প্রশান্তি ডেক্স ॥ জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় আটজন গুলিবিদ্ধসহ পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মী মিলে অর্ধ শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসকে সামনে রেখে মঙ্গলবার রাত ৭টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের উদ্যোগে তারাকান্দি শহিদ মিনার চত্বরে বিজয় মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিলো। একই সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপির প্রতিনিধি যুবলীগ নেতা সাখায়াতুল আলম মুকুলের নেতৃত্বে আওনা ইউনিয়নের জগন্নাথগঞ্জ ঘাট থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যমুনা সার কারখানা গেটপাড় এলাকায় প্রবেশ করে। এসময় হেলাল মিয়া নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মীর সাথে কথা কাটাকাটির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
খবরটি ছড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন জড়ো হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে রামদা, হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্রের মহড়ায় এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় কয়েক রাউণ্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে তারাকান্দি শহিদ মিনার চত্বরের বিজয় মঞ্চ ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া মোটরসাইকেলসহ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও মালামাল লুটতরাজের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকালে তারাকান্দি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম আহত হন।
এছাড়া উভয়পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজমত আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, আনোয়ার, আবুল, মিজান, সাত্তার, আবু তালেব, হাফিজুর, সাইফুল, স্বপন, লাল চাঁন, লিটন, জাহেদুল, উজ্জল, বেলাল, আবুল কালাম, মিন্টু, সাকিব, সাইদুল, ঠান্ডু, খালেক, ছানোয়ার, সেলিমসহ অর্ধ শতাধিক আহত হন।
গুরুতর আহতদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা আল মামুনকে রাজধানীর চক্ষু হাসপাতাল, ঠাণ্ডুকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যান্যদের জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তারাকান্দি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পর বিজয় দিবস উপলক্ষে তারাকান্দি শহিদ মিনার চত্বরে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। এসময় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। এসময় ইটপাটকেলের আঘাতে আমিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে এবং অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে শহিদ মিনারে মঞ্চ তৈরির কাজ তদারকি করছিল ছাত্রলীগ নেতা আল মামুন। এসময় ডা. মুরাদ হাসান এমপির কথিত প্রতিনিধি যুবলীগ নেতা সাখায়াতুল আলম মুকুলের নেতৃত্বে সশস্ত্র নেতাকর্মীরা বিনা কারণে সেখানে হামলা চালায়। হামলাকারীরা কয়েক রাউণ্ড গুলি বর্ষণ করে। এতে আল মামুন, আবুল, ঠান্ডু, মিজান, হাফিজুর, সাকিব, সাত্তার ও স্বপন গুলিবিদ্ধ হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, হামলাকারীরা স্থানীয় ব্যবসায়ী গফুর, নুর নবী, কালাম, সুমন, সেলিম ও দিলসাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায় ও মালামাল লুটতরাজ করে নিয়ে যায়। এসময় তারা কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন বাদশা জানান, সংঘর্ষের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যারা ঘটিয়েছে দায়ভার তাদেরই।