স্পোর্স্ট ডেক্স ॥ অভাবনীয় কিছুই করতে হতো বার্সেলোনার। কিন্তু সেটি হয়নি। নেওয়া হয়নি ২০১৭ সালের প্রতিশোধ সেবার শেষ ষোলোর লড়াইয়ে প্রথম লেগে ৪-০ গোলে হেরেও দ্বিতীয় লেগে অবিশ্বাস্য এক স্কোরলাইনে (৬-১) পিএসজিকে বিদায় করে দিয়েছিল বার্সেলোনা। এবার প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ৪-১ গোলে হেরে দ্বিতীয় লেগে ১-১ গোলে ড্রতেই শেষ মেসির দলের চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিযান। ‘অভাবনীয়’ কিছু হতে পারত। পিএসজিকে চেপেও ধরেছিল বার্সেলোনা। কিন্তু ‘২০১৭’ তো আর বারবার আসে না। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে পৌঁছে গেছে পিএসজি। গতবার বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ফাইনালে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ ঘটা প্যারিসের জায়ান্টদের স্বপ্নটা এবার টিকে রইল। আগের রাতেই দুই লেগ মিলিয়ে গোল ব্যবধানে পোর্তোর বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে বিদায় হয়ে গেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসের। কাল বিদায় নিলেন মেসি। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ কি তাহলে একটা যুগেরও অবসান ঘটতে দেখছে? ২০০৫ সালের পর, অর্থাৎ ১৬ বছর পর এই প্রথম ইউরোপের সেরা ক্লাব প্রতিযোগিতার শেষ আটে নেই মেসি কিংবা রোনালদোর কেউই। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় মৌসুম চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের আগেই নেই বার্সেলোনা। ২০০৬-০৭ মৌসুমের পর এই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে যেতেও ব্যর্থ। তবে কালকের ম্যাচে ২০১৭ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে টিকে যাওয়ার সুযোগ কিন্তু বার্সেলোনা ভালোই তৈরি করেছিল। কিলিয়ান এমবাপ্পের পেনাল্টি গোলে পিএসজি প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়ার পর মেসির দূরপাল্লার দারুণ এক গোলে সমতা ফিরিয়েছিল বার্সা। এরপর মেসিই সর্বনাশ ঘটান পেনাল্টি মিস করে, সেটি প্রথমার্ধের একেবারে শেষ লগ্নে।
তাঁর শটটা কেইলর নাভাস ঠেকিয়ে দেওয়ার পরে তা পোস্টে লেগে ফিরে এলেও গোল করতে পারেননি মেসি। পিএসজি গোলরক্ষক নাভাস কাল ছিলেন দুর্দান্ত। তিনি নিশ্চিত করেছেন মরিয়া বার্সেলোনা যেন অন্য রকম কিছু ঘটিয়ে ফেলতে না পারে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বার্সেলোনা বল পায়ে খেললেও পিএসজিকে সে অর্থে ভঙ্গুর মনে হয়নি। রক্ষণে মন দিয়ে সময়টা কাটিয়ে দিয়ে উৎসবের উপলক্ষ ঠিকই খুঁজে নিয়েছে ফ্রান্সের চ্যাম্পিয়নরা। পিএসজি কোচ মরিসিও পচেত্তিনো স্বীকার করেছেন ম্যাচে, বিশেষ করে প্রথমার্ধে পিএসজিকে ২০১৭ সালের সেই দুঃস্বপ্ন তাড়া করে ফিরছিল। মানসিক দিক দিয়ে সেটি চাপও তৈরি করেছিল, ‘প্রথমার্ধে আমরা ভালোই ভুগেছি। মানসিক দিক দিয়েও ওই সময়টা বড় এক পরীক্ষা হয়ে উঠেছিল আমাদের জন্য। আমি জানতাম, অতীতে যা ঘটেছিল, সেটি এই ম্যাচে বারবার ফিরে আসবে। সেটি হয়েছেও। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছিলাম। আমরা অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিলাম এই অর্ধে।’ চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায়ের পরও বার্সেলোনা কোচ রোনাল্ড কোমান ইতিবাচক থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। তিনি গত মৌসুমে বায়ার্নের কাছে ৮-২ গোলে হারের দুঃস্বপ্নের কথা ভেবেই হয়তো সান্ত¡না খুঁজে নিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন সে কথাই, ‘এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে যেভাবে বিদায় নিলাম, সেটি গতবারের চেয়ে অনেকটাই অন্য রকম। এই মৌসুমে আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলছি। মৌসুমের বাকি সময়টাও ঠিক এভাবেই খেলে যেতে হবে।’ নেইমারকে ছাড়াই খেলতে নেমেছিল পিএসজি। চোটের কারণে তিনি যে এই ম্যাচে খেলবেন না, সেটা আগেই জানা ছিল। চার বছর আগে বার্সেলোনার সেই অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানোর নায়ক ছিলেন ব্রাজিলীয় তারকা। এবার তিনি পিএসজির। তবে এ ম্যাচে নেইমারের অনুপস্থিতি ও পিএসজির সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিল সমর্থকদের। তবে চোখধাঁধানো কিছু না খেললেও রক্ষণকে আঁটসাঁট রেখে কাজের কাজটা ঠিকই করতে পেরেছে পিএসজি। তবে বার্সেলোনা কিন্তু মাঠে নিজেদের নিয়ন্ত্রণটা শুরুতেই প্রতিষ্ঠা করেছিল।
উসমান দেম্বেলেকে নিয়ে আক্ষেপ হবে বার্সা সমর্থকদের। তিনি ম্যাচের শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যেই যে দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন। ৩১ মিনিটে পিএসজিই এগিয়ে যায়। পেনাল্টি থেকে গোল করেন এমবাপ্পে। এটি অবশ্য ভিএআরের সাহায্যেই পেয়েছিল পিএসজি। মাউরো ইকার্দিকে ফাউল করেছিলেন বার্সেলোনার ক্লেমঁ লংলে। ভিএআরে ধরা পড়ে ইকাদির গাড়ালিতে পাড়া দিয়েছিলেন লংলে। সেটিকে কার্যকর করেন এমবাপ্পে। তবে ঠিক ৬ মিনিট পরই মেসির গোলে সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। প্রায় ২৫ মিটার দূর থেকে নেওয়া শটে গোলটি করে মেসি পেয়ে যান চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর ১২০তম গোলটি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে পেনাল্টি পায় বার্সা। এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু মেসি সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। লেভিন কুরজাওয়া ফাউল করেছিলেন আঁতোয়ান গ্রিজমানকে। কিন্তু মেসি সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধ বার্সেলোনা পিএসজিকে চেপে ধরেছিল। মেসিকে একবার কোনোমতে কঠিন ট্যাকলে ঠেকান মারকিনিওস। সার্জিও বুসকেটস খুব কাছে থেকেও নাভাসকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন। এরপর সময় যত গড়িয়েছে বার্সার শেষ আটের স্বপ্ন ততই দূরে সরে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিদায়ের বেদনাই সঙ্গী হয়েছে মেসিদের।