প্রশান্তি ডেক্স ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী আবারো প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরির তাগিদ দিয়েছেন। এই উদ্যোগকে অর্থনীতিবিদেরা ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও নতুন প্যাকেজ আরো সুপরিকল্পিতভাবে তৈরির কথা বলেছেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী আবারো প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরির তাগিদ দিয়েছেন। এই উদ্যোগকে অর্থনীতিবিদেরা ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও নতুন প্যাকেজ আরো সুপরিকল্পিতভাবে তৈরির কথা বলেছেন।
ঈদুল ফিতরের আগে দেশের ৫০ লাখ নিম্নবিত্ত মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে ঈদ উপহার বা নগদ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। আর এই টাকা মোবাইল আর্থিক সেবা বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩৮ লাখ মানুষকে এই অর্থ দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি ১২ লাখ মানুষ এখনো তাদের উপহারের টাকা পাননি। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘সদিচ্ছা থাকার পরও নানা অনিয়মের কারণে এই অর্থ বিতরণ এখন স্থগিত আছে। নতুন করে ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে।”
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে দলীয়করণ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’’
বাংলাদেশে তিন কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ মতে, দেশের ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এরাই করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাত।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিম্নবিত্ত মানুষের একটি অংশকে প্রণোদনার আওতায় আনা যায়নি। আর ব্যাংকের নানা জটিল নিয়মের কারণে এসএমই খাতের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা প্রণোদনার ঋণ নিতে পারেননি।
এবার করোনায় মোট প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, শিল্প খাতে ৩০ হাজার কোটি, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে ২০ হাজার কোটি, কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি, রপ্তানি উন্নয়ন খাতে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা উল্লেখযোগ্য। পরে শ্রমিকদের বেতন দিতে পোশাক খাতকে আরো দুই হাজার ৫০০ কেটি টাকা প্রণোদনা ঋণ দেয়া হয়। পোশাক খাত শতকরা চার শতাংশ সুদে এই ঋণ পায়। তারা এরইমধ্যে আবারো প্রণোদনা চেয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, পোশাক ও অন্যান্য শিল্পখাত এই প্রণোদনা নেয়ায় শীর্ষে। পোশাক খাতের সব অর্থই নেয়া হয়েছে। শিল্পখাতও তাই। নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের যে হিসাব তাতে শিল্পখাতে সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তারা সোনালী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। একই ব্যাংক থেকে নাভানা রিয়েল এস্টেট ১০০ কোটি টাকা, থারমেক্স গ্রুপ ৮৪ কোটি টাকা, স্টার পার্টিকেল ৫৫ কোটি টাকা ও আবুল খায়ের গ্রুপ ৪৮ কোটি টাকা নিয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংক থেকে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের নিয়েছে ৯০ কোটি টাকা, নাইস মিলস ৬০ কোটি টাকা, থারমেক্স গ্রুপ ৫৭ কোটি টাকা এবং একমি ল্যাবরেটরি ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এই প্রণোদনা ঋণ নেয়া সহজ করার জন্য অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করারও সুযোগ দেয়া হয়।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসএমই খাতের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তারা প্রকৃত অর্থে এই প্রণোদনা ঋণ নিতে পারেনি। এর কারণ ব্যাংকের কোলেটারালসহ আরো কিছু শক্ত শর্ত। কিন্তু তাদেরই এই প্রণোদনা অনেক বেশি প্রয়োজন ছিলো।
নতুন প্রণোদনা প্যাকেজে যেন এসএমই খাতের জন্য শর্ত শিথিল করা হয় সেই পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, এমন একটি পদ্ধতি বের করতে হবে যাতে তারা সহজেই প্রণোদনার টাকা পান। একইসঙ্গে কৃষিখাতে প্রণোদনা যেন প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকেরাই পান তা নিশ্চিত করতে হবে। সার-বীজ যেন তাদের কাছেই পৌঁছায়। আর নিম্নবিত্ত মানুষকে সহায়তার ব্যাপারে মনিটরিং বাড়াতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জিডিপির চার দশমিক দুই ভাগ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এবার পরিমাণ আরো বাড়ানো প্রয়োজন। অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, এখন পর্যন্ত প্রণোদনা প্যাকেজ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক কৃষক এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষের কাছে খুবই কম গেছে। এমনকি প্রবাসী কর্মী, রেমিটেন্স যোদ্ধা যারা ফিরে এসেছেন তারাও পাননি বলেই চলে। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘‘প্রণোদনা পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। এবার সেটা দূর না করলে একই পরিস্থিতি হবে।” সূত্র: ডয়েচে ভেলে।