প্রশান্তি ডেক্স ॥ পাহাড়ের শরীর বেয়ে টলমলে স্বচ্ছ পানির ধারা গড়িয়ে পড়ছে ১৫০ থেকে ১৬০ ফুট ওপর থেকে। নির্জন পাহাড়ের ওপর থেকে আছড়ে পড়া স্রোতোধারা কলকল শব্দ বয়ে যাচ্ছে সমতলে। চোখজুড়ানো দৃশ্যের পর্যটনকেন্দ্রটি হচ্ছে হামহাম জলপ্রপাত। অবস্থান মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায়। লতাপাতা, গুলা বাঁশবন, বুনোফুল ও ফলের গাছ পরম মমতায় আগলে রেখেছে এই জলপ্রপাতকে। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের র্করমা বন বিটের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এ জলপ্রপাত। এটির নাম ও উচ্চতা নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত। স্থানীয় বাসিন্দারা একে ‘হামহাম ঝরনা’ বলে থাকে। কেউ কেউ আবার ‘হাম্মাম’, অনেকে আবার হামহাম নামে ডাকে। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত। নয়নাভিরাম হামহাম জলপ্রপাত একনজর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা আসেন। উঁচু-নিচু গহীন অরণ্যের সাত কিলোমিটার টিলা, ছড়া ও পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে এ জলপ্রপাত দেখতে যেতে হয়।
সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার পর্যটকদের সংখ্যা বেশি থাকে। চাম্পারায় চা-বাগান পাড়ি দিয়ে কলাবন বস্তি থেকে হাতে একটি বাঁশের লাঠি নিয়ে সাবধানে পথ চলতে হয়। এ সময় দুই পাশের বনের দৃশ্য যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করে। যাওয়ার পথে দেখা মেলে নানা ধরনের গাছগাছালি, পশু ও পাখি। সীমান্তবর্তী চাম্পারায় চা-বাগান পার হয়ে যেতে হয় কলাবন বস্তিতে। কলাবন গ্রামের শেষ প্রান্ত থেকে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনের এলাকা শুরু। এ কলাবন থেকেই বনের মধ্যেই ট্র্যাকিং করতে হবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। কলাবন পাড়া থেকে গাইড নিয়ে যেতে হয়। গাইড না নিলে রাস্তা হারিয়ে পড়তে পারেন মহাবিপদে। কারণ, রাস্তায় কোনো সমস্যা হলে কাউকে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
পাহাড়-টিলার ঝিরিপথে হেঁটে যেতে যেতে পাখির সুমধুর কলরব ও ঝিঁঝি পোকার শব্দে মনে ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি হবে। এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে উঁচু মোকাটিলা বাঁশবনে উঠে আবার ওপর দিকে নেমেই একসময় পৌঁছানো যায় হামহাম জলপ্রপাতের কাছাকাছি। কিছুদূর এগোলেই শোনা যায় পানি পড়ার টিপটিপ শব্দ। যাতায়াতের পথটি ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্গম বলেই সবাই, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা হামহাম জলপ্রপাত এলাকায় যেতে সফল হন না। আবার অনেকেই ফিরে আসেন কিছু রাস্তা পাড়ি দেওয়ার পর। রাস্তায় কয়েক দফায় বেশ কিছু পর্যটক ক্লান্ত হয়ে কাঙ্ক্ষিত হামহাম ঝরনা না দেখেই বাড়ির পথে ফেরেন। তবে সাধারণত তরুণেরাই হামহাম যাওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে থাকেন। ঘুরতে আসা পর্যটকদের মধ্যে ৮০ শতাংশই তরুণ-তরুণী। দৃঢ় মনোবল থাকলে হামহাম ঝরনার রূপ দেখা সম্ভব। কলাবন বস্তি থেকে বনাঞ্চলে প্রবেশের পর ছড়ার তীরে পায়ে হাঁটার উপযোগী রাস্তা করা হলে এবং দু-একটি টিলার গা ঘেঁষে পায়ে হাঁটার রাস্তা করে দিলে সহজেই হামহাম জলপ্রপাতে যেতে পারবেন সব বয়সী পর্যটক। এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, এটি সম্পূর্ণরূপে অ্যাডভেঞ্চার প্রকৃতির পর্যটনকেন্দ্র। আপাতত এখানে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে বনের ভেতর যাতায়াতের উন্নয়নের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি নির্ভর করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ওপর। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।