আর আধিকার নামক স্বপ্নছোয়া অদেখা ও অজানা আকাঙ্খাগুলি অনাজানাই থাকছে এমনকি ঐ কথিত অধিকার নামক অদৃশ্য বস্তুটি নিরন্তর মাথানত করে কাতরাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে শক্তের ভক্ত নরমের যম এই স্লোগানটি সাফল্য পেয়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে বৈকি। কিছুদিন পর পর আবিস্কৃতি হচ্ছে নানান ধরণের অজানা কাহিনীর; এমনকি এর প্রেক্ষাপট। তবেকি ঐ প্রেক্ষাপটগুলোর অবসানকল্পে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে অথবা কঠোর দৃষ্টান্তের কোন অবলোকন হচ্ছে যা দেখে আগামীর প্রজন্ম, আইন, আদালত এমনকি বিচার সংশ্লিষ্ট সকলে সচেতন ও সজাগ থেকে কাজ করবে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই বিষয়টি একটি মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং একে দেখার যেন কেউ নেই। আন্দোলনে অধিকার যদিও আদায় হয়নি তথাপি আন্দোলন হচ্ছে এবং হবে তবে এই নিরাপরাধ জেল বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনতো দুরের কথা কথা বলারও যেন কেউ নেই। কারন এই বিষয়টি মানুষের দৃষ্টি এমনকি বিবেক কে নাড়া দিতে পারেনি। এই নিরাপরাধ জেল কি মৃত্যুর মত বিভিষীকাময় নয়! এতে কি একটি জীবনের সমাপ্তি ঘটে না? স্বপ্ন ও আকাঙ্খার মৃত্যু ঘটে না? সবইতো সমান : যখন মৃত্যু হয় তখন তার জীবনের সকল কিছুরই মত্যৃ ঘটে আর যখন জেলবাস হয় তখনতো স্বাভাবিক এমনকি অস্বাভাবিক কিছুই ঘটে না বরং মৃত্যু প্রাণীর ন্যায় বদ্দ ঘরে অবস্থান কুরে কুড়ে কুড়ে মৃত্যুর স্বাধ আস্বাধন করা হয়। মুত্যুর পরের যন্ত্রণাও মুত্যুপুর্বেই ভোগ করা হয়। দুই যন্ত্রণার দহনে দহনে সবই শেষ হয়। তাই বিনা অপরাধে যাবৎজীবন, মেয়াদান্ডে এমনকি অল্পদিনের জেলবাসের জন্য যারা দায়ী তাদেরকে কি খুজে বের করে দায়ী হিসেবে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে নাকি দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে?
কিভাবে এই ভুলগুলি হচ্ছে, তার পিছনে কে বা কারা জড়িত, কিসের জন্য জড়িত এবং এর নেপথ্যে কি কারন রয়েছে সবই দেখার জন্য কি কেউ নেই? বিচার, আইন, আদালত, রায় পর্যন্ত পৌছার আগেই সব শেষ হয়ে যায়; তাই সাজানো, অর্থের লোভ, ক্ষমতার জোর এমনকি পুর্বশত্রুতার জোরেই কি ঘটানো হচ্ছে এই অমানবিক নির্দোষ জেল। বিচারকের কাছে যে সকল কাগজ আসে সেই কাগজই যে বিচারের মুখ্য ও আলোচ্য বিষয় তা কিন্তু নয় তারপরও ঐ কাগজের মিথ্যার উপর ভর করেই সাজানো হয় নিরপরাধ জেলের মত জঘন্য কাজটুকু। তবে সবসময়ই যে এর স্বীকার হবে এমনকি প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হবে তা কিন্তু নয় বরং মাঝে মাঝে এর ভিতকে কাপিয়ে তুলে কিছু কিছু লোমহর্ষক বিবর্ণ ঘটনা।
আইন আদালত ও বিচার ব্যবস্থার সাথে জড়িতদের যেমন সাফল্য রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে এর ব্যর্থতাও। তাই ব্যর্থতা ঘোচানোর সময় এখনই। আর প্রকৃত ঘটনার স্বীকার হওয়াদের হারানো জীবন স্বপ্ন ও আকাঙ্খাকে ফিরিয়ে দেয়ার তরে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়া হউক। যাতে আগামীতে আর ব্যর্থতা দৃষ্টিগোচর না হয়। সফলতাই একচেটিয়া প্রধান্য বিস্তার লাভ করে। নিরপরাধ সাজা ভোগের পরে যেন টনক না নড়ে সেই ব্যবস্থা আশু গ্রহনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হউক।
আরেকটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ যে, মামলা হওয়ার সাথে সাথে ওয়ারেন্ট এবং এরেষ্ট ও জেলবাস বা কাষ্টডি এমনকি বন্দি করে রাখা। এই বিষয়গুলো ভাবার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি। যেহেতু মামলা হওয়ার সাথে সাথেই বন্দী করা হয় এমনকি আবার যাবিন দিয়ে মুক্ত করা হয় তাহলে কেন এই বন্দি? কি লাভ এই বন্দিতে? বিচার চলাকালীন কোন গুরুতর অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে তা বন্দি হিসেবে জেলবাস যুক্তিযুক্ত। যদি কোন ঘটনারই উদ্বব হয়নি এমনকি হবেও না সেইক্ষেত্রে এই বন্দি জেলবাস বন্ধ করা উচিত। তবে মামলার মেরিট বা গুরুত্বানুযায়ী এই বন্দি ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে যেখানে যাবিন নামক শব্দটির কার্যরত রয়েছে সেখানে বন্দি নামক জেলবাস গুরুত্বহীন হয়েছে? মাঝখানে অর্থ, সময় এবং মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ব বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া আর কি? তবে এতে অনৈতিকতার জোয়ারে সয়লাভ হওয়ার মোক্ষম সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছেই বৈকি। এই বিষয়গুলো আমাদের ভাবা ও দেখা এমনকি উপযুক্ত আইনের বিশ্লেষণাত্মক ব্যবহার প্রযোজ্য। যোগপযোগী আইন প্রনয়ন এখন সময়ের দাবি। বন্দি ও মুক্তি খেলার অবসান হউক। নিরপরাধ ব্যক্তির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না হউক। অপরাধী প্রমান হওয়ার আগে কোনভাবেই বন্দি হিসেবে জেলবাস কাম্য নয়।
পুলিশ জনগণের বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তারা যেন ঐ কর্মচারীর ভূমিকায় থেকেই সেবার মহৎ দায়িত্বটুকু পালন করেন এই বিষয়ে জ্ঞানের আলোকে বাস্তবধর্মী প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হউক। তাদের ঔদ্যত্ত্ব ও দানবীয় আচরণ এমনকি ক্ষমতার অপব্যবহারের সকল বিষয়গুলো রহিত করা হউক। লোভ-লালসার উদ্ধে উঠে সকল দায়িত্ব পালনে ভুমিকা রাখতে প্রস্তুত করা হউক। সততা ও ন্যায়পরায়নতা বিরাজমান রাখতে সকল ব্যবস্থা করা হউক। যা ঘটছে, যা দেখছি, যা শুনছি তার পুনরাবৃত্তি আর দেখতে, শুনতে এমনকি পড়তেও চাই না। তাই নিরপরাধ সাজা রোধকল্পে এখন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সবিনয় অনুরোধ করছি। খোদা বলেতো একটি কথা রয়েছে। শেষবিচার, মৃত্যু, কিয়ামত এর কথাতো আমাদের সকলেরই জানা। নবীদের কিতাব থেকে একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে শেষ করছি। এক রাজা তার সেনাপতিকে বিপদে সময়মত পরিশোধ করার শর্তে লোন (ধার) দিয়ে সহায়তা করেছিল। সেই সেনাপতি সময়মত পরিশোধ করতে না পেরে এমনকি বার বার সময় পার করে; শেষ মেষে ঐ রাজার কাছে কান্নাকাটি করে মিনতি করে লোন মাফ করার দরখাস্ত জানাল আর তখনই ঐ রাজা তাকে মাফ করে দিল। কিন্তু ঐ সেনাপতি তার অধিনস্ত সৈনিককে বিপদে কিছু টাকা ধার দিল আর সময়মত শোধ করতে না পারায় তাকে মারধোর করে বন্দি করল; যখন এই খবর রাজার কাছে ঁেপৗছল তখন রাজা আবার ঐ প্রধান সেনাপতিকে টানা পরিশোধ না করার এমনকি ঐ সৈনিককে সুযোগ না দেয়ার অথবা ক্ষমা না করার অপরাধে বন্দি করে শান্তি দিল। আমাদের সকলের জন্যই একজন বিচারক রয়েছেন; এই কথা ভেবে নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে সকল কিছু করি যাতে আর নিজের বিপদ নিজে ডেকে এনে সারাজীবন ঐ বন্দিদশায় থাকতে না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.