প্রশান্তি ডেক্স ॥ মহামারির প্রকোপ কিছুটা কমে এলে দূরপাল্লার আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়; তবে লোকাল ট্রেনগুলো এখনো চালু হয়নি। অথচ দেশে ট্রেনযাত্রীর ৭৫ শতাংশই লোকাল ট্রেনের। স্বভাবতই লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় এসব যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ ট্রেন বন্ধ থাকায় সিংহভাগ রেলস্টেশনে নেই যাত্রীদের ভিড়। ফলে এ স্টেশনগুলোর ওপর নির্ভর করে যেসব মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো, তাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, করোনার কারণে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর অনেক আসন ফাঁকা থাকায় কমছে রেলওয়ের আয়ও। বোঝা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।
আমরা মনে করি, স্বল্প দূরত্বের ট্রেনযাত্রীদের অবহেলার চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে কর্মজীবী মানুষ ট্রেনযোগে বড় বড় শহরের কর্মস্থলে আসে এবং কাজ শেষে নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে যায়। অথচ এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের রেলব্যবস্থা এখনো অনেক পিছিয়ে। লোকাল রেলব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে আমরাও কর্মজীবীদের জন্য এমন সুবিধা করে দিতে পারি। দেশে গণপরিবহণ ব্যবস্থা ভালো নয়।
অধিকাংশ মানুষ বাসে চলাচল করে। বাসের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল এবং বাসের সেবার মানও প্রশ্নবিদ্ধ। সবচেয়ে উদ্বেগজনক, দেশে সড়কপথে দুর্ঘটনার হার অত্যন্ত বেশি। এ পরিপ্রেক্ষিতে লোকাল ট্রেন হতে পারে যথার্থ বিকল্প। কারণ ট্রেনভ্রমণ অনেকটাই নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
লোকাল ট্রেনব্যবস্থার উন্নতি হলে ঢাকার আশপাশে বসবাসকারী মানুষ সহজেই রাজধানীতে এসে কাজ শেষে বাসস্থানে ফিরে যেতে পারবে। এতে রাজধানীর ওপর জনসংখ্যার চাপ কমবে। কাজেই সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকার ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত লোকাল ট্রেনের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া।
বস্তুত দেশে লোকাল ট্রেনের প্রতি কর্তৃপক্ষের অবহেলা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ফলে অনেক স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে ট্রেন থামে না; নেই কোনো স্টেশন মাস্টার। এসব কারণে দেশের রেলব্যবস্থা এখনো যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি। এতে আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রেলওয়ে। তাই আমরা মনে করি, এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
এ লক্ষ্যে দেশে অধিকসংখ্যক ইঞ্জিন ও কোচ আমদানি করা প্রয়োজন। রেললাইনের সংস্কার হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। মোট কথা, লোকাল ট্রেনের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধিসহ দেশের সার্বিক রেলব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে।