ভাষকর্য বনাম মুখ্যতা

ভাষকর্য দেখে অভ্যস্ত কিন্তু ভাষকর্যে কেউ পুজা করতে অভ্যস্ত নয় এমনকি দেখিওনি। তবে যুগের মুর্খতার পরিচয়ে পরিচিতদের মুখে শুনেছি। মূর্তী আর ভাষকর্যে মিল পাওয়া যায়নি দুটোই ভিন্ন এবং উদ্দেশ্যও ভিন্ন। মন্দিরে মুর্তি দেখেছি আর রাস্তায় এমনকি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দেখেছি ভাষকর্য। মন্দিরে মূর্তী পূজা হয়; হয়েছে এবং হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমনকি রাস্তায় মুর্তি পূজা হয়নি এমনকি হবেও -না। ভাষকর্যে প্রকাশিত ও দৃশ্যায়িত এমনকি পরিচিত হয়; কাজের, সৃজনশীলতার, কীর্তীর এবং জন্মদানকারীর গুনাবলীর। তাই ভাষকর্য এবং মুর্তীকে নিয়ে যারা সরব এবং দুটোকে একত্রিত করে গুলিয়ে ফেলেছে এমনকি মুখের দূগন্ধে পরিবেশ নষ্ট করে যাচ্ছে তাদের শিক্ষা দরকার, ওয়াল্ড ভিউ বা বিশ্ববিক্ষা সম্বন্ধে (বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির) জানা-শোনা ও দেখা দরকার।
বাংলাদেশে যুগে যুগে এই ধরণের মুর্খতার পরিচয় বহনকারী আবিস্কৃত হয়েছে এবং হবে; তবে, তার মধ্যে দিয়েই আমাদের সঠিক ও যা উপযুক্ত এবং সৎ, খাটি, ভাল, যা প্রশসংসা পাবার যোগ্য, মোটকথা যা ভাল তা করে যেতেই হবে। কর্মের স্বীকৃতি এবং দৃষ্টান্তকে জীবন্ত করে রাখার জন্য কোন কিছু উৎসাহ, অনুপ্রেরনা ও প্রেরণার অগ্রগামীতায় যোগানদাতা হিসেবে দৃশ্যমান রাখা জরুরী এবং এই কাজে যত বাধাই আসুক না কেন তা প্রতিহত করে বাস্তবে দৃশ্যমান রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মান্ধ নয় বরং ধর্মভীরু। খোদার প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরতা এবং আকাঙ্খা ও অভিপ্রায় সম্পন্ন মানুষগুলোকে ভুল পথে পরিচালিত করতে কিছু সংখ্যক শিক্ষক বা ধর্মগুরু ধর্মীয় নৈরাজ্য সৃষ্টির সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যা তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হতে সহায়তা করছে। আগামীতে তাদের আর কোন সুযোগ থাকবেনা জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করার। কারণ জীবন জীবিকার প্রয়োজনেই তারা আজ এই নৈরাজ্যমূলক কথার ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যানে এখন এদেশের মানুষের মনের মুখ্যতা দূরীভুত হয়েছে এবং যেটুকু এখনও রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে আলোর দিশায় জ্ঞানে পরিণত হতে নির্ধিদায় এগিয়ে যাচ্ছে। কবিরাজ, হংকার, ঝার – ফুঁকে এখন আর মানুষ ঝুকে নেই। পীর আওলীয়াতেও এখন আর মানুষ ঝুকে নেই। বরং প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ধর্মীয় গুরুদের সান্নিধ্যে থেকে খোদা বা আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে দৈনন্দিন সম্পৃততার পাল্লা ভারী করছে। তবে চোর-ডাকাত, লোভী, ঘোষখোর, বাটপারদের এখনও ঝাড়ফোকে, হংকার, কবিরাজে, পীর-ফকির, দরবেশে নির্ভরশীলতা রয়েছে। এই কম্মিনকালেও তাদের মনের পরিবর্তন হয়নি এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে আল্লাহ মালুম।
করোনা ব্যাধিতে প্রমানিত হয়েছে আমাদের চোপাওয়ালা আওয়াজে পাকিস্তান মার্কা ওয়াজে হুজুরদের ছল-ছাতুরী। তবে খোদার সঙ্গে যে তাদের কোন সম্পর্ক নেই এইকথা নিশ্চিন্তে বলা করোনার কারণে একেবারেই সহজ-সরল এবং দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়েছে। যত আবিস্কার ততই হারাম এবং নাজায়েজ বলে চিৎকারকারীরা এখন এই আবিস্কারের উপর ভরসা করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। রেডিও, টেলিভিশন, মাইক, ক্যামেরা, ছবি, কম্পিউটার, গান, গজল, বাদ্যযন্ত্রের মোহনীয় সূর সবইতো নিষিদ্ধ। কিন্তু আজ এই সবের উপর নির্ভর করেইতো ঐ দ্বীণের বুজুর্গানে সেজে দুনিয়া সয়লাভ করে আখেরের পরিবর্তে দুনিয়াবী কামিয়াবী হাছিলের সকল কর্মকান্ড পরিচালিত করে যাচ্ছে। এখানেতো কেউ বাধা দিচ্ছে না বরং সুযোগ করে দিচ্ছে পাপের শলা-কলা পূর্ণ করতে। কারণ আল্লাহ সবাইকে স্বাধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি কারো ভালো এবং খারাপ কাজে হস্তক্ষেপ করেন না বরং ভাল কাজের বরকত বাড়িয়ে দেন। আরো সুযোগ করে দেন যাতে ভালো কাজ আরো বেশী করতে পারেন। তিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং সুযোগ দিয়েছেন স্বাধীন থেকে জীবন পরিচালনা করতে। তবে তাঁর ইচ্ছায় পরিচালিত হলে আমাদের সঙ্গে তিনি থাকেন এবং আমাদেরকে সহযোগীতা করে এগিয়ে নিয়ে যান। আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জীবন যাপন করলে তিনি হস্তক্ষেপ করেন না বরং দু:খ পান আর আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করেন কখন আমরা তাঁর কাছে ফিরে আসব। তৌবা করব এবং ক্ষমা চাইব। এটাই আল্লাহর গুণের ফল এবং আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসার প্রতিদান।
আল্লাহ আমাদেরকে বাছ-বিচার করার অধিকার দেননি। তিনি বাছ-বিচারের দায়িত্ব নিজ কাধে রেখেছেন। তাঁর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করার অধিকারও দেননি। কারন তাঁরই সিফতে সৃষ্টি এই মানবকুল। এই মানবের হৃদয়েই আল্লাহর বসবাস। তাই কোন মানুষকে ছোট করা, বিচার করা, অপমানিত করা এমনকি বিভিন্ন ধর্মীয় অপবাদ দেয়া, মনে কষ্ট দেয়া, সমাজচুত্য করা, বিভিন্ন শরীয়তী আখ্যা দেয়া কোন মুমিনের কাজ নয়, অথবা খোদায় স্বভাবের কাজ নয়, অথবা আল্লাহভক্তদের কাজ নয়। সকলকে ভালবাসা, ক্ষমা করা এবং সকলের প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই হলো মুমিনের কাজ, আল্লাহ ভক্তের কাজ। আল্লাহ বলেন “তোমার প্রতিবেশীকে নিজেরমত মহব্বত কর”। প্রতিবেশী করা? কি তাদের পরিচয় তা বড় নয় বরং নিজের মত মহব্বত করাই হলো সবচেয়ে বড়; যা আল্লাহর হুকুম। ফ্যাতনা-ফ্যাসাদ আর ঝগড়া সৃষ্টি আল্লাহর হুকুমের পরিপন্থি। কোন কিছু যদি আল্লাহর ইচ্ছা এবং অভিপ্রায়ের বাইরে হয় তাহলে আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে সবকিছু রক্ষার। তিনিই রক্ষা করবেন। তবে তাকে সুযোগ দেয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। এই দায়িত্বটুকু পালন করি। শরীরের বাহিরের অংশ ধুয়ে পাক পবিত্র না হয়ে ভিতরের অংশ ধুয়ে পবিত্র হই। মুখ থেকে যা বের হয় তা যেন পবিত্র হয় এবং মানুষের কল্যাণে; শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে সেই আশায় সচেষ্ট থাকি। মুখের দুগন্ধে যেন বাতাস ভারী না হয় এমনকি খোদার অভিপ্রায়ে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেই দিকে খেয়াল রাখি, সকলেই যত্নশীল আচরণে ঈমান ও আমলকে পাকাপোক্ত করি। মানব কল্যাণের জন্য নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখি। অশান্ত পৃথিবীকে শান্ত করার জন্য প্রস্তত হই। করোনা নামক ব্যাধিকে পৃথিবী থেকে বিতারিত করি। মূর্খতা এবং ভাষকর্য নামক মুখরোচক গল্পের অবসান করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.