কসবায় শত বছরের পুরনো রাস্তায় রাঁতের আধারে টিন শেড উঠানোর ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কসবার কুটি বাজারে রাতের আঁধারে শত বছরের পুরনো রাস্তায় টিনশেড উঠানোর ফলে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। শতবছরের এই রাস্তা বিক্রি করেছেন কসবা শহরের প্রাক্তন মহিলা এমপি সদ্য প্রয়াত মমতাজ বেগমের দুই সহোদর ভাই ফজলুর রহমান ও এডভোকেট আজিজুর রহমান। অন্যদিকে এই জায়গার ক্রেতাগন হলেন কুটি ইউপি আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহাম্মদ, শামিম রেজা, জীবন মোদক ও বিএনপি নেতা আবদুল মতিন। এ

ঘটনায় পুরো উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শতবছরের পুরনো এই রাস্তা প্রায় দেড়শ ফুট দীর্ঘ ঘর উঠানোর ফলে দুই পাশের ভিটির মালিকরা দুর্ভোগে পড়েছে। এই সকল দোকানে মানুষ যাতায়াত সহ নানাবিধ সমস্যা ও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদনে বাধা দিয়েও ভূক্তভোগীরা কোনো প্রতিকার না পেয়ে আদালতে ওই দলিল অবৈধ ঘোষনার জন্য মামলা করেন। মামলার বিবরন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বক্তব্যনুসারে কুটি মৌজার ১৫২২ দাগে ওই রাস্তার জায়গার পরিমান ৮শতক ১২ পয়েন্ট। এতে সরকারী জায়গা ২ শতক। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ২শ ফুট ও প্রস্থ ২০ ফুট। ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬ শতক ১২ পয়েন্ট জায়গার মধ্যে কসবার ফজলুর রহমান গত বছরের ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহাম্মদের কাছে ৫৯৯২ নং দাগে সাফ কবলা দলিলমূলে ৪ শতক ৬ পয়েন্ট এবং তার ভাই আজিজুর রহমান ৬০৯৩/২০ দাগে সাফ কবলা দলিলে কুটি গ্রামের এম এ মতিন, শামিম রেজা ও জাজিয়ারা গ্রামের জীবন মোদক কাছে ১ শতক ৬ পয়েন্ট জায়গা বিত্রি করেন। এর পরই গত ৬ ডিসেম্বর রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত জায়গাটিকে বিক্রয় রেকর্ডে আজিজুর রহমান ও ফজলুর রহমানের স্বত্বকে অবৈধ দাবী করে তাদের দলিল দুটি অবৈধ ঘোষনার দাবীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুগ্ম জেলা জজের দ্বিতীয় আদালতে মামলা করেন পাশ্ববর্তী ১৫ ভিটি মালিক ও ব্যবসায়ী। তাদের প্রত্যেকের দলিলেই চৌহদ্দি হিসেবে এটিকে রাস্তা হিসেবে দেখানো হয়েছে। মামলায় দাবী করা হয় বিএস রেকর্ডটি ফজুলর রহমান ও আজিজুর রহমানের নামে অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে। রাস্তার দু’দিকে জায়গা ক্রয়-বিক্রয় দলিলেই নালিশা ভূমিকে রাস্তা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিক্রেতা ফজলুর রহমানের সংগে কথা বললে তিনি জানান জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এটি আমাদের জায়গা। আমি বিধি অনুসারে বিক্রি করেছি। কুটি শিল্প বণিক সমিতির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জিতু বলেন; ফজলুর রহমান অনেকের কাছেই এই নালিশা ভূমি বিক্রি করতে চেয়েছেন। কিন্তু কেহই এই জায়গা কিনতে রাজি হননি বাজারের ব্যবসায়ীদের বৃহত্তর স্বার্থে। তাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা মোস্তাক আহাম্মদ, শামিম রেজা, জীবন মোদক ও বিএনপি নেতা এমএ মতিনের কাছে বিক্রি করেছেন। বিতর্কিত জায়গা বলেইতো রাতের আধারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বহিরাগতদের নিয়ে জায়গায় টিনের শেড তুলেছেন। কুটি ইউপি আওয়ামী লীগ যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিতর্কিত জায়গার ক্রেতা মোস্তাক আহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন; জায়গাটি বৈধভাবেই ক্রয় করা হয়েছে। বিক্রেতার নামে বিএস রেকর্ড ও হালসনের খাজনা পর্যন্ত দেয়া আছে। তাই ্এই জায়গা ক্রয় করেছি যতটুক রাস্তা থাকার কথা তা রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচেছ। ওই জায়গার পূর্বের বিভিন্ন রেকর্ডের উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী সহ বাদী পক্ষের ভিটি মালিকগন ও ব্যবসায়ীরা জানান;সিএস রেকর্ডে ৯৩৪ নম্বর খতিয়ানের ১০৮৬ দাগে রাম সুন্দর ডাক্তারের নামে জমির পরিমান ৮শতক উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এসএ ১০৬৬ নং খতিয়ানের ১০৮৬ দগে আজিজুর রহমান ও ফজলুর রহমানের পিতা আবদুল গনি ও তাদের চাচা আবদুুল গফুর ভ’ইয়ার নামে ১০ শতাংশ এবং ১০৬৫ খতিয়ানের ১০৮৬ দাগে মাহফুজুর আলমের নামে ৩ শতাংশ জমির মালিকানা রেকর্ড হয়। কিন্তু সিএস রেকর্ডে জমির পরিমান মোট ৮ শতাংশ উল্লেখ থাকলেও এসএ খতিয়ানে জমির পরিমান মোট ১৩ শতাংশ দেখানো হয়। এরপরই ১৯৮৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মাহফুজুল আলম ১০৬৬ নং খতিয়ানের রেকর্ড বাতিল চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাব জজ আদালতে একটি মামলা করেন (যাহার নম্বর ৮৬/৮৫) । এই মামলায় মাহফুজুল আলমের পক্ষে একতরফা রায় এতে এসএ খতিয়ানের রেকর্ড বাতিল হওয়ায় সাবেক ১০৮৬ এর হালে ১৫২২ দাগে আজিজুর রহমান ও ফজলুর রহমানের জমির মালিকানা বৈধ নয় বলে দাবি করেন তারা। তহশিলের রেকর্ড অনুসারে ৮শতক ১২ পয়েন্ট জায়গা সাবেক ম্যাপে ১০৮৭/১০৮৮ এবং বর্তমান ১৫২২ দাগে রয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ জায়গা বিক্রির দলিল করার সময় ১৫২২ এর সাবেক ওই দাগ ছাড়াও ১০৮৮,১০৯০,১০৯১ ও ১০৯২ দাগ উল্লেখ করা হয়। ব্যবসায়ীদের দাবী ১৯৫৫ সালের পূর্বে যেসব দলিল হয়েছে সেখানেও ওই জায়গাকে রাস্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। রাস্তার পাশের ভিটি মালিকদের দলিলের চৌহদ্দিতে এটিকে রাস্তা হিসেবে দেখানো হয়েছে। কুটি ইউপি চেয়ারম্যান ও কুটি শিল্প বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ছাইদুর রহমান স্বপন বলেন; বাজারের ব্যবসায়ীরা আমার কথা শুনেননি। তারা কোর্টে নালিশা ভূমি নিয়ে মামলা করে দিয়েছেন। কসবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাছিবা খান বলেন; মোস্তাক আহাম্মদ গংরা নামজারীর জন্য আবেদন করেছিলেন। যেহেতু এ বিষয়ে আপত্তি আছে এবং মামলা মোকাদ্দমা রয়েছে তাই আমি নামজারী রেকর্ড বন্ধ রেখেছি। রাস্তাটি দখল হওয়ার ফলে এখন আর যানবাহন পার্কিং করতে পারছেনা। তাই সারাদিনই কুটি বাজারে যানজট লেগে থাকে। প্রায় ৫০/৬০ জন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এরা পাকাঘর নির্মানের চেষ্টা চালাচ্ছে। কুটি বাজরটি জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র। নালিশা রাস্তার দু’পাশেই বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও ব্যবসা কেন্দ্র রয়েছে। যান চলাচল সহ ক্রেতা-বিক্রেতার চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.