প্রশান্তি ডেক্স ॥ বছর জুড়েই খোঁড়াখুড়ি চলছে রাজধানীর রাস্তা। একবার সিটি করপোরেশন, তো আরেকবার ঢাকা ওয়াসা, আবার বিদ্যুৎ বিভাগ। খোঁড়াখুড়ি যেন থামছেই না। এক রাস্তাই বারবার খোঁড়া হচ্ছে এবং বারবার সংস্কার করা হচ্ছে। ফলে একদিকে রাজধানীতে যানজট কমছে না, আরেক দিকে ধুলাবালির কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র রাজধানীর উন্নয়নে মাষ্টারপ্ল্যানের কথা বললেও তা মুখের কথা হিসেবেই থেকে যাচ্ছে, বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সম্প্রতি
ঢাকা উত্তর সিটির কুড়িল বসুন্ধরা গেট থেকে নতুনবাজার
হয়ে বনানী পর্যন্ত এবং আবতাব নগর
থেকে মধ্যবাড্ডা ইউলুপ পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বসানোর কাজ করছে ঢাকা
ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। এজন্য কুড়িল
থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত যেতে বাম পাশের
রাস্তা খুড়ে রাখা হয়েছে।
ফলে কুড়িল থেকে রামপুরা পর্যন্ত
দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। রাস্তায় ধুলাবালির কারণে বায়ুদুষণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী
মানুষ।
ডেসকো সূত্র জানায়, কুড়িল থেকে নতুনবাজার হয়ে
বনানী পর্যন্ত কাজ শেষ হবে
আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষে। আর আফতাব নগর
থেকে মধ্য বাড্ডা ইউলুপ
পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বসানোর কাজ শেষ হবে
ডিসেম্বরের প্রথম সাপ্তাহে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ডেসকো তাদের কাজ শেষ করে সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিলে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। কুড়িল থেকে নতুন বাজার হয়ে বনানীর রাস্তার সংস্কারের কাজ আগামী বছরের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে। আর আফতাব নগর থেকে মধ্যবাড্ডার রাস্তার কাজ ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারিতে শুরু হবে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ বা ওয়াসার কাজ শেষ হবার দুই একদিনের মধ্যে রাস্তার সংস্কার করার কথা। কিন্তু নিয়ম নিয়মের জায়গাতেই থেকে যাচ্ছে সব সময়।
এছাড়া ডিস ও ইন্টারনেটের ক্যাবল বিদ্যুতের পোলের সাথে ঝুলিয়ে লাইন টানা দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি সেই লাইন কেটে দিচ্ছে। বলা হচ্ছে মাটির উপরে ক্যাবল লাইন থাকবে না। অতি শিঘ্রই ডিস ও ইন্টারনেটের ক্যাবল লাইনও মাটির নিচ দিয়ে নেয়া হবে। সে সময় আবারও রাস্তা খোঁড়া হবে নতুন করে। আবারও সেই রাস্তা সংস্কার করা হবে।
রাজধানীর দক্ষিণখান থানার ৪টি ওয়ার্ডে নতুন করে পানির লাইন বসানোর কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। এমনিতেই নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডের উন্নয়নে কোন বাজেট নেই ডিএনসিসির। ওয়াসার কাজে রাস্তা আরো নষ্ট হচ্ছে। ফলে ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলের আরো কষ্ট শুরু হয়ে গেছে। ওয়াসা সূত্র জানায়, দক্ষিণখানের এই কাজ শেষ হবে আগামী বছরের মার্চ মাসে। পুরো পানির লাইন বসানো হচ্ছে। কাজ সম্পূন্ন হলে নতুন লাইনে পানি সরবরাহ করা হবে। আর পুরোনো লাইন মাটির নিচেই সংসযোগ বিহীন অবস্থায় রেখে দেয়া হবে।
এছাড়া
তেজগাঁও ও বনানীতে মোট
তিনটি ইউলুপের কাজ করছে ডিএনসিসি।
বনানীর ইউলুপের একবার ডিজাইন ভুল করে আবার
সংশোধন করে কাজ করা
হচ্ছে। তেজগাঁও নাবিস্কো ও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের
সামনে ইউলুপ করা হচ্ছে। ধীরগতিতে
চলছে কাজ। এর মধ্যে
এই কাজের জন্য যানজট বেড়েছে
কয়েকগুণ।
মালিবাগ থেকে রামপুরা ব্রিজ
পর্যন্ত ম্যানহোলের ঢাকনা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, ঢাকনা
সড়ক থেকে ৫ থেকে
৬ ইঞ্চি নিচু। একেকটি ঢাকনা একেকটি গর্ত যাতে গাড়ির
চাকা পড়ে ঝাকি খায়
এবং মোটরসাইকেলের অনেক চালক ঢাকনার
গর্তে পড়ে আহতও হয়েছেন।
ধানমন্ডি-২৭, ঝিগাতলা, মানিকনগর, নবাবপুর রোড, গুলিস্তান পার্কের দক্ষিণ পাশের রাস্তা, নর্থ সাউথ রোড, ওসমান গণি রোড, মনেশ্বরী রোডের কাজ দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। মিরপুর টু আগারগাঁও সড়ক, শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর ১০, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর থেকে মিরপুর ১২ নম্বর ও পল্লবী অংশের রাস্তারও বেহাল দশা। শ্যামলী সিনেমা হল থেকে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত এই রাস্তার দুই পাশে খানাখন্দে ভরা। সিদ্ধেশ্বরী রোড়ের খেলার মাঠের সামনে ছোট-বড় খানাখন্দ রয়েছে। সুয়ারেজ লাইনের সমস্যার কারণে এই অংশে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে। মধ্যবাড্ডা পোস্ট অফিস রোডের প্রায় এক কিলোমিটার, উত্তর বাড্ডা থেকে পূর্বাঞ্চলের রাস্তা সড়কের অবস্থা আরও খারাপ। বছরের পর বছর ঘুরলেও শেষ হয় না বনশ্রী এলাকার রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ। মেরাদিয়া বাজার থেকে মাদারটেক যাওয়ার প্রধান সড়কটি গত পাঁচ বছরেও ঠিক হয়নি।
এদিকে ঢাকায় বিভিন্ন সংস্থার কাজের সমন্বয় করতে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ও সিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থার সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।