বা আ ॥ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সক্ষমতা দেখিয়ে বাংলাদেশ টেকসই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বলে ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের একটি সূচকে উঠে এসেছে।
সাসটেইন্যাবল ট্রেড ইনডেক্স ২০২০ শিরোনামে এশিয়াভিত্তিক বাণিজ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনরিচ ফাউন্ডেশন অনুমোদিত ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) সম্প্রতি এই সূচকটি প্রকাশ করে।
তালিকায় টেকসই বাণিজ্যের সূচকে বাংলাদেশ ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৪৯ দশমিক ৩ পয়েন্ট নিয়ে গতবারের তুলনায় পাঁচ ধাপ এগিয়েছে। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। ৪৭ দশমিক ১ এবং ৪৩ দশমিক ৯ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশি দেশ ভারত ও পাকিস্তান।
লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিস্ট গ্রুপের গবেষণা শাখা হল দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজন্স ইউনিট (ইআইইউ) যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির নানা সূচকের ওপর র্যাংকিং প্রকাশ করে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার জন্য একটি দেশের সক্ষমতা পরিমাপ করে এই সূচকটি যা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক মূলধন বিকাশের দেশীয় ও বৈশ্বিক লক্ষ্যকে সমর্থন করে।
অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক তিনটি পিলারে ভাগ করে মোট ২৭টি ইন্ডিকেটর এবং ২০টি সাব-ইন্ডিকেটর এর উপর ভিত্তি করে সূচকটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নতি হয়েছে ‘সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট’ বা সামাজিক উন্নয়ন এর ক্ষেত্রে নবম অবস্থানে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সূচকে শীর্ষে আছে এবং রপ্তানি বাজার, স্থিতিশীল মূলধন গঠন এবং শ্রমশক্তি বৃদ্ধিতে বেশ ভাল করেছে।
বিগত ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল ভারত। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সামনে ছিল পাকিস্তান। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কা ৫০ দশমিক ৫ স্কোর নিয়ে নবম অবস্থানে রয়েছে।
এই সূচক অনুযায়ী, প্রথম স্থান দখল নিয়ে সমানে সমান এগিয়ে আছে এশিয়ার দুই প্রভাবশালী দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। দুটি দেশই ৭৬ দশমিক ১ পয়েন্ট স্কোর পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে।
ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের করা এই সূচকে টেকসই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশের এই উন্নতির সঙ্গে একমত পোষণ করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, সরকারের সহায়ক নীতির ওপর ভিত্তি করে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বরাবই টেকসই ছিল।”
উদাহরণ হিসেবে করোনাকালীন সময়ে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর মাধ্যমে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় থাকার কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, সব শিল্পকে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলিতে একত্রিত করে সাপ্লাই চেইনকে অনুকূলকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এই বিষয়টিও টেকসই বাণিজ্যে অবদান রাখছে বলে জানান শামস মাহমুদ।
পরিবেশগত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুর্বল অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার দূষণকারী কারখানাগুলিকে শাস্তি দেওয়ার মতো কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যা শিল্প দূষণ হ্রাস করতে সহায়তা করেছে।”
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি বিকশিত হলে পরিবেশের বিষয়ে আরও মনোনিবেশ করা হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের এই সভাপতি বলেন, ভারতের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে পরিবেশের যে কোনও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি।
সূচকটির বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “আমরা শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় আরও ভাল করছি। আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে শিশুশ্রম ও লিঙ্গ বৈষম্য কম রয়েছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও সামাজিক স্তম্ভের ক্ষেত্রে আটটি দেশের চেয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখার জন্য ভূমিকা পালন করছে।”
তিনি বলেন, “এখনও কিছু সূচকের উন্নতির অবকাশ রয়েছে যা আমাদের অর্থনৈতিক সূচকে শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।”
সূত্রঃ দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড