চিরনিদ্রায় শায়িত ফুটবলের জাদুকর

আন্তজার্তিক ডেক্স ॥ কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও বন্ধুদের উপস্থিতিতে সম্পন্ন করা হয় ম্যারাডোনার শেষকৃত্যানুষ্ঠান। গত বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বুয়েনস আইরেসের উপকণ্ঠে বেলা ভিস্তায় মা-বাবার পাশেই সমাহিত করা হয় ফুটবল জাদুকরকে। খবর বিবিসি।

এর আগে ম্যারাডোনার মরদেহ রাখা হয় প্রেসিডেন্ট কার্যালয় কাসা রোসাদায়। সেখানে তাঁর ভক্তরা শেষ শ্রদ্ধা জানান। ম্যারাডোনার কফিনটিতে আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকা ও ১০ নম্বর সংবলিত জার্সি জড়ানো ছিল।

প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বাইরে ম্যারাডোনার মরদেহবাহী কফিনটি দেখার জন্য জড়ো হয় অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে ভক্তদের সারি ক্রমেই দীর্ঘ হতে থাকে। তাঁদের সামলাতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ম্যারাডোনা ভক্তদের সংঘর্ষেও জড়াতে দেখা যায়। এমনকি তাঁদের সামলাতে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসও ছোড়ে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ভক্তদের জন্য ম্যারাডোনার কফিন দর্শন বন্ধ করতে হয় কর্তৃপক্ষকে।

এর আগে মৃত্যুর পরই গত বুধবার সন্ধ্যায় ম্যারাডোনার মরদেহ বুয়েনস আইরেসের তিগ্রেতে তাঁর বাসভবন থেকে ময়নাতদন্তের জন্য সান ফার্নান্দোর একটি মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার আর্জেন্টিনার তিগ্রেতে নিজ বাসায় মারা যান ম্যারাডোনা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। এর কিছুদিন আগে মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল ম্যারাডোনার। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি গিয়েছিলেন অতিরিক্ত অ্যালকোহল আসক্তি থেকে সেরে ওঠার নিরাময় কেন্দ্রে। এরপর বাসায় ফিরেছিলেন ম্যারাডোনা। সেখানেই মারা যান তিনি।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা প্রায় একাই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতান। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। দক্ষিণ প্রান্তের শহর ভিয়া ফিওরিতোতে তাঁর বেড়ে ওঠা। তিন কন্যা সন্তানের পর তিনিই ছিলেন মা-বাবার প্রথম পুত্রসন্তান। শৈল্পিক ফুটবল দিয়ে কিশোর বয়সেই নজর কাড়েন ম্যারাডোনা। মাত্র আট বছর বয়সে যোগ দেন আর্জেন্টিনার যুব দলে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

১৯৭৭ সালে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে ডাক পান ম্যারাডোনা। এরপর দেশের হয়ে চারটি বিশ্বকাপ আসরে অংশ নেন। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৮৬ সালে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। তবে ওই বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম গোলটি ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত। দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে অবশ্য সমস্যা হয়নি। প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে প্রতিপক্ষের পাঁচ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে দ্বিতীয় গোল করেন ম্যারাডোনা। ওই গোলটিকে ২০০২ সালে ফিফা ডট কমের ভোটাররা শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত করে।

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন ম্যারাডোনা। তবে সেবার আর বিশ্বকাপ ছোঁয়া হয়নি। পরের বছর ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। এরপর মাঠে ফিরে আর ছন্দ খুঁজে পাননি ম্যারাডোনা। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৭ সালে বুটজোড়া তুলে রাখেন ম্যারাডোনা। ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে নাম লেখান কোচিংয়ে। কিন্তু ফুটবল মাতানো ম্যারাডোনা কোচ হিসেবে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। কোচিং ক্যারিয়ারেও নানা সময় বিতর্কিত হয়েছেন কিংবদন্তি এই ফুটবলার। ২০০৮ সালের নভেম্বরে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান ম্যারাডোনা। কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপের পর দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে সেই দায়িত্বও ছাড়তে হয় বিশ্বকাপ জয়ী তারকাকে। শেষ সময়ে আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগের দল হিমনাসিয়ার কোচের দায়িত্বে ছিলেন ফুটবলের এই মহাতারকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.