প্রশান্তি ডেক্স ॥ কুড়িগ্রামে সাংবাদিক পেটানোর দায়ে অভিযুক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করেছেন তার স্ত্রী চন্দ্রিকা চাকমা।
এ মামলায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হওয়ার ১৭ দিন পরও গ্রেপ্তার হননি তিনি। পুলিশের দাবি, তারা এখনও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাননি।
তবে মামলার বাদী চন্দ্রিকা চাকমার আইনজীবী সৌরভ ত্রিপুরা জানান, চলতি মাসের ১ তারিখ খাগড়াছড়ির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবু তাহের তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
রিন্টু চাকমার স্ত্রী চন্দ্রিকা চাকমার দায়ের করা মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার আমতলী গ্রামের অক্ষয়মণি চাকমার ছেলে রিন্টু বিকাশ চাকমার সঙ্গে চন্দ্রিকা চাকমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নানা অজুহাতে যৌতুক দাবি করে আসছিল রিন্টু চাকমা।
যৌতুক না দেয়ায় পারিবারিকভাবে চন্দ্রিকা চাকমাকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো। এমনকি কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারারও চেষ্টা করা হয়েছে। ২০১৪ সালে তাদের ঘরে কন্যাসন্তান জন্ম হয়। ওই সময় বেকার থাকায় রিন্টু বিকাশ চাকমা শ্বশুরবাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের যৌতুক নেন।
বিসিএস ভাইভার আগে চাকরির জন্য ঘুষ দেয়ার কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে অভিযুক্ত রিন্টু চাকমা। এ সময় তাকে দুই লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়। এছাড়া কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিভাগীয় মামলা ও ওএসডি থেকে খালাস পেতে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করে চন্দ্রিকার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। তার নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন চন্দ্রিকা চাকমা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, তিনি (রিন্টু চাকমা) স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন। ঘরের মেঝেতে ফেলে স্ত্রীর বুক ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন চালানো হয়। এমনকি রিন্টুর আঘাত থেকে বাদ যায়নি ছয় বছরের শিশুকন্যাও।
এ ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন চন্দ্রিকা চাকমা।
এদিকে রিন্টু চাকমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে শিশুকন্যাসহ ৯ সাক্ষীর বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন বিচার বিভাগীয় তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া খাগড়াছড়ি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলম।
নির্যাতনের শিকার ভিকটিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৌরভ ত্রিপুরা জানান, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার বিরুদ্ধে আদালতের জারিকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তার কর্মস্থল ও গ্রামের বাড়ি গুইমারার আমতলীতেও পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এখানে আদালতের নির্দেশও প্রতিপালিত হচ্ছে না।
গুইমারা থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা রিন্টু চাকমার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাইনি। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ মামলার বাদী রিন্টু বিকাশ চাকমার স্ত্রী চন্দ্রিকা চাকমা বলেন, আমি ন্যায়বিচার চাই। আমাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। রিন্টু চাকমাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে গত ১৩ মার্চ রাতের আঁধারে কুড়িগ্রামের তৎকালীন ডিসির নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে নিয়ে ‘বিবস্ত্র’ করে নির্যাতন চালানো হয়। এ ঘটনায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওই সময় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।