প্রশান্তি ডেক্স ॥ বর্তমান সরকার শহীদ নূর হোসেনের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে শাসন জারি রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ নূর হোসেনকে ভুলে যাননি। নূর হোসেনের চেতনা লালন করে এই সরকারকে দেশের মানুষ নামাবে।
গত মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে বাম গণতান্ত্রিক জোট এ সমাবেশের আয়োজন করে।
মানুষের জীবনের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আর এটাই বাংলাদেশের অবস্থা আজকের উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, এ দেশে সরকার দু–একটি ঘটনার বিচার করে, গ্রেপ্তার করে। জনমতের চাপে সরকার মানুষকে দেখাতে চায়, অপরাধ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ও নিজেদের গুন্ডাতন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে মানুষের ভোট কেটে ক্ষমতায় আছে।

সমাবেশে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক দল দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। এ দেশে ভোটের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা নেই। যারা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, সেই সরকারকে উৎখাত করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এ দেশে সামরিক স্বৈরাচারের বদলে গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারি চলছে। যে স্বৈরাচার সরকার নূর হোসেনকে হত্যা করেছে, সেই স্বৈরাচারকে বুকে-পিঠে নিয়ে দেশে রাজনীতির মেরুকরণ করা হয়েছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানস নন্দী, ইউসিএল’র সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুস সাত্তার, বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক। পরিচালনা করেন বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন।
ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারা বলেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে শহীদদের স্বপ্ন অর্জিত হয়নি। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশে কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চাপিয়ে দিয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতন্ত্রায়ণের পরিবর্তে সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা গত ১২ বছর ধরে ভোট ব্যবস্থাকে হাস্যকর করে ফেলেছে।’
নেতারা বলেন, ‘এরশাদ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অসংখ্য শহীদ স্বৈরাচারের হাতে বন্দি গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে আত্মদান করেছেন। অসংখ্য মানুষের আত্মদান, পঙ্গুত্ববরণ ও জেলজীবনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটানো সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু নব্বইয়ের গণঅভুত্থানের পর যারা ক্ষমতাসীন হয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং তাদের জোট মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের আকাঙ্খাকে পদদলিত করেছে। তারা নব্য স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে। নব্য এই স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য বাম প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তি এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুলিস্তানের নূর হোসেন চত্বরে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।