প্রশান্তি ডেক্স ॥ যশোরের মণিরামপুরে রাস্তার কাজের নামে অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের আওতায় চারবছর মেয়াদী রাস্তার কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কাশিমনগর ইউপির দুই নম্বর (কাশিমনগর) ওয়ার্ডের মেম্বার কবিরুজ্জামান কবির তার ওয়ার্ডের আকলিমা খাতুন ও রহিমা খাতুনের নিকট থেকে ২৩ হাজার ও ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। তিনবছর আগে মেম্বারকে টাকা দিয়েও কাজ পাননি তারা।
ভুক্তভোগী আকলিমা টাকা ফেরত পেতে মেম্বারের বিরুদ্ধে ইউএনও সৈয়দ জাকির হাসানের বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু আবেদন করেও টাকা ফেরত পাননি তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের আওতায় সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে ‘এলসিএস’ ও ‘আরইআরএমপি-৩’ দুই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে নারী কর্মী নিয়োগ দেয় ইউএনও অফিস। যেখানে প্রতি ওয়ার্ডের মেম্বরদের একজন করে নয়জন ও চেয়ারম্যানের সুপারিশে একজন মোট দশজন নিয়োগ পান। নিয়োগপ্রাপ্তরা মাসিক সাড়ে সাত হাজার টাকা পারিশ্রমিকে দুই-দুই করে চার বছর কাজের সুযোগ পান।
ইউপি মেম্বার কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একজনের সুপারিশের সুযোগ পেলেও তিনবছর আগে তার ওয়ার্ডের দুস্থ দুই নারীকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ৪৩ হাজার টাকা নিলেও কাজ দিয়েছেন অন্যনারীকে।
ভুক্তভোগী আকলিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, মেম্বর কবির দুই বছরের জন্য কাজ দেবে বলে তিনবছর আগে আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। ৭-৮ মাস আগে আমার বাড়ি এসে বলে, কাজের মেয়াদ চার বছর। আরো টাকা লাগবে। তখন আবার ১১ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে দেখি আমার পরিবর্তে অন্যনারীকে কাজ দিয়েছে। আমি টাকা ফেরত চাইতে গেলে সে উল্টোপাল্টা বলে। তাই টাকা ফেরত চেয়ে চলতি মাসের পাঁচ তারিখ ইউএনও অফিসে অভিযোগ করি। কিন্তু টাকা ফেরত পাইনি।
আকলিমা খাতুনের স্বামী সোহবার হোসেন পেশায় একজন ভ্যানচালক।
এদিকে ভুক্তভোগী অন্যজন রহিমা বেগম। যার স্বামী গত ২৫ বছর আগে মারা গেছে। তিনি বলেন, কাজ দেবে বলে কবির মেম্বার তিন বছর আগে ২০ হাজার টাকা নেছে। কাজ দিইনি। অনেক চাওয়ার পরে ৪-৫ মাস আগে পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেছে।
কিন্তু অন্যদিকে অভিযুক্ত কবির মেম্বার আকলিমা খাতুনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেলেও রহিমা খাতুনের টাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
মেম্বার জানান, কাজের বিনিময়ে না আকলিমার কাছ থেকে সুদের উপর দুই কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা নিয়েছি। চলতিমাসের ১৫ তারিখ ইউএনও অফিস থেকে ইউনিয়ন কাউন্সিলে তদন্তে এসেছে। আমি টাকা ফেরত দিতে চেয়েছি।
তবে, আকলিমা বা তার স্বামী সোহরাব হোসেন সুদের কারবার করেন মর্মে এলাকায় প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ইউএনও অফিসের টিম এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে কাশিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আহাদ আলী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এলজিইডি অফিসের রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে দুই মাস আগে। কিন্তু কবির মেম্বর হওয়ার পরপরই দুই নারীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। আকলিমার অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও অফিসের টিম তদন্তে এসেছে। টিমের সামনে কবির টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। গত রোববার (২৫ অক্টোবর) সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দিইনি।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, কবিরুজ্জামান মেম্বরের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এসেছে। প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠানো হবে। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।