ভাষা চর্চায়ও ভিন্নতা

ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে ভিন্নতা এনে দিয়েছে করোনা নামক অদৃশ্য এক পরাশক্তি। এই শক্তির বলয়ে এখনো বিশ্ব নেতারা এমনকি ধনীক শ্রেণী। আর ঐ ধনিক শ্রেণীর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়েই লালিত-পালিত হচ্ছে অদৃশ্য করোনা। বিশ্বকে ধনীক শ্রেণীর কাছে নতি স্বীকারের নতুন উপায় হলো করোনা এবং এর প্রতিকারের সকল উপায়। সাধারণ জনগণ আদতে ঐ ধনিক শ্রেণীর সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা বুঝতে না পাড়লেও লালসা ঠেকাতে এমনকি নতুন করে বিশ্ব সাজানোর কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরীর চেষ্টা অনিচ্ছাস্বর্ত্ত্বেও কিছুটা করে দেখিয়েছে। হয়তো সামনে আরো সুযোগ পাবে গভিরতা বুঝে ধনীদের পাতানো ফাঁদ থেকে নিজেকে, সমাজ, সংস্কৃতি, মানবিকতা ও আবেগকে (ইমোশনকে) রক্ষা করতে। মানুষের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টিতে যে ফাঁদ করোনা দ্বারা এটেছিল সেটা অন্তত কিছুটা লাঘব হয়েছে; তবে ঐ অসাধুরা কিন্তু বসে নেই। এখন তারা নতুন করে ফন্দি আটতে যাচ্ছে যা করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর।
২১শের চেতনায় যে ভাষা আজ বেঁচে আছে এবং প্রানের সঞ্চার ঘটিয়ে ধারাবাহিক ক্রমোন্নতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে এই করোনায় ছোবল এটেছে তবে হাজারো বাহারি প্রতিবন্ধকতার মাঝে করোনা প্রতিবন্ধকতাটুকু আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। একুশের স্মৃতিবিজরিত দিনগুলোর স্মরণের অনুষ্ঠানমালায়ও এসেছে নতুনত্ব বা পরিবর্তন। যে একুশ ভয়কে জয় করেছিল সেই একুশ আজ আবারও ভয়ে অমলিন হয়ে কাতরাচ্ছে। এখানে ভয়ের আতঙ্কে জড়োসড়ো করে ঘরবন্দি করে রেখেছে আমাদের বাংলা সংস্কৃতির উর্বর চর্চার দৃষ্টান্তকে। শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রভাত ফেরী, স্মৃতিবিজরিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রেই যেন এক ভাটার লক্ষন যা ভয়ের আশ্রয়ে আশ্রীত। তবে এই ক্ষেত্রে বিশেষ করে ডিজিটাল প্লাটফ্রমে এখন কিছু কাজ হচ্ছে। সময়কে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাচ্ছে বটে কিন্তু আবেগ এবং ভাবাবেগের ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতিহাসের বিচ্ছেদ এমনকি আতিতের স্মৃতির গৌরব ও অর্জনগুলো ম্রিয়মান হয়ে যাচ্ছে। তবে এর থেকে বের হওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয় সাহস দরকার তা সঞ্চয় করে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
অনেক ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে এবং এর প্রচারে ও প্রসারে বাংলার স্থলে ইংরেজী ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই বাংলিশ ব্যবহার থেকে বেড় হয়ে এখন নতুন দিগন্তে পৌঁছার লক্ষ্যে বাংলিশের পরিবর্তে বাংলার প্রবর্তন অত্যাবর্শকীয়। এই অধ্যায়ের শুভ সূচনায় আমাদের প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিবিদদের নতুন চিন্তার আবিস্কার বাংলা নির্ভর হতে হবে। বাংলাকে ব্যবহারোপযোগী করে তোলার জন্য প্রযুক্তির সর্বাঙ্গে বাংলার অবস্থান পাকাপোক্ত করতে হবে। অনলাইন ভিত্তিক সকল প্রচারণায় এবং স্যোসাল মিডিয়ার সকল উপকরণে বাংলাকে প্রাধান্য দিয়ে চলামান কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে, তবে বাংলার জাগরণে আইটি সেক্টরের গুরুত্ব অবিস্মরনীয় হউক। যে কোন আন্তর্জাতিক সফটওয়ার এমনকি দেশীয় সফ্টওয়ার ওয়েব পোর্টালগুলো এখন থেকে বাংলার মাধ্যমে পরিচিতি পাক এবং বাংলার বিকীরণ সর্বান্তকরণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ুক। বাংলা সফ্টওয়ার দ্বারা পৃথিবীকে আকৃষ্ট করে আষ্টে-পৃষ্টে স্বর্ণলাতার মতো জড়িয়ে পড়ুক। যা দেখে বিশ্ববাসী বাংলার উপর নির্ভরশীল হউক।
কথা বলায় এমনকি লিখায় ফাকে ফাকে ইংরেজীর প্রচলন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হউক এবং সম্পূর্ণ বাংলা ব্যবহার পরিপূর্ণতায় পুণ্যতা পাক। বিশ্বময় বাংলার জয় জয়াকার দৃশ্যমান হউক। বাংলাকে নিয়ে আরো গভেষণালব্দ ফল উদ্ভাসিত হউক। বিজ্ঞান, ইতিহাস, প্রযুক্তি, ধর্মীয় ফলাফল মোটকথা সব ক্ষেত্রেই বাংলার প্রচলন দৃশ্যমান হউক। মায়ের ভাষায় মত প্রকাশের স্বাধীনতায়ও বাংলাকে প্রধান্য দেয়া হউক। বাংলাই হউক আমাদের এমনকি বিশ্বময় মানবকুলের প্রাণের স্পন্দন। শিক্ষা প্রসারে বাংলার জাগরনে ভুমিকা রাখতে কাজ করুক সকল শিক্ষাঙ্গন। আমাদের দেশীয় বাংলা বিরোধী সকল অপতৎপরতা বন্ধ হউক। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাঙ্গন উন্মুক্ত করা হউক। নতুন কোন বিস্ফোরণ বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই সচেতন মহল শান্তি ও স্থিতিশীলতায় মনোনিবেশ করুক। বাংলায় মত প্রকাশে যারা এখন বিব্রত তাদেরকে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় অবাধ বিচরণের সুযোগ সুপ্রতিষ্ঠকরণে ভুমিকা দৃশ্যমান রাখুক। যারা এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জীবন দিয়েছেন সেইসকল প্রক্রিয়া সহজীকরণের মাধ্যমে জীবন দেয়া এবং যন্ত্রণায় ছটফটানি থেকে মুক্ত করনের ব্যবস্থা স্পষ্ট করে দৃশ্যমান রাখুন। ভাষা ব্যবহারের যে ত্রিমাত্রিক অশনি সংকেত শুরু হয়েছে এবং বিরাজমান রাখার চেষ্টা চলছে তার অবসান ঘটানোর প্রয়াস অব্যাহত থাকুক। জয় আমাদের হয়েছে এবং হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.