ড.ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনার সাদামাটা সাংসারিক জীবন এবং সততার শিক্ষা

সততার জলন্ত দৃষ্টান্ত আমাদের দৃশ্যমান পদ্যা সেতু। অনেক দুর্নাম ও যন্ত্রনার কারণে ব্যাথা সহ্য করে ধৈয্য ও সাহস এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আজকের পদ্মা সেতু। সেই সেতু দৃশ্যমান হতে যেসকল ষড়যন্ত্র পর্দার অন্তরালে ছিল তা এখন স্বচ্চ কাচের বা আয়নার মাধ্যমে দৃশ্যমান যা জনগণের দৃষ্টিগোচর হয়ে বাতাসে পর্যন্ত ভেসে বেড়াচ্ছে।
স্বচ্চতা কি? সাহসী পদক্ষেপ কি? দেশোন্নয়ন কি এমনকি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে দেশসেবার দৃষ্টান্ত কি তার সবই দেখেছে এবং শিখেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। বিশ্ব বিবেক এখন দু:খ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অনুতপ্ত হয়ে বাংলাদেশের কাছে মাথা নত করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের তাগিদে সম্পর্কউন্নয়নে ব্যতিব্যস্ত। আমি এই সততার শিক্ষা কলামটি ২০১৭ সালের ২১শে ডিসেম্বর এই পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু আজ শুধু পদ্মা সেতুর বাস্তবতাটুকু এর সঙ্গে যুক্ত করে বাকিটুকু খুবুখু রেখে একজন সৎ ব্যক্তির সততার স্তুতি গাইছি।
সততার এই দৃষ্টান্তগুলো আমাদের জীবনে কাজে লাগালে হয়ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে বাস্তবে বিশ্ব নেতৃত্ব দিতে বেশীদিন সময় লাগবে না। সাদামাটা বর্নীল ছন্দময় জীবনের মহা শিক্ষক ছিলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু। তিনি জীবন দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন, বাস্তবতার শিক্ষা দিয়েছেন, চিন্তা এবং কাজের সমন্বয় ঘটিয়ে দৃশ্যমান শিক্ষা দিয়েছেন। সেই মহান শিক্ষকের যে পারিবারিক শিক্ষা তা কিন্তু সর্বকালের এবং সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাই বলে আমার কাছে মনে হয়। খুবই অল্প সময় তিনি পেয়েছিলেন পরিবারকে দেয়ার জন্য কিন্তু এই অল্প সময়টুকুই কাজে লাগিয়েছিলেন যার সফল বাস্তবায়নকারী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। হয়তো তাকে কাছে থেকে দেখা সকলের সম্ভব হয়নি; কিন্তু ডিজিটাল যুগে এসে দেখা এবং পুর্বের সুখী-সম্বৃদ্ধ জীবনের ইতিকথা শুনার সুযোগ হয়েছে বা এসেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগানোই এখন আমাদের তরুন প্রজন্মের সুখ ও সমৃদ্ধ নীতি হওয়া উচিত।
আমি এখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক জীবন যখন বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখনকার ছোট একটি উদাহরণ দিয়ে নিন্দুক ও সমালোচকদের এমনকি কুৎসা ও মিথ্যা রটনাকারীদের বলতে চাই “সৎ ও পরিপূর্ণ বাঙ্গালীর জলন্ত দৃষ্টান্তে মিথ্যার দেয়াল না তুলে এর থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর জন্য প্রস্তুত হউন। ড. ওয়াজেদ মিয়া অত্যন্ত মেধাবি ছিলেন এবং সেই মেধার স্বাক্ষর রেখেই তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন এবং আনবিক শক্তি কমিশনের পরিচালক হয়েছিলেন। তাঁর সততা এবং কর্মনিষ্ঠতার কোন কমতি ছিল না। তিনি বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার স্বামী ছিলেন। তাঁর শশুর ছিলেন এই দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর কোন খেয়ালই ছিল না এই বিষয়ে। তাঁর কাছে সদ্য এস এস সি পাস করা তাঁরই ভাতিজা এসেছিল চাকুরীর জন্য। কারণ পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের দু:খ লাগবের জন্য। কিন্তু জনাব ওয়াজেদ মিয়া বলেন তোমরা কষ্ট কর এবং পড়ালেখা কর তারপর আমার মত কাজ কর; আমি অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। দেশের প্রধানমন্ত্রী আমার শ্বশুর বলে আমি পারব না তোমাদের চাকুরী দিতে। এটা লজ্জ্¦ারও বটে। বরং আমি টাকা দেয় তোমরা গিয়ে পড়ালেখা কর এবং যোগ্য হয়ে যোগ্য স্থানে বস। এই ছিল সহজ সরল সাদাসিদে মানুষটির হাস্যোজ্জ্বল জবাব। তিনি এই কথাটি কিন্তু বলেছিলেন তাঁরই আপন বড় ভাইয়ের ছেলেকে।
সততা কি এবং সততা সম্পর্কে এই ব্যক্তিটির কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া যায়? আমরা এখন কি করি একটু চিন্তা করুন এবং নিজেদেরকে বদলিয়ে ঐ মানুষটির মত দায়িত্ব পালন করুন। কারো আত্মীয় যদি ক্ষমতার ছোট খাট স্তরেও থাকে; তাহলেও আমরা সেটা ব্যবহারেরই উপর্যপুরি চেষ্টা চালাই। বিগত সরকারগুলোর সময় দেখেছি ক্ষমতা ব্যবহারের মহড়া। ভাবুনতো প্রধানমন্ত্রী শ্বশুর হলে আপনি/ আমি / আমরা কি করতাম? আর ঐ মহৎ ব্যক্তিটি কি করেছিল?
তাদের পারিবারিক বা সাংসারিক জীবনের জৌলুস কেমন ছিল? আসুন দেখাযাক ঘরকন্যা মানবীয় গুনাবলী সম্পন্ন মুজিবাদর্শের ধারক ও বাহক শেখ হাসিনা তখন তিন রুমের একটি বাসায় থাকতেন। নিজেদের বেডরুমে কোন খাট ছিল না; ছিল একটি মাদুর এবং এর উপর তোষক; যেখানে তারা ঘুমাতেন। মেহমানদের জন্য ছিল একটি একজনের খাট, যেখানে দু’জন কষ্ট করে ঘুমাইত। একজন মামা ও অপরজন ভাতিজা। আর ডাইনিং ছিল তিন চেয়ার বিশিষ্ট একটি টেবিল, যেখানে বেশী মেহমান আসলে একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করা যেত না। শেখ হাসিনা অতিথি সেবায় ছিলেন মহোজ্জ্বল এক মহিয়সী সেবিকা। তিনি সেলাই কাজ বেশী করতেন এবং নিজ হাতেই রান্না-বান্না করতেন। কি চমৎকার একটি সততার দৃষ্টন্ত।
ভাবুনতো আপনার স্বামী কোন ভাল পদে বা অফিসের পরিচালক হলে আপনি কি করতেন? কোথায় থাকতেন এবং কি সব আসবাবপত্রের পসরা সাজাতেন? বাসায় কি নিজে কাজ করতেন না করাতেন? মেহমানদেরকে রান্না করে খাওয়াতেন কি? বলুনতো কিভাবে সম্ভব হয়েছিল ঐ সময়ের ১ম সারির ১ম পরিবারের ছিম-ছাম বাগাড়ম্বরহীন পারিবারিক জীবন ধারনে। সততা, যোগ্য শিক্ষা, লোভহীন জীবন এবং মানুষের কল্যানের ব্রতী ও সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদ। মায়ের জিনগত ও বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা, বাবার দেখানো পথ সবই ছিল ঐ পরিবারের আদর্শ।
আরেকটি বিষয় যেখানে বাবা প্রধানমন্ত্রী সেখানে এই ছোট পরিসরের ফ্লাট এবং নিরহংকার নিজ্জলা জৌলুসহীন জীবন যাপন কি আপনার ও আমার এমনকি আমাদের দ্বারা সম্ভব হতো? আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি হতো না। কারন আমরা প্রায় রাষ্ট্রের অর্ধেক সম্পদই ভোগ করতে চাই। তাই এমনকি জৌলুসদিপ্ত জীবন যাপন করতাম। কিন্তু কেন সেই সময় একজন পরিচালকের স্ত্রী হয়ে, শুধু তাই নয় রাষ্ট্রের প্রধান যিনি; তিনি তাঁর বাবা, সেই প্রধানমন্ত্রীর কন্যা হয়ে কেন এত সহজ ও সাধারন জীবন যাপনে উনারা অভ্যস্ত ছিলেন। এটাই হলো শিক্ষা, গ্রামের মানুষ আগে বলত… এখনও হয়ত বলে “নদীর জল ঘোলাও ভাল আর জাতের মেয়ে কালোই ভাল”। এই কথাটি যথার্থই ছিল এবং আছে ও থাকবে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী তিনি তাঁর সৎ জীবনের যাত্রা শুরু করেছিলেন সেই শেখ পরিবারে জন্ম গ্রহণের মাধ্যমে; এই যাত্রা অব্যাহত রেখে যাচ্ছেন দেশের, দশের ও সমাজের কল্যাণের তরে। সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের নির্মিত্ত্বে। ইহকাল ও পরকাল উভয় জায়গায়ই সম্মানের স্থান অর্জনকারী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে সততার স্বাক্ষর রেখেছেন। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাঁর সততা এবং কঠোর পরিশ্রমী বাস্তবতানির্ভর কর্মকান্ড, সবই স্বীকৃত এবং পৃথীবির সবাই ডিজিটাল কল্যাণে এতদিনে তা জেনে গেছেন। একটি উদাহরণ হতে পারে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বরণের পর পাক দোসররা এদেশের শাসনভার গ্রহণ করেছিল। তখন বঙ্গবন্ধুকে মানুষের কাছে অপ্রীয় করার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্থাবর ও অস্থাবর এমনকি ব্যাংক ব্যালেন্স পযন্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজেছিল কিন্তু সুখের বিষয় হলো কোন অন্যায় বা অবৈধ কাজ, সম্পদ খুঁজে পায়নি তখন। তাই তারা আর মিথ্যা রটনা রটাতে পারলেন না। যা ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে দৃশ্যমান হিসেবে রক্ষিত আছে। সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা তিনি তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া সম্পদ ৩২ নম্বরের বাড়িটিও জনগণকে দিয়ে দিয়েছেন। এটি এখন মিউজিয়াম হিসেবে এমনকি স্মৃতিরোমন্থক হিসেবে জাতির জীবনে জড়িয়ে রয়েছে।
শেখ হাসিনা সৎ শাসক এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের কান্ডারী। এদেশের জনগণ দায়িত্ব দিয়েছে যোগ্য উত্তরসূরীর হাতে আর সেই দায়িত্ব তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছেন জনগণের তরে। তিনি তাঁর শেষদিন পযন্ত দায়িত্ব পালন করুক এই সোনার বাংলাকে সোনায় পরিণত করার জন্য। বলে রাখা ভাল তিনি শেখ হাসিনার অর্থ এবং অহমিকার জৌলুসহীন জীবন আমাদেরকে আদর্শ হিসেবে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাঁর জীবদ্দশায় আমরা চাই না তিনি অবসর গ্রহণ করুক এবং তাঁর পৌত্রিক ভিটায় (গোপালগঞ্জে ফিরে যাক)। আমরা চাই দেশ সেবায় ব্রতী থেকে শেষদিন পর্যন্ত অতিক্রান্ত করুক। তাঁর কাছে দেশবাসীর চাওয়া এবং দাবি এই একটাই।
শেখ হাসিনা অবসর গ্রহনের পর বাবার পৈত্রিক ভিটায় ফিরে যাবে এবং সেখানে বসবাসের জন্য ঘরও তৈরী করে রেখেছেন। এটি তাঁর সততার নিজস্ব ভাবনা। তিনি যা করছেন এই জাতির জন্য এবং তাঁর পরিবার যে ত্যাগ স্বীকার করে মহিমান্বিত করেছেন এই জাতিকে তাতো ভোলার বা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তাই জাতিরও কিছু দায় থেকে যায় ঐ পরিবারের উপর। তাই জাতি চায় আমাদের আশ্রয়ের স্থল ও ভরসার জায়গাটুকু যেন সব সময় মাথা উঁচু করে রাষ্ট্রিয় সম্মান ও মর্যাদায় শেষ জীবনে লালিত ও পলিত হয়। আমাদের অহৎকার আরো বেড়ে বিশ্বদরবারে সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হউক। বাঙ্গালী পেরেছে, পারবে এবং করে দেখাবে বিশ্নে নতুন এক নীতি, আদর্শ ও সাম্যের দৃশ্যমান সহবস্থান। শান্তি, নিশ্চয়তা ও স্থিতিশীলতার অভয়ারণ্য হউক আমার, আপনার এই প্রীয় বাংলাদেশ। আর এই ভীত রচিত হয়েছে এই বিশ্ব মানবতার মা শেখ হাসিনার হাত ধরে এবং তাঁর হাত ধরেই এগিয়ে যাক এই আমাদের আগামীর প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.