প্রশান্তি ডেক্স ॥ কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছেন না তিনি। গত ৩১ জানুয়ারি মেয়ের মৃত্যুর পর থেকে একটা প্রশ্নই তাঁর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে—কখন, কীভাবে তাঁর মেয়ে ‘উচ্ছৃঙ্খল’ ছেলেমেয়েদের খপ্পরে পড়লেন। গতকাল বুধবার রাতে ঝিনাইদহে মেয়ের কবরের কাছে যান সন্তানহারা এই পিতা। সেখান থেকেই মুঠোফোনে । মেয়ের মৃত্যুর পরদিনই বাবা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। তাঁর মেয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। বাবার অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে মদ পান করিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আসামি করা হয় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মর্তুজা রায়হান চৌধুরী (২১), নুহাত আলম তাফসীর (২১), আরাফাত (২৮), নেহা (২৫) ও অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে। মামলা করার চার দিন পরও নেহা ও অজ্ঞাতপরিচয় পঞ্চম ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করো যায়নি। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে বলেন, এই ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামিরা ছাড়াও আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হতে পারেন। রায়হান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আরাফাত তাঁদের চেয়ে বয়সে বড়। নেহাকে তাঁরা এর আগে কখনো দেখেননি। মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে এখনো কিছু জানেন না ছাত্রীর বাবা।
গণমাধ্যমে যা ছাপা হচ্ছে, টেলিভিশনে যা দেখানো হচ্ছে, তা-ই পড়ছেন ও দেখছেন। পুলিশ তাঁকে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু জানায়নি। তিনি নিজেও নেহা বা অন্য আসামিদের চেনেন না। ঠিক কখন জেনেছিলেন মেয়ে মৃত্যুশয্যায়? এই প্রশ্নে মেয়েটির বাবা বলেন, ২৯ জানুয়ারি রাতেও মেয়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। বলেছিলেন, ভালো আছেন, বাসায় আছেন। পরদিন সকালে ছোট মেয়ে ফোনে তাঁকে জানায়, বড় বোন হাসপাতালে ভর্তি, অবস্থা ভালো না। প্রথমে খবরটি তাঁর স্ত্রীকে দিয়েছিলেন মেয়ের এক বন্ধু। তাঁর স্ত্রী তখন কুষ্টিয়ায়। ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ছোট মেয়েকে নিয়ে তিনি দুদিনের জন্য বাবার বাড়ি যান। এর মধ্যে যে দুর্ঘটনা ঘটে যাবে, ভাবতেও পারেননি।সন্তানহারা এই পিতা বলেন, যাঁদের তিনি আসামি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বন্ধুত্ব হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগেই। আরও বললেন, ‘আমি আমার জীবনের সর্বস্ব দিয়েছি মেয়ের জন্য।
কোনো দিন নিজের সুখ-সুবিধার কথা ভাবিনি।’ পরে বললেন, মেয়ে তাঁকে কখনো নিরাশ করেননি। লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন, পরীক্ষায় ভালো ফল করতেন। বেঁচে থাকলে তাঁকেও শিক্ষা–দীক্ষায় হয়তো ছাড়িয়ে যেতেন, এমনটাই ভাবতেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ছেলেমেয়েরা এত টাকাপয়সা কোথায় পাচ্ছেন? এটা খতিয়ে দেখা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মানুষটিকে (মারা যাওয়া ছাত্রীর বাবা) ওষুধ প্রযুক্তি খাতের লোকজন চেনেন। ঢাকায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এরপর চাকরি নিয়ে চলে যান চট্টগ্রামে। তবে প্রতিদিন কয়েকবার মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতেন তিনি। নিয়ম করে রাতে ভিডিও কলে কথা বলতেন। চাকরির জন্য মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকার পর এই আশঙ্কা তাড়া করে ফিরত, তাঁর যদি কখনো আর মেয়েদের সঙ্গে কথা না হয়! গত শুক্রবার রাতে মেয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে চেয়েছিলেন। মেয়ে ফোন ধরেননি। তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে থেকে একপর্যায়ে তিনিও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। শেষবারের মতো মেয়েকে দেখতে (জীবিত অবস্থায়) না পারার কষ্ট কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি।