সদা হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিটি সকলকে কাঁদিয়ে চলেগেলেন জান্নাতুল ফেরদাউস খ্যাত খোদায়ী আবাসে। তাকে স্পর্শকরা যাবেনা হয়ত কিন্তু দেখা ও শোনা এবং উপলব্দিতে স্পর্শ করা যাবে। তিনি অতি সাধারণে বিখ্যাতদের বিখ্যাত একজন সাদা মনের সেবক মানুষ। তাঁর জীবদ্দশায় করে যাওয়া কৃর্তিগুলো সবসময় মানুষকে তাকে স্মরণে রাখতে উৎসাহ যোগাবে। এই হাসিমাখা মুখখানি সকলকে ভালবাসার আলিঙ্গনে জড়িয়ে স্মৃতিতে ভাসমান হয়ে থাকবে।
অনেক কিছুই ভোলা যায় কিন্তু এই মানুষটির অম্লমাখা হাসিখানা এবং ভালবাসা মিশ্রিত আবেগজড়িত সেবা ও পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণের কথা ভোলা যাবে না। তিনি এই সেবার মনোভাব প্রকাশান্তে শুরুতেই তাঁর জন্মস্থান কসবার তালতলা গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন কর্মস্থলের টানে আপন করে নেয়া সৈয়দাবাদ গ্রামে। এই মহিয়ান মানুষটি জন্মগ্রহণ করেন ব্র্হ্মাণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার তালতলা গ্রামে, শৈশব কাটিয়ে যৌবনে তিনি তাঁর শিক্ষা সমাপ্ত করে মানুষ গড়ার কারিঘর হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন শিক্ষকতায়। সেই শিক্ষক থেকেই শুরু করেন সেবার মহান কাজটুকু। তিনি শিক্ষার প্রদীপ জালিয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে সৈয়দাবাদ উত্তর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে সৈয়দাবাদ গ্রামেই বসবাস শুরু করেন। তিনি সেবার পরিধি বাড়িয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিনামূল্যে ডাক্তারি সেবা দিয়ে মানুষকে তাঁর স্বমহিমাময় ভালবাসায় আবদ্ধ করেন। তিনি কোন শ্রেনীর ডাক্তার নন; তিনি সকলেরই ডাক্তার ছিলেন, কেউ কেউ তাকে সম্বোধন করতেন স্যার, কেউ কেউ তাকে সম্বোধন করতেন ভাইসাব বলে, আবার কেউ কেউ তাকে সম্বোধন করতেন কাক্কু বলে, কেউ কেউ তাকে পিতৃুতুল্য সম্মানে সম্মানীত করতেন, কেউ কেউ আবার যারা সমবয়সী কাছের মানুষ তারা বলতেন ডাক্তর বলে। তিনি সকলেরই ডাক শুনতেন তাঁর চিরচেনা হাসিমাখা অম্লমধু মিশ্রিত মুখে এবং জবাব দিতেন ন¤্রতা ও মায়া জড়ানো সুরেলা কন্ঠে; যাতে করে মানুষ সুস্থ্য হয়ে যেত চিকিৎসার পুর্বেই।
তিনি মানুষকে দিশা দেখাতেন, মানুষের মনের কথা জানতেন এবং আশ্চয্য ক্ষমতায় অলৌকিক কাজ করে মানুষকে মুক্ত করতেন। তাই মানুষ তাকে নি:শর্ত ভালবাসায় জড়িয়ে ভালবেসেছিলেন। যা তার কৃতকর্মের দ্বারা প্রাপ্য। তিনি গত সোমবার রাত ২টার সময় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি হাসপাতালে; কিন্তু তাঁর মৃত্যুর খবরটি দ্রুতই যেন ঘ্রাস করে পরিচিত, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনসহ তার ভালবাসায় মুগ্ধজন এমনকি উপকারভোগী সকল স্তরের মানুষকে। সকলেই বেদনায় হত বিক্ষত কিন্তু প্রকৃতির এই নিয়মের ব্যক্তিক্রম আমরা কেউই নয়; মেনে নেয়া ছাড়া কারও কোনকিছু করার ছিল না কিন্তু দু:খ ও সুখস্মৃতি হাতড়িয়ে শ্রদ্ধা এবং ভালবাসায় দুনিয়াবী শেষ বিদায়টুকু দেয়ার আগ্রহে উৎকন্ঠিত ছিল এবং কেউ কেউ দুর-দরান্ত থেকে ছুটে আসে এমনকি যারা আসতে পারেনি তাদের মনের সর্বোচ্চ ভালবাসা মিশ্রিত দোয়া এবং শুভ কামনা এমনকি বিদায় জানাতে কার্পন্য করেনি।
করোনা মহামারির মাঝেও মানুষের ভালবাসার কোন কমতি ছিল না। সোমবার (০৯/১১/২০২০ইং) বেলা সকাল ২টা) আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেন এবং আমরা তাকে ঐদিন আছর বাদ সৈয়দাবাদ ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক ছানি ইউনুছিয়া জামেউল উলুম মাদ্রাসা মাঠে দুর দুরান্ত থেকে আগত প্রায় তিন হাজারেরও বেশী মানুষের সম্মিলনে শেষ শ্রদ্ধা ও বিদায় নিবেদন করি। মরহুমের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর, আর অসখ্য শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তের সঙ্গে এক ছেলে, স্ত্রী ও ৫ কন্যা রেখে গেছেন। তবে একটি বিষয় বলা দরকার; তিনি যে পৃথিবী থেকে বিদায় নিবেন তা তিনি জানতেন; প্রায় তিন মাস আগে আমি কাক্কুর সঙ্গে ওনার বাড়িতে দেখা করতে যায় এবং তিনি তখন অনেক বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে; এমনকি এক পর্যায়ে আমাকে বলে আমার শরীরটা ভাল না আর বেশীদিন সময় নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। কি অদ্ভুদ এই মৃত্যুর স্বাক্ষ্য; ঐ সাক্ষাতের পর আরও দুইদিন আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় ঠিক একইভাবে ওনার মৃত্যুর পুর্ভাভাস দিয়েছেন। তবে আমি কাক্কুকে প্রতিদিনই মিছ করব; কারন আমার সঙ্গে ও আমার পরিবারের সঙ্গে ওনার একটি আত্মিক সম্পর্ক স্থাপিত ছিল এবং আছে ও থাকবে। তাঁর ভালবাসা এবং উপদেশ ও আদেশ এবং অনুরোধ সবই অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। বিদায় বলবনা তবে বলব দেখা হবে এবং কথাও হবে একই সঙ্গে বেহেস্তে আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত জীবন কাটাবো। অপেক্ষায় থাকুন আমরাও আসছি।