প্রশান্তি ডেক্স ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সরকার সমর্থক নীল দলের প্রার্থীরা ‘অটো পাস’ নিয়েছেন। অভিযোগ বিএনপি-জামায়ত সমর্থিত সাদা দলের। নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ বলছে, তাদের কাজ ছিলো নির্বাচন করা, স্থগিত বা বন্ধ করা নয়।
৩০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আর প্রয়োজন হয়নি। কারণ নীল দল ছাড়া আর কেউ প্যানেল দেয়নি। আলাদা ভাবে কেউ প্রার্থীও হয়নি। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল আর বামপন্থীদের গোলাপী দল নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিরত থাকে । ফলে নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরই ২০ ডিসেম্বর রাতে নীল দলের ১৫ জনকেই বিজয়ী ঘোষণা করে।
আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে সভাপতি এবং, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
![](http://shaptahikproshanti.com/wp-content/uploads/2020/12/dhaka-university.jpg)
কিন্তু এটা মানতে চাইছেন না সাদা দলের নেতারা। তারা বলছেন, এটা এক তরফা এবং অটো পাসের নির্বাচন হয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘‘শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল প্রো-ভিসি হয়ে যাওয়ায় গত ছয় মাস ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সাদা দলের অধ্যাপক লুৎফর রহমান। গত নির্বাচনে একমাত্র তিনিই সাদা দল থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এটা নীল দল মানতে পারেনি। তাই এই করোনা মহামারির মধ্যেও তারা এক তরফা নির্বাচন করে নিল।’’
তিনি বলেন, করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বডি- সিনেট, সিন্ডিকেট, ডাকসুর নির্বাচন হচ্ছেনা। আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষক করোনায় মারা গেছেন। তাই নির্বাচন স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছিলেন। শিক্ষক সমিতি এবং নির্বাচন পরিচালনা পর্যদের কাছেও আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কেউই তাদের আবেদনে সাড়া দেননি। তাই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থেকেছেন।
তার অভিযোগ, ‘‘গণতন্ত্রের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও নির্বাচনে অটো পাস সিস্টেমে চলে গেল। এই সরকার ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রাতে নির্বাচন করেছে। আর এখন তো নির্বাচনই হয় না। সবাই অটো পাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও অটো পাসের কবলে পড়ল।’’
অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চান না নীল দলের নেতারা। তারা বলছেন, সাদা দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রও কিনলেন কিন্তু জমা দিলেন না।
আসলে তারা প্রার্থী জোগাড় করতে না পেরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। গত ১০ বছরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাদা দল থেকে দুই-একজন ছাড়া কেউ পাশ করতে পারেননি। শিক্ষক সমিতির নতুন সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘‘শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রেও ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক। তাই এটা পেছানো বা স্থগিতের সুযোগ ছিল না। সিনেট, সিন্ডিকেট বা ডাকসুর বিষয় আলাদা। নানা কারণে এই নির্বাচনগুলো সঠিক সময় হয়না। তাদের নির্বাচন পেছানোর বিধান আছে।’’
তিনি দাবি করেন, “নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির সভাপতিত্বে। তিনি তো নীল দলের। তিনি তো কোনো ধরনের বিরোধিতা করেননি। তার তো নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার সুযোগ ছিলো।”
ওয়ান ইলেভেনের সময়ও তো শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়নি। এর জবাবে তিনি বলেন,‘‘ তখন সরকারের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। কোনো নির্বাচনই তখন হয়নি। আর এখন তো সব নির্বাচন হচ্ছে।’’
নির্বাচন পরিচালনা পর্যদ বলছে, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নির্বাচনের আয়োজন করেছিলো। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অনেক বেশি ভোট বুথ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এমনকি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের সময় ঐতিহ্যগতভাবে যে খাবার দাবারের আয়োজন করা হয় তাও বাতিল করা হয়েছিল। পার্কিং মোহসিন হলের মাঠে নেয়া হয়েছিল। তারপর সাদা দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নির্বাচন পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘‘নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষক সমিতি। আমাদের শুধু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের নির্বাচন করার ক্ষমতা আছে। বন্ধ বা স্থগিত করার ক্ষমতা নাই। এটা চাইলে শিক্ষক সমিতি করতে পারত।’’
আর অধ্যাপক মো. উল্লাহ দাবি করেন, ‘‘আমরা নির্বাচিত। এক পদে একাধিক প্রার্থী না থাকলে সব নির্বাচনেই তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’’
অবশ্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘‘নির্বাচনই তো হয়নি। তারা নির্বাচিত হলেন কীভাবে?’’ সূত্র: ডয়েচে ভেলে।