প্রশান্তি ডেক্স ॥ ভৈরবের পৌর শহরের গাছতলাঘাট এলাকার বাসিন্দা হাজী সিদ্দিক মিয়া তার সম্পত্তি স্ত্রী ও দুই পুত্রের নামে লিখে না দেয়ায় তাকে পাগল সাজিয়ে ৫ মাস যাবত মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আটকে রাখা হয়। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী সোহাগ তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করেন।
ভুক্তভূগী হাজী সিদ্দিক মিয়া বাদি হয়ে স্ত্রী লতিফা বেগম (৬০), পুত্র মামুন (৪৪) ও রুমান মিয়া (৩৩) ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার প্রত্যয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক জামাল মিয়ার বিরুদ্ধে গত ১১ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি কিশোরগঞ্জের সিআইডিকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেন।
হাজী সিদ্দিক মিয়া গত বৃহস্পতিবার অভিযোগে জানান, তিনি ভৈরবের কমলপুর গাছতলাঘাট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। এক সময় জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। পরে বিদেশ চলে যান। তিনি এলাকায় একটি ৪ তলা বাড়ি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন। দুই পুত্রকে ইটালি পাঠিয়েছেন এবং নিজে এখন বাড়ির নিচ তলায় অটোমেটিক ড্রাই ক্লিনার্সের ব্যবসা দিয়েছেন। তিনি তার ভাতিজাকে ২ শতক জমি (আনুমানিক মূল্য ৯০ লাখ টাকা) দান করার কথা বললে স্ত্রী ও পুত্রদের সঙ্গে তার বিরোধ শুরু হয়।
গত ২২মে রাতে তার স্ত্রী নিজের লোকজন নিয়ে তাকে জোরপূর্বক ব্রক্ষণবাড়িয়ার প্রত্যয় নামে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে তারা নিরাময় কেন্দ্রের মালিকের সহযোগীতায় সিদ্দিক মিয়াকে তার সকল সম্পদ স্ত্রী পুত্রদের নামে লিখে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। সে রাজি না হওয়ায় তাকে ৫ মাস ধরে নিরাময় কেন্দ্রে আটকে রাখা হয়। পরে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর সোহাগ ও সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল ইসলামের সহযোগিতায় গত ৪ নভেম্বর নিরাময় কেন্দ্র থেকে ছাড়া পান।
গত ১১ নভেম্বর হাজী সিদ্দিক মিয়া কিশোরগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-২ এ স্ত্রী, দুই পুত্র ও নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।
হাজী সিদ্দিক মিয়া আরও জানান, তার স্ত্রী সন্তানরা তাকে মাদক সেবনকারী সাজিয়ে প্রত্যয় নিরাময় কেন্দ্রে আটক করে রাখে। এতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসহ তাকে সমাজে হেয় করা হয়েছে। বর্তমানে সে বাসায় থাকলেও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানান, হাজী সিদ্দিক মিয়াকে তার পরিবারের লোকজন সম্পত্তির জন্য মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আটক রেখেছে তা কেউ জানতেন না। এলাকায় প্রচার করা হয়েছে সে তাবলিক জামাতে গিয়েছেন।
হাজী সিদ্দিক মিয়ার দুই ছেলে প্রবাসে থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তার স্ত্রী লতিফা বেগম বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এলাকার কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী সোহাগ জানান, এটা তাদের পারিবারিক হলেও বিষয়টি অমানবিক। পিতার সম্পত্তি স্ত্রী সন্তানেরা পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাকে পাগল আখ্যায়িত করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আটক রেখে সম্পত্তি লিখে নেয়ার চেষ্টা করা বড় অপরাধ। এ খবর অবগত হওয়ার পর আমি নিজে দায়িত্বে তাকে নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছি।