ভাষার মাসে ভাষার চর্চা

ফেব্রুয়ারী মাস আসলেই যেন ভাষার কদর বেড়ে যায়। শুধু যে দেশে তা কিন্তু নয় বরং বিদেশেও। এই কদরে ঘদ ঘদ এখন আমাদের প্রীয় মার্তৃভাষা, বীর বাঙ্গালীর ভাষা, বায়ান্নর ভাষা, একুশের রক্তমাখা স্বর্ণখচিত ভাষা, বঙ্গবন্ধুর ভাষা, আর এই ভাষার নাম হলো বাংলা ভাষা; যা আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত। আর ঐ স্বীকৃত দিনটিই আমাদের সামনে সমুজ্জ্বল রাখে মায়ের ভাষা বাংলাকে। আসছে একুশে ফেব্রুয়ারী হউক ঐ সমুজ্জ্বলের উজ্বল এক নক্ষত্রখচিত অধ্যায়ের। এই ভাষাতে গর্ব করি, এই ভাষাতেই কথা বলি, এই ভাষাতেই প্রাণ বিলিয়ে জীবনের চাকা সচল রাখতে সচেষ্ট থাকি, এই ভাষাতেই অন্যকে আপন করে নেয়ার কাহিনী রচনা করি, এই ভাষাতেই সকল কিছু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করি। তাইতো ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীক ভাষা সিমাবদ্দ না হয়ে সমগ্র সময়ের জন্যই ভাষা প্রধান্য পাক এবং সকল কাজে দেশে ও বিদেশে এই ভাষার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়ে বহুলাংশে ব্যবহৃত হউক এই কামনা ও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক প্রতিটি বাঙ্গালীর মনিকোঠায়।
সালাম,বরকত, রফিক, জাব্বারসহ লক্ষ কোটি শহীদের রক্তস্নাতে এই অর্জন আজোও যারা টিকিয়ে রেখেছে তাদেরকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। মিশ্র ও উগ্র পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বলয়ে আবৃত আমাদের এই প্রীয় ভাষাকে দৃশ্যমান রাখতে এবং মর্যাদাকর আসনে চলমান রাখতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে সেইসকল বিরসেনানীদের জানাই অন্তরের গভীরতম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। বাঙ্গালী পেরেছে এবং পারবে ও করে দেখিয়ে যাচ্ছে ও যাবে এই মনোভাবাসম্পন্ন সকলকে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। বাংলার সঠিক ব্যবহার, উচ্চারন, ব্যাকরণ, বাক্যগঠন এবং প্রাঞ্জল রসায়ন অক্ষুন্ন রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রমরতদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগাতে সাধ্যানুযায়ী সকল কিছু করার প্রত্যয়ে অঙ্গিকারাবদ্ধ আছি ও থাকব। বাংলাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্রা ও তামাসা অগ্রহনযোগ্য এমনকি কাম্য নয় তাই যারা করছেন (বুঝে অথবা না বুঝে) তাদের বিনয়ের সহিত আহবান জানাচ্ছি ফিরে আসুন এবং বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাস জানুন ও ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করতে নিজের ভুমিকা রাখুন।
জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষাতে এখন বাংলা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাকে নিয়ে চলছে গভেষনা এবং নতুন করে জানা ও শিখার প্রতিযোগীতা। তাই এই আন্তর্জাতিক অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে এখনও অফিসিয়াল চিঠিপত্রে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজী প্রচলিত। তাই এই ক্ষেত্রে সরকারের এমনকি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে আগামীতে দেশী ও বিদেশী সকলকে বাংলার উপর নির্ভরশীল হয়ে বাংলাতেই এই দেশে কাজ পরিচালনা করতে হয়। দেখুন থাইল্যান্ড কিভাবে পেরেছে এবং কর্মসম্পাদন করে নিজ ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে দৃশ্যমান এমন অজস্র নজীর এখন সকলের সম্মুখ্যে। তাই আমাদের দেশের অফিস আদালতে এই বাংলা ভাষা প্রাধান্য পাবে এবং সর্বান্তকরণে ব্যবহৃত হবে এই কামনা ও প্রত্যাশা করা নেহায়েত অন্যায় নয় বরং আমাদের যৌক্তিক দাবী। অনলাইন নির্ভর সকল কাজে বাংলার ব্যবহার প্রচলন করা এখন সময়ের দাবী এবং এই দেশের তরুন প্রযুক্তি প্রবক্তাদের প্রধান ও প্রথম করনীয় কাজ। নতুন ওয়েব পোর্টাল ও সফট্ওয়ার এর ক্ষেত্রেও বাংলা ও ইংরেজী একসঙ্গে ব্যবহৃত হউক। এই কামনাই করছি।
ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেন ইতিবাচক ও সুশৃঙ্খল এবং শুদ্ধসহ সর্বমহলে গ্রহনযোগ্যতা অর্জনের নিম্মিতে ভাষার সৌন্দর্য্য-মাধুয্য এবং পরিচ্ছন্নতা অপরিহায্যে পরিণত হয়। নোংরামি, গালমন্দ, নেতিবাচক নোংরা ভাষার ব্যবহার বিলুপ্তকরণে সকলের সর্বান্তকরন প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। মিডিয়ায় বিশেষ করে টকশো, নাটক এবং অনলাইন ও স্যোসাল মিডয়ার মাধ্যমে বহুল প্রচলিত নোংরামি পরিলক্ষিত হওয়ার বদলে ইতিবাচক পরিছন্ন সৌন্দয্য নির্ভর ব্যহার প্রচলিত রাখার চেষ্টায় সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। কাউকে ছোট করার জন্য বা মজা নেয়ার জন্য এমনকি নিজেকে বড় করে তোলার জন্য নোংরামির মাধ্যমে আমাদের এই পবিত্র ভাষাকে আর অপমান অপদস্ত করবেন না। সুস্থ্য সবল মানষিকতা নিয়ে ভাষার সৌন্দয্যের মাধ্যমে আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থ্য করুন এবং আগামী প্রজন্মকে সভ্য সমাজে সভ্য হয়ে গড়ে উঠতে সহায়তা করুন। বাংলাকে পৃথীবির সবচেয়ে সুন্দর ও গ্রহনযোগ্য এবং সমৃদ্দ এমনকি অতি উন্নত মনের ভাব আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে রূপদান করা এখন আমার আপনার সকলের দায়িত্ব। তাই আমাদের দৈনন্দিন সকল কর্ম এবং পথচলায় এই বাংলাকে সম্মান করতে এমনকি শ্রদ্ধার আসনে আসীন করাতে স্ব্ স্ব ভুমিকা পালনে সচেষ্ট থাকি। বাংলা আমার মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা, বাংলায় কথা বলি, শিখি, লিখি এবং এই বাংলাকে সকলের জন্য উন্মক্ত করে সকলের প্রাণের ভাষায় পরিণত করতে ইতিবাচক সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি।
ভাষার মাসে, স্বীকৃতির মাসে এই আমাদের সকলের দাবি ও চাওয়া-পাওয়া। সবাইকে স্বশ্রদ্ধ সালাম ও ভালাবাসা। বীর শহীদানদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক। খোদার সৃষ্টি বহুভাষাভাষিদের মধ্যে বাংলাকে সর্বাঙ্গে প্রাধান্য দিয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে নিশ্চিত মনে এগিয়ে যেতে এই বাংলাকেই ব্যবহার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.