না ফেরার দেশে চলে গেলেন সকলের প্রীয় গোলাম সারওয়ার সাঈদী

বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও কামেল-এ দ্বীন পীরজাদা গোলাম হাক্কানী পীর সাহেবের পুত্র পীরে কামেল ও প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মুফাসসিরে কোরআন আলহাজ্জ্ব হযরত মাওলানা গোলাম সারোয়ার সাঈদী সাহেব আজ ভোর ৪.১৫ মিনিটে এভার কেয়ার হসপিটালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে খোদার ডাকে সারা দিয়ে তাঁর নিজস্ব আবাসে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে গেলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান এবং কসবা উপজেলার আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের পীর সাহেব ও আড়াইবাড়ি সাইদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন।

তিনি ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। মিষ্টভাষি ও সুবক্তা ছিলেন। ইসলামী জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এবং চর্চায় তিনি জনতার মনে সু-উচ্চ আসনে আসীন ছিলেন। খোদার সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। তার ভালবাসা বঞ্চিত কোন মানুষ ছিল না। পরিচিত, অপরিচিত, আত্মীয়-পরিজন সহ সকলেই তার নিকট ছিল পরম আত্মার আত্মীয়ের মত। মধুর ও সুরেলা কন্ঠে ভালবাসা ও আবেগে জড়িয়ে কত আপন করেন নিতেন সকলকে। সুখে-দুখে পাশে থাকতে চেষ্টায় রত ছিলেন এই প্রখ্যাত আলেমে দ্বীণ মানুষটি। প্রিয় বাবা ও চাচার আদর্শের সঙ্গে নিজের কিছু অতিরিক্ত আদর্শযোগে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্য। তাঁর আনবদ্য শুন্যতা এখন উপলব্দি করবে এই দেশের মানুষ। আল্লাহ যেন তাঁর অবর্তমানে যোগ্য উত্তরসূরী যুগিয়ে দেন সেই মোনাজাত করি।

প্রীয় এই মানুষটি আমার মায়ের সম্পর্কে মামা ছিলেন। তিনি আমার মায়ের মামাতো ভাই। আসলে আমি খুব কম সময়ই ওনাকে পেয়েছি। যতবারই দেখা হয়েছে ততবারই মামার মধুর ব্যবহারে আমি মুগ্ধ ছিলাম। আমি যেমন সকলের খোজ খবর নিতাম ঠিক তেমনি মামাও আমাদের সকলের খোজ খবর নিতেন। ভাগিনা হিসেবে মামাকে নিয়ে গর্ব করার সকল উপাদান এবং উপকরণে ভরপুর ছিল মামা। কিন্তু এত অল্প সময়ে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন ভাবতেও পারিনি। যাক সবই মহান রাব্বুল আল-আমীনের ইচ্ছা। সর্বশেষ মামার সঙ্গে দেখা হয় এইতো কিছুদিন আগে। তিনি সচিবালয়ে যাচ্ছেন এবং আমিও যাচ্ছি পথিমধ্যে মামা আমাকে ডাকে নয়ন (ভাগিনা)… দাঁড়িয়ে মামাকে দেখে কদমভুসি করি এবং করোনায় তুঙ্গে দেশ এই সময়েও মামা আমাকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করেন। মামার ঐ শেষ দেখার কথা ভুলতে পারাবো না কিন্তু মামা আমাকে বলেছিল আমি আমার আত্মীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতি: সচিব ওনার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি চল তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আসি। আমি মামাকে বললাম আরেক দিন যাব মামা আজকে আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এখন শুরু হবে বলে মামার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। এই বিদায়ই শেষ বিদায় হয়ে গেল মামার সঙ্গে!!! তবে হাসপাতালে অনেক বার গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি কিন্তু স্বশরীরে আর দেখা হলো না। মামার সেই সচিবের সঙ্গেও কামাল ভাইয়ের মাধ্যমে পরিচয় হলো সেই হাসপাতালেই। মামা তোমাকে অনুসরণ করব এবং তোমার ভালবাসা অন্যদেরকে বিলিয়ে দিব। আমার জীবদ্দশায় মামার বাড়ির সকলের পাশে থাকব এই নিশ্চয়তা শতভাগ। শৈশব, কৈশর, যৌবনের এমনকি পৌড়ের সকল সুখস্মৃতি হাতড়িয়েই আগামীর গন্তব্য অনুসন্ধানে এগিয়ে যাব। ভাল থেকো পরপারে এবং অপেক্ষা করো আমরাও আসছি। ওখানের সকলকে সালাম ও ভালবাসা দিও। দেখা হবে। মামা তোমার অগনিত ভক্ত আজ তোমার জন্য ভঙ্গুর হৃদয়ে কাতর এবং কায়মনোবাক্যে খোদার দরবারে তোমার যোগ্য আসন কামনা করছে। সকলের সঙ্গে আমিও সেই আকাঙ্খার বাস্তবায়নের জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.