কোভিড টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করুন;প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বা আ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ কোভিড-১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি সফল করতে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সকলের আমরা সহযোগিতা চাই । যাতে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য সবাই একটু নজর রাখবেন, ইনশাল্লাহ এই অবস্থার থেকে আমরা উত্তোরণ ঘটাবো।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে যে যাত্রা শুরু করলাম এর মাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষ করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে। আমরা সেটারই চেষ্টা করেছি।’ ‘বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে উঠবে,’ বলেও এ সময় দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের

মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে নার্স, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সেনাসদস্যসহ ৫ জন করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন। প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। প্রথম দফায় টিকা গ্রহণকারী ৫ জনের সঙ্গেই কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে অভিনন্দন জানান তিনি।
উদ্বোধনের পরপরই সারাদেশে টিকা প্রদানের নিবন্ধনের জন্য অনলাইন ‘সুরক্ষা’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে |
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা বিশ্বের অনেক দেশই এখনও টিকা দান কর্মসূচি শুরু করতে পারেনি। সেখানে আমাদের মত একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ পেরেছে। তিনি বলেন,‘সীমিত অথনৈতিক সম্পদ নিয়ো আমরা যে মানুষের কল্যাণে কাজ করি সেটাই আজকে প্রমাণিত হলো।’ তিনি এ সম্পর্কে আরো বলেন, ‘আমরা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শোকরিয়া আদায় করি। কারণ এই ভ্যাকসিনটা আমরা সময়মতে ক্রয় করতে পেরেছি এবং তা প্রয়োগের মাধ্যমে আজকে দেশের মানুষকে আমরা সুরক্ষা দিতে সক্ষম হব।’ পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই টিকা প্রদান করা হবে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় এই টিকার মাধ্যমে দেশ শিগগিরই করোনামহামারী থেকে মুক্তি পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ সরকার এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত কোভিডশিল্ড নামের তিন কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা ক্রয় করেছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ভারতে উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকা এবং কেনা টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে। পরবর্তী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসবে বাংলাদেশে।
অনলাইন রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) ছাড়া কেউ করোনা (কোভিড-১৯) টিকা পাবে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
২০ লাখ টিকা বাংলাদেশে উপহার স্বরুপ প্রদান করায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আরো ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা ক্রয় করেছি। এরমধ্যেও ৫০ লাখ এসে গেছে এবং যখনই এই টিকা আমরা দিতে শুরু করবো তখনই বাকি টিকাও এসে যাবে। এ ব্যাপারে কোন সমস্যা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী করোনার টিকা সংগ্রহের বিষয়ে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একটা নির্দেশ দেয়া ছিল- কোথায় কোথায় এই কোভিডের ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে আমরা অর্থদিয়ে তা যেন বুক করে রাখি। যাতে ভ্যাকসিন দ্রুত পাওয়া যেতে পারে। সেভাবেই আমরা উদ্যোগটা নিয়েছি। এরজন্য পৃথকভাবে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান এবং করোনা চিকিৎসায় ৬ হাজার নার্স, পাশাপাশি ডাক্তার ও ল্যাব টেকনিশিয়ান ও দ্রুত নিয়োগের তথ্য উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড ভ্যকসিন আনা থেকে শুরু করে এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং কোভিডের সংক্রমন রোধে গৃহীত পদক্ষেপে আমাদের পানির মত টাকা ব্যয় করতে হয়েছে তবুও আমরা দ্বিধা করিনি এবং প্রত্যেক জেলায় জেলায় যেন এর চিকিৎসা হতে পারে সে ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।’ তিনি এ সময় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সংশ্লিষ্টদের সাহসিকতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদও জানিয়ে বলেন তাঁদের প্রচেষ্টা তাঁরা করে যাচ্ছেন বাকিটা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হাতে। তিনি বলেন, যেখানে অনেকে তাদের বাবা-মাকে দেখতে চায়নি সেখানে তাঁদের কাফন-দাফনে তাঁরা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্বাস্থ্যকর্মী ) অংশ নিয়েছেন।
ঢালাও সমালোচক বা অযথা সমালোচনাকারিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকে ‘কিছু ভাল লাগে না’ নামের রোগে ভোগে এবং যার কোন ভ্যাকসিন রয়েছে কি-না তা তাঁর জানা নেই।” শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন ভ্যাকসিন আসার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো টেস্ট করা হয় এবং তারপর দেওয়া হয়। আমাদের দূর্ভাগ্য হলো- কিছু কিছু লোক থাকে সব কিছুতেই একটা নেতিবাচক মনোভাব তারা পোষণ করে। হয়তো তাদের কাছ থেকে মানুষ কোন সাহায্য পায় না। কিন্তু কোন কাজ করতে গেলে সেখানে বিরূপ সমালোচনা, মানুষের ভেতরে সন্দেহ ঢোকানো, মানুষকে ভয়-ভীতি দেখানোটা কারো কারো অভ্যাস আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কিছু ভাল লাগে না, এই ধরনের রোগ কিন্তু পত্রিকা দেখলেই পাবেন। সেখানে সব কিছুতে একটা দোষ খোঁজা, এই ভ্যাকসিন আসবে কি আসবে না, আসলে পরে এত দাম হলো কেন, এটা চলবে কি না, দিলে কি হবে- নানা প্রশ্ন তাদের।
সমালোচনাকারীদেরও টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যাই হোক আমি চাই তারাও সাহস করে আসবেন তাদেরকেও ভ্যাকসিন দিয়ে দিবো। যাতে তারা সুরক্ষিত থাকেন। কারণ তাদের যদি কিছু হয় তাহলে আমাদের সমালোচনাটা করবে কে। তিনি এ সম্পর্কে আরো বলেন, সমালোচনার লোকও থাকা দরকার। থাকলে আমরা কিছু জানতে পারি, আমাদের কোন ভুল ভ্রান্তি হলো কি না। সে জন্য তাদেরকে আমি সাধুবাদ দিচ্ছি। তাদের সমালোচনা যত হয়েছে আমরা কিন্তু তত বেশি দ্রুত কাজ করার একটা প্রণোদনা পেয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষকেও আমরা ধন্যবাদ জানাই এই কারণে যে, যখনই তাঁদের হাত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার থেকে শুরু করে মাস্ক পরিধানের আহ্বান করেছি এবং নিজের ও অপরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলেছি, সাধারণ মানুষ সেটা শুনেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর সমর্থন ছাড়া এত কঠিন কাজ করা সম্ভব ছিলনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.