৯৩ খুন করা স্যামুয়েল সাজা খাটলেন ‘মাত্র’ ৬ বছর

প্রশান্তি ডেক্স ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে বেড়ে ওঠা স্যামুয়েল লিটলের। শিক্ষাজীবন হাইস্কুল পর্যন্ত। এরপর পড়াশোনা ছেড়ে অনেকটা ‘যাযাবর জীবনযাপন’ শুরু করেন তিনি। দোকানপাট লুট বা অ্যালকোহল-ড্রাগ কিনতে চুরি করা— এমন সব অপরাধে জড়িয়েছেন সেই কিশোর বয়স থেকেই। ১৯৫৬ সালে দোকানপাট লুট, জালিয়াতি, মাদকদ্রব্য এবং কপাট ভেঙে দোকানে অবৈধ প্রবেশের জন্য গ্রেপ্তার হন তিনি। অর্থাৎ, ১৬ বছর বয়সেই অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য নিজের নাম পুলিশের খাতায় লেখান তিনি।
আশির দশকের গোড়ার দিকে মিসিসিপি এবং ফ্লোরিডায় নারীদের হত্যার অভিযোগে স্যামুয়েল লিটলকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বিচারে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি। এ কারণে ছাড়া পেয়ে যান। এরপর গ্রেপ্তার হন ২০১৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) বলছে, এরপর জেরায় স্যামুয়েল স্বীকার করেন, তিনি ৫০এর বেশি মানুষকে খুন করেছেন। এফবিআইয়ের তদন্তে খুনের সংখ্যা ৯৩। খবর এএফপির।
স্যামুয়েল যাঁদের খুন করেছেন, তাঁদের শরীরে ছুরিকাঘাত বা গুলির ক্ষতের মতো কোনো চিহ্ন পাওয়া যেত না। ফলে অতিরিক্ত মাদক গ্রহণ বা দুর্ঘটনাই তাঁদের মৃত্যুর কারণ বলে ধারণা করা হতো। এফবিআইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ধারাবাহিক খুনি (সিরিয়াল কিলার) স্যামুয়েল লিটল। গত বুধবার এই ভয়ংকর খুনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ৮০ বছর বয়সে মারা যান। কারাগারের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। স্যামুয়েল লিটলের শিকারে পরিণত হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছিলেন নারী। ১৯৭০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে তিনি এত লোক হত্যা করেন। কিন্তু কয়েক দশক পর্যন্ত খুনিকে শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্যামুয়েল লিটল মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি যাঁদের খুন করেন, তাঁদের প্রায় সবাই ছিলেন মাদকাসক্ত ও দেহ ব্যবসায় যুক্ত। অনেক ক্ষেত্রেই খুন হওয়া নারীকে কখনো শনাক্ত করা যায়নি বা খুনের ঘটনায় তদন্ত হয়নি। তবে স্যামুয়েল যখন ধরা পড়েন, তখন কারাগারের ভেতরে থেকে একে একে খুন করা ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় বলা শুরু করেন। এরপর অন্তত অর্ধশত ব্যক্তিকে খুন করার সঙ্গে তিনি যুক্ত বলে গত বছর নিশ্চিত করে এফবিআই। তদন্ত সংস্থাটি বলেছে, স্বীকারোক্তিতে তিনি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো ‘বিশ্বাসযোগ্য’।
ক্যালিফোর্নিয়ার সংশোধন বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, স্যামুয়েল গত সকালে হাসপাতালে মারা গেছেন। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি। ২০১৪ সালে স্যামুয়েলকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁকে তিন দফা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেন আদালত। স্যামুয়েল ম্যাকডোয়েল নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা স্যামুয়েল সহজেই মুষ্টিযুদ্ধে তাঁর প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতেন। মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে সম্প্রতি বলা হয়, স্যামুয়েল হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.