ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবার বালিউড়া গ্রামের আবদুল হক ওরফে জমির হোসেন ওরফে কালন নামক এক ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ী ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের অত্যাচারে জর্জরিত গ্রামবাসী। গ্রামবাসী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় কালন ও তার শ্বশুর হেবজু মিয়া সদলবলে একের পর এক হামলা করে যাচেছ গ্রামবাসীর উপর। এসব বিষয়ে মামলা হলেও আসামীরা গ্রেফতার হচ্ছেনা। ফলে মাদক চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বায়েক ইউনিয়ন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বায়েক ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ছোট্র গ্রাম বালিউরা। গ্রামের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নদী। নদীর দুপাশ নিয়ে বালিউরা গ্রামে প্রায় তিনশত পরিবারের বসবাস। কুখ্যাত ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ী কালনসহ কতিপয় চোরাকারবারী ও সন্ত্রাসীদের জন্য শান্তিপ্রিয় বালিউরা গ্রামবাসীর মনে স্বস্তি নেই। সর্বদা আতংকিত থাকে গ্রামবাসী কখন কার উপর হামলে পড়ে মাদক কারবারীরা।চলতি বছরের করোনাকালীন সময়ে বিট পুলিশিংয়ের দুটি সভা হয় ওই গ্রামে। কসবা থানা পুলিশ, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত থাকায় এলাকর লোকজন মাদক বিরোধী জনমত ব্যক্ত করেন। ওই সভা থেকেই নির্দেশ দেয়া হয় কালন যেন তার দেশে চলে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে কালন । গত ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যার পর তার শ্বশুর হেবজুর দলবল সহ প্রায় ২/৩শত লোক হামলা চালায় গ্রামবাসীর উপর । গ্রামের টিপু মাষ্টার, বাশার মিয়া ও রনিদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে বেদড়ক পেটায় মহিলাদেরও ।
থানায় অভিযোগ হলে উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুর কাওসার ভূইয়া জীবন ও ইউনিয়র পরিষদ চেয়ারম্যান ৭ নভেম্বর এঘটনার সালিশের তারিখ নির্ধারন করেন। কিন্তু কালন ও তার স্ত্রী সারা গ্রামে হেঁটে হেঁটে অশ্লিল গালাগাল করে এবং মাদক ব্যবসায় বাধাদান কারীদের দেখিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে গত ২ নভেম্বর সোমবার বালিউরার দক্ষিন পাশে একই গ্রামের তাজুল ইসলামের পুত্র অটোচালক হালিমকে হামলা করে। ডালিম কসবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা নেয়। একই দিন সন্ধ্যার পর কালন ইউনুছ মিয়া (৩৭ কে ক্লাব মাঠের পাশ্বে চায়ের দোকানে হামলা করে আহত করে। গ্রামের লোকজন জানায়, দুর থেকে মাদক সেবীরা কালনের কালনের কাছে আসে। গ্রামের লোকজন আরো জানায় কালনের ভাই মাদক ব্যবসায়ী মতি মিয়াও বালিউরা গ্রামে বিয়ে করে। মতিও ভারতীয় নাগরিক। গত কিছুদিন পূর্বে পুলিশ অভিযান চালালে মতি কসবা থানা এক অফিসারকে আঘাত করে মারাত্মক জখম করে। দীর্ঘদিন ওই অফিসার চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই রাতে বিজিবি বালিউরা গ্রামের হাসেমের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমান গাজা উদ্ধার করে। পরে হাসেমের ছেলে বাদশাকে ৫ কেজি গাজা সহ গ্রেপ্তার করে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কালনের বিরুদ্ধে কসবা থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক আইনে মামলা রয়েছে। কসবা থানায় মাদক মামলা অভিয্ক্তু করে তার বিরুদ্ধে চার্জসিট প্রদান করে। চার্জসিট নং- ৪৯২। তারিখঃ ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ইং। ওই মামলায় পুলিশ ২শ পিচ ইয়াবা সহ তাকে গ্রেপ্তার করেছিলো। অসামাজিক কার্যকলাপে অতিষ্ট হয়ে তার আশ্রয়তাদা ও আত্মীয় আবদুল হক তার বিরুদ্ধে সাধারন ডায়েরী করে। ডায়েরী নং- ৭৬৭, তারিখঃ ১৮-১২-২০১৯ ইং। কালন খুব চালাক প্রকৃতির লোক। তার তিনটি নাম, ভারতের পরিচয় পত্রে নাম জমির হোসেন, বাংলাদেশে আবদুল হক। কিন্তু বাংলাদেশে সে পরিচিত কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী কালন নামে। তার শ্বশুর হেবজু মিয়ার বায়েক গ্রামের ঠিকানায় সে একটি অস্থায়ী পরিচয় পত্র তৈরি করে।
এ বিষয়ে আবদুল বারিক মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালনকে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরিতে সে তিনি কোনো সুপারিশ করেননি।
এদিকে ভারতে তার দুই সন্তানের পরিচয় পত্র করা হয়েছে। একজনের আফসান হোসেন, যার জন্ম ২৪-১০-২০১৯ সালে। অপর সন্তান জসিম হোসেন, যার জন্ম ৩১-১২-২০০৬ ইং। উভয়ের পিতা জমির হোসেন। ত্রিপরা রাজ্যের রায়েরমুড়া তাদের বাড়ী। গত ২ নভেম্বর রাতে বালিউরা ক্লাব মাঠের বাজারের দুইজন পল্লী চিকিৎসক শাহরিয়া ও মাসুমকে রাস্তায় একা বেদড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে কালন ও তার শ্বশুর হেবজু মিয়ার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। দুজনকে কসবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ভর্তি করলে মূমূর্ষ অবস্থায় মাসুমকে কুমিল্লা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।তাদের অপরাধ গ্রামবাসীর সাথে এরাও মাদক চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। গ্রামবাসীর অপরাধ বিট পুলিশিং সভায় গত ৪ আগষ্ট বালিউড়ার সচেতন নাগরিকরা মাদক চোরাকারবারীদের নাম প্রকাশ্যে সভায় ঘোষনা করেছিলো। পরবর্তীতে বালিউরা ক্লাবেও বিট পুলিশিং সভঅয় এসকল চোরাকারবারীদের নাম প্রকাশ করে।
এ সমস্ত ঘটনায় কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভ’্ইয়া জীবন বলেন; মাদক ব্যবসায়ী কালনকে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আল মামুন ভ’ইয়া বলেন; তাকে চলে যেতে হবে।
এ ব্যাপরে কসবা থানা ওসি মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বলেন, দুজন পল্লী চিকিৎসককে হামলা ও রক্তাক্ত জখমের দায়ে দুটি মামলা গ্রহন করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গ্রামবাসী জানায়; তার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, পুলিশের ডিআইজিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভারতীয় নাগরিক কালন সম্পর্কে অভিযোগ দিলেও এ যাবত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং কালন ও মাদক চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে।
এদিকে অভিযুক্ত আবদুল হক ওরফে জমির হোসেন ওরফে কালনের বাড়িতে গিয়ে কালনের সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায় টিপু মাষ্টারের লোকজন তাকে মারধোর করেছে। সে ভারতের নাগরিকনা । তাদের বাড়ি উপজেলার ধ্বজনগড় গ্রামে। যোগাযোগ করলে সেখানখার লোকজন জানায় কালনরা প্রায় ৩০/৩৫ বছর আগে সব বিক্রি করে ভারতে চলে যায় এবং সেখানেই নাগরিকত্ব লাভ করে। সে একজন দুর্ধর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।