প্রশান্তি ডেক্স ॥ ২০১০ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করে সেতু বিভাগ। চালু হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। তবে কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু টাকার অভাবে সেই কাজও থেমে যায়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ পায় ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড। তবে শুরু থেকেই আর্থিক সংকটের কারণে প্রকল্পটিতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। একটা সময় তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলেরও উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে এক্সপ্রেসওয়েটির ৪৯ শতাংশ শেয়ার চীনের শ্যাংডং ইন্টারন্যাশনাল (৩৪ শতাংশ) ও সিনো-হাইড্রো করপোরেশনের (১৫ শতাংশ) কাছে বিক্রি করে দেয় ইতাল-থাই। এখন মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ নেয়া হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য সিংহভাগ টাকার সংস্থান চীনের এক্সিম ব্যাংক ও আইসিবিসি ব্যাংক থেকে করেছে ইতাল-থাই, শ্যাংডং ও সিনো-হাইড্রো। সব মিলিয়ে এ দুটি ব্যাংক থেকে ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আসায় অর্থ সংকট কেটে গেছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের এ অর্থ মোট ১২টি কিস্তিতে ছাড় হবে। প্রথম কিস্তি এরই মধ্যে ছাড় হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় হতে পারে চলতি মাসেই। এতে করে অর্থ সঙ্কট অনেকটাই কেটে গেছে। অথচ সে অনুযায়ী কাজে গতি আসছে না। যদিও প্রকল্প পরিচালক দাবি করেছেন, এখন সব সমস্যা কেটে গেছে। কাজে গতি এসেছে।
তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রথম ধাপে বিমানবন্দর-বনানী, দ্বিতীয় ধাপে বনানী-তেজগাঁও ও তৃতীয় ধাপে মগবাজার-কুতুবখালী অংশে কাজ হবে। বর্তমানে বিমানবন্দর-বনানী-তেজগাঁও অংশের কাজ চলছে। আর মগবাজার-কুতুবখালী অংশটির কাজ এখনো শুরুই হয়নি। এর আগে এক্সপ্রেসওয়েটির নকশা থেকে হাতিরঝিল ও সোনারগাঁও র্যাম্পও বাদ দেয়া হয়। নকশা অনুযায়ী, এফডিসির মোড় থেকে একটি র্যাম্প হাতিরঝিলে নেমে যাওয়ার কথা ছিল। পরে হাতিরঝিলের পানিতে র্যাম্পের পিলার স্থাপন নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে সেটি বাদ দেয়া হয়। একই মোড় থেকে আরেকটি র্যাম্প আসার কথা ছিল কারওয়ান বাজার মোড়ে। তবে সার্ক ফোয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিলে বাদ দেয়া হয় এ র্যাম্পও। এর আগে খামারবাড়ি মোড়েও একটি র্যাম্প নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে কাটছাঁট করে কোনো রকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় বদল ঘটেছে চার দফা।
প্রকল্পটির ধীরগতির জন্য এতদিন আর্থিক সংকটকে দায়ী করে আসছিল বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। যদিও নতুন দুই বিনিয়োগকারী যুক্ত হওয়ায় এখন আর টাকার কোনো সমস্যা নেই এ প্রকল্পে। তার পরও লক্ষ্যের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে নির্মাণকাজ। চলতি মাসে (অক্টোবর) অংশবিশেষ চালুর লক্ষ্য থাকলেও তা পিছিয়ে নেয়া হয়েছে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে টাকার সমস্যা মিটেছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তখন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, চলতি অক্টোবরের মধ্যেই এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর-বনানী অংশের কাজ শেষ করে তা গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। অক্টোবর শেষ হতে চললেও এ অংশের কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫৭ শতাংশ। ধীরগতির কারণে চলতি অক্টোবরের মধ্যে বিমানবন্দর-বনানী অংশ চালুর পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর এবার নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বছরের (২০২১) ডিসেম্বরের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী হয়ে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত অংশটি চালু করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন ধাপে বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রথম ধাপে বিমানবন্দর-বনানী, দ্বিতীয় ধাপে বনানী-তেজগাঁও ও তৃতীয় ধাপে মগবাজার-কুতুবখালী অংশে কাজ হবে। এর মধ্যে বিমানবন্দর-বনানী অংশটি চলতি অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা ছিল। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক এএইচএম শাখাওয়াত আকতার বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে চালুর জন্য নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র প্রয়োজন, যেখান থেকে এক্সপ্রেসওয়ের পুরো ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণ হবে। বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের জন্য একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। এটির কাজ কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র না থাকা ও নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর-বনানী অংশ এখন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম অংশ বিমানবন্দর-বনানী ও দ্বিতীয় অংশ বনানী-তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েটি চালু করা হবে। আর পুরো এক্সপ্রেসওয়েটির কাজ ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে যখন নতুন বিনিয়োগকারীরা যোগ দেয়, তখন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছিল ১৮ শতাংশ। পরের সাত মাসে প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক এএইচএম শাখাওয়াত আকতার বলেন, প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে সমস্যা ছিল, ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল, সেগুলো কাটিয়ে ওঠা গেছে। এখন অগ্রগতি ভালো।
প্রকল্প সূত্র জানায়, নতুন বিনিয়োগকারীরা এসে কাজের গতি বেড়েছে। বনানীতে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড তৈরি হয়েছে। বনানী-তেজগাঁও অংশেও কাজ শুরু হয়ে গেছে। করোনার কারণে প্রথমদিকে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সবার মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল। এখন আর সে ভয় নেই । এখন করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের কর্মীদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রাখার জন্য অনেকগুলো ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। আনুষঙ্গিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলোও গ্রহণ করা হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এতে মূল সড়ক হবে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। নকশায় সংস্থান রাখা আছে ৩১টি র্যাম্পের, যেগুলোর দৈর্ঘ্য আরো ২৭ কিলোমিটার। সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) তথ্যানুযায়ী, বাস্তবায়নের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১১টি টোলপ্লাজা, এর মধ্যে পাঁচটি হবে এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক কাজগুলো এগিয়ে নিতে ৪ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প (সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) বাস্তবায়ন করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।