সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছে…স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রশান্তি ডেক্স ॥ সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙার প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কমপক্ষে ১ হাজার ১৮৫ জন বাংলাদেশিকে গুলি বা নির্যাতন করে হত্যা করেছে বিএসএফ। গত ১০ বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে সর্বাধিক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদিও দিল্লি প্রতিবার আশ্বাস দিয়ে এসেছে, এই হত্যাকান্ড শূন্যে নামানো হবে। কিন্তু ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কমপক্ষে ৪৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি বা নির্যাতন করে হত্যা করে বিএসএফ।
২০১০ সালের পর সীমান্ত হত্যা কমতে শুরু করেছিলো। পরে সেটি আবার বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে বিএসএফের গুলি বা নির্যাতনে সর্বাধিক ৪৩ জনের মৃত্যু হয়। সংসদে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সাম্প্রতিককালে সীমান্ত এলাকার জনগণের মধ্যে ও দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কনফিডেন্স বিল্ডিংয়ের নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে যা সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক। টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি অবৈধভাবে যাতে কেউ শূন্য লাইন অতিক্রম না করতে পারে সে ব্যাপারে সীমান্তবর্তী এলাকায় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সীমান্তে বসবাসরত জনসাধারণের মাঝে বিজিবি নিয়মিতভাবে প্রেষণা প্রদান করছে। তবে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বলে প্রতীয়মান। সীমান্তে বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিকের দ্বারা বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বন্ধের বিষয়ে বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং সরকার এ ব্যাপারে কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ২০১০ সালের গত ২২ থেকে ২৬ ডিসেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত হত্যাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে বিএসএফ একমত পোষণ করেছিল। সীমান্ত হত্যাসহ অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ শূন্যের কোটায় আনার নিমিত্তে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি হতে বিজিবি-বিএসএফ রাত্রিকালীন যৌথ টহল পরিচালনা করছে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকা নজরদারিতে রাখার জন্য বিজিবি ইউনিটগুলো সার্বক্ষণিক টহল পরিচালনা করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফ-এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকা চিহ্নিত করে সেসব স্থানগুলো সমন্বিত টহল কার্যক্রমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এক বিওপি থেকে পার্শ্ববর্তী বিওপির মধ্যবর্তী দূরত্ব কমানো জন্য ১২৮টি বর্ডার সেন্ট্রি পোস্ট (বিএসপি) নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবির দ্বারা সীমান্ত এলাকায় সার্ভেলেন্স সিস্টেম স্থাপনের জন্য ৩২৮ কি.মি. স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যশোরের পুটখালি সীমান্তে ১৩ কিলোমিটার, সাতক্ষীরা জেলার মাদরা সীমান্তে ১১ কিলোমিটার, দিনাজপুর জেলার হিলি সীমান্তে ১৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সীমান্তে ১০ কিলোমিটারসহ সর্বমোট ৪৯ কিলোমিটার এলাকায় সার্ভেলেন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল আরো বলেন, এছাড়াও টেকনাফ-২ (কক্সবাজার) সীমান্তে ৫৫ কিলোমিটার, নওগাঁ জেলার হাপানিয়া-করমডাংগা সীমান্তে ১০ কিলোমিটার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-জহরটেক সীমান্তে পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারসহ সর্বমোট ৮০ কিলোমিটার এলাকায় বর্ডার সার্ভেলেন্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবশিষ্ট ১৯৯ কিলোমিটার এলাকায় বর্ডার সার্ভেলেন্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। সীমান্তে টহল তৎপরতার মাধ্যমে নজরদারি বৃদ্ধির জন্য বিওপিতে মোটরসাইকেল ও অল ট্রেইন ভেহিক্যাল (এটি) বরাদ্দ করা হয়েছে। গত ৯ মার্চ ২০১৮ তারিখে যশোর সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফ-এর দু’টি বিওপির (দৌলতপুর ও কল্যানী) দায়িত্বপূর্ণ ৮.৩ কিলোমিটার এলাকাকে অপরাধমুক্ত এলাকা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করা হয়। উক্ত এলাকাকে অপরাধমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করায় ওই এলাকার সীমান্ত অপরাধসহ চোরাচালান আশাতীতভাবে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে এবং সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.