নামের মিল থাকায় আরেকজনের সার্টিফিকেট ব্যবহার করেন প্রধান শিক্ষক

প্রশান্তি ডেক্স ॥  শুধুমাত্র নামের মিল থাকার কারণে নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সনদ নকল করে ব্যবহার করছেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তবে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের মাস্টার্সের সনদ নকল বলে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের লিখিত পত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

রফিকুল ইসলামের মাস্টার্সের সনদ নকল বলে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নিশ্চিত করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

একই সঙ্গে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সনদটি নকল এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সনদটি আসল (মূল) বলে লিখিত পত্রে উল্লেখ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

পাশাপাশি শিবচরের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের মাস্টার্সে ভর্তির কোনো তথ্য-উপাত্ত ঢাকা কলেজের ভর্তি রেজিস্টারে পাওয়া যায়নি। তবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রফিকুল ইসলামের মাস্টার্সে ভর্তিসহ তথ্য-উপাত্ত প্রমাণাদি সঠিক পাওয়া গেছে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্র জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দুটি সনদের ফটোকপি যাচাই করে মতামত দিয়েছেন।

মতামতে উল্লেখ করা হয়, ১ নম্বর সনদের ফটোকপির তথ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী সঠিক নয়; এটি মূলত শিবচরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ছবি সংবলিত।

অপরদিকে ২ নম্বর সনদের তথ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী সঠিক বলে উল্লেখ করেছেন; এ সনদপত্র নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার রফিকুল ইসলামের ছবি সংবলিত।

এছাড়া ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদ এক চিঠিতে কলেজের মাস্টার্স শেষ পর্ব ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলামের সনদের ব্যাপারে লিখিতপত্রে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান। তিনি শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের মাস্টার্স ইংরেজি সনদের স্বপক্ষে কলেজের নথিতে কোনো তথ্য নেই বলে জানান। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রফিকুল ইসলামের মাস্টার্স ইংরেজি সনদের স্বপক্ষে নথিতে সঠিক তথ্য পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার ভুইঘর পশ্চিমপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন সাউদ ও রাশিদা বেগমের ছেলে রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শিবচরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম তার মাস্টার্সের সনদ ব্যবহার করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কলেজের ২০০৯-১০ সেশনে মাস্টার্স ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স সনদে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন এবং নাম রফিকুল ইসলাম একই। নামে মিল থাকায় সনদটি যাচাই করা হয়। পরে যাচাই-বাছাইয়ে আসল-নকল ধরা পড়ে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ২৪ দিন পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের চিঠির জবাব পাওয়া গেছে। তিনি দুটি সাময়িক সনদের ফটোকপি যাচাই করে মতামত দিয়েছেন। এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ১ নম্বর সাময়িক সনদের ফটোকপির তথ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী সঠিক নয়; ২ নম্বর সাময়িক সনদপত্রের তথ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী সঠিক বলে উল্লেখ করেছেন।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের তদন্তে শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সনদের কোনো তথ্য-উপাত্ত ঢাকা কলেজে পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন। তবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রফিকুল ইসলামের মাস্টার্স ভর্তিসহ সকল তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) রহিমা খাতুনের কাছে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেকসোনা খাতুনের তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ইতোপূর্বে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিবচর থানায় জিডি করা হয়েছে। জিডির তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.